Durga Puja 2025: শহুরে ব্যস্ততার থেকে দূরে গড়ে ওঠা মা বুড়িমার অকথিত কাহিনি, একদিন ইতিহাসের পাতায় স্থান করবে

Last Updated:
সেই থেকে পুজোটি সোমড়া আঞ্চলিক সার্বজনীন দুর্গোৎসব নামে ঐতিহ্য ও ধারাবাহিকতা বজায় রেখে চলছে। পুজো কমিটির সদস্যদের বিশ্বাস, শহুরে ব্যস্ততার থেকে অনেক দূরে দাঁড়িয়ে তিল তিল করে গড়ে-ওঠা মা বুড়িমার এই অকথিত কাহিনি এভাবেই হয়তো একদিন ইতিহাসের পাতায় স্থান করে নেবে।
1/5
বাংলার উৎসব শারদীয়া দুর্গাপুজো। কত রূপে দুর্গাপুজো হয় তার পূর্ণাঙ্গ হিসাব আজও দূরস্থ। তবে জনপ্রিয় বলতে একচালার দেবীমূর্তি। অপূর্ব মাতৃপ্রতিমা। টানা টানা বাঁশপাতার মতো চোখ। পরনে লাল শাড়ি। দশ প্রহরণধারী। উদ্ধত সিংহের পৃষ্টে পা রেখে তিনি শূলবিদ্ধ করছেন মহিষাসুরকে। মহিষাসুর হাঁটু গেড়ে, দাঁত খিঁচিয়ে দেবীর সঙ্গে যুদ্ধে রত। পাদপীঠে দৃশ্যমান মহিষের রক্তাক্ত কাটা মুণ্ড। দেবীর ডাইনে-বামে বাহনের উপর চড়ে লক্ষ্মী, সরস্বতী। তাঁদেরও চোখ-মুখ দুর্গার মতো। নীচে কার্তিক, গণেশ। একপাশে লজ্জাবতী বধূর মতো অবগুণ্ঠিত নবপত্রিকা। চালার উপরের অংশে চিত্রিত দশাবতার পটচিত্র। তারপর তিনথাকি কলকা বা ঠিকরের অলংকরণ। বঙ্কিমচন্দ্রের চোখে এই মূর্তি ছিল বঙ্গজননীর প্রতীক। তিনি লিখেছেন— ‘... নানা প্রহরণ প্রহারিণী শত্রুমর্দিনী, বীরেন্দ্রপৃষ্ঠবিহারিণী— দক্ষিণে লক্ষ্মী ভাগ্যরূপিণী, বামে বিদ্যাবিজ্ঞানমূর্তিময়ী, সঙ্গে বলরূপী কার্তিকেয়, কার্যসিদ্ধিরূপী গণেশ... এই সুবর্ণময়ী বঙ্গ প্রতিমা।’ (আমার দুর্গোৎসব)

বাংলার উৎসব শারদীয়া দুর্গাপুজো। কত রূপে দুর্গাপুজো হয় তার পূর্ণাঙ্গ হিসাব আজও দূরস্থ। তবে জনপ্রিয় বলতে একচালার দেবীমূর্তি। অপূর্ব মাতৃপ্রতিমা। টানা টানা বাঁশপাতার মতো চোখ। পরনে লাল শাড়ি। দশ প্রহরণধারী। উদ্ধত সিংহের পৃষ্টে পা রেখে তিনি শূলবিদ্ধ করছেন মহিষাসুরকে। মহিষাসুর হাঁটু গেড়ে, দাঁত খিঁচিয়ে দেবীর সঙ্গে যুদ্ধে রত। পাদপীঠে দৃশ্যমান মহিষের রক্তাক্ত কাটা মুণ্ড। দেবীর ডাইনে-বামে বাহনের উপর চড়ে লক্ষ্মী, সরস্বতী। তাঁদেরও চোখ-মুখ দুর্গার মতো। নীচে কার্তিক, গণেশ। একপাশে লজ্জাবতী বধূর মতো অবগুণ্ঠিত নবপত্রিকা। চালার উপরের অংশে চিত্রিত দশাবতার পটচিত্র। তারপর তিনথাকি কলকা বা ঠিকরের অলংকরণ। বঙ্কিমচন্দ্রের চোখে এই মূর্তি ছিল বঙ্গজননীর প্রতীক। তিনি লিখেছেন— ‘... নানা প্রহরণ প্রহারিণী শত্রুমর্দিনী, বীরেন্দ্রপৃষ্ঠবিহারিণী— দক্ষিণে লক্ষ্মী ভাগ্যরূপিণী, বামে বিদ্যাবিজ্ঞানমূর্তিময়ী, সঙ্গে বলরূপী কার্তিকেয়, কার্যসিদ্ধিরূপী গণেশ... এই সুবর্ণময়ী বঙ্গ প্রতিমা।’ (আমার দুর্গোৎসব)
advertisement
2/5
ঠিক এভাবেই আজ থেকে ২২৮ বছর আগে, অষ্টাদশ শতাব্দীর একেবারে শেষ লগ্নে, ১৭৯৭ সালে কলকাতা থেকে প্রায় ৮০ কিলোমিটার দূরবর্তী হুগলি নদির তীরবর্তী হুগলি জেলার বলাগড় ব্লকের অন্তর্গত বর্ধিষ্ণু গ্রাম সোমড়ায় প্রয়াত পাঁচুগোপাল মুখোপাধ্যায়ের পরিবারের হাত ধরে শুরু হয় বুড়িমার পুজো। কলকাতার যে কোনও বারোয়ারির থেকে এগিয়ে গ্রামের এই পুজো এক নীবর ইতিহাসের সাক্ষী। কলকাতায় এখন নানান বারোয়ারিতে যেখানে শতবর্ষ পালিত হচ্ছে সেখানে এই বারোয়ারির বয়স ২২৮ বছর। কলকাতার যাবতীয় জাঁকজমক ও প্রচারের থেকে দূরে দাঁড়িয়ে থাকা এই ঐতিহ্যবাহী বারোয়ারি আজও বাংলার জনগণের অগোচরে নিষ্ঠাসহ মাতৃ আরাধনায় ব্রতী– ইতিহাসের গভীরে, কোনও এক বিস্তৃতপ্রায় অধ্যায়ে তাঁর বাস।
ঠিক এভাবেই আজ থেকে ২২৮ বছর আগে, অষ্টাদশ শতাব্দীর একেবারে শেষ লগ্নে, ১৭৯৭ সালে কলকাতা থেকে প্রায় ৮০ কিলোমিটার দূরবর্তী হুগলি নদির তীরবর্তী হুগলি জেলার বলাগড় ব্লকের অন্তর্গত বর্ধিষ্ণু গ্রাম সোমড়ায় প্রয়াত পাঁচুগোপাল মুখোপাধ্যায়ের পরিবারের হাত ধরে শুরু হয় বুড়িমার পুজো। কলকাতার যে কোনও বারোয়ারির থেকে এগিয়ে গ্রামের এই পুজো এক নীবর ইতিহাসের সাক্ষী। কলকাতায় এখন নানান বারোয়ারিতে যেখানে শতবর্ষ পালিত হচ্ছে সেখানে এই বারোয়ারির বয়স ২২৮ বছর। কলকাতার যাবতীয় জাঁকজমক ও প্রচারের থেকে দূরে দাঁড়িয়ে থাকা এই ঐতিহ্যবাহী বারোয়ারি আজও বাংলার জনগণের অগোচরে নিষ্ঠাসহ মাতৃ আরাধনায় ব্রতী– ইতিহাসের গভীরে, কোনও এক বিস্তৃতপ্রায় অধ্যায়ে তাঁর বাস।
advertisement
3/5
মুখোপাধ্যায় পরিবারের হাত ধরে সোমড়া গ্রামে প্রথমবার শুরু হয় মা বুড়িমার আরাধনা। কথিত আছে, এরপর বাংলার বুকে নেমে আসে করাল দুর্ভিক্ষ (পঞ্চাশের মন্বন্তর)। ইতিহাস সাক্ষী, আনুমানিক ৩০ থেকে ৫০ লক্ষ মানুষ অনাহার, অপুষ্টি, ম্যালেরিয়া ও অন্যান্য রোগে মারা যায়। লক্ষ লক্ষ পরিবার তাদের সম্পত্তি বিক্রি করতে বাধ্য হয়– চরম দারিদ্র্যের শিকার হয়। জিনিসপত্র দুর্লভ এবং বাজারদর অগ্নিমূল্য দেখে পাঁচুগোপাল মুখোপাধ্যায় সিদ্ধান্ত নেন দেবী মায়ের পূজার্চনা সেই বছরের মতো বন্ধ রাখার। কিন্তু মা বুড়িমা ‘স্বপ্নাদেশ’ দেন বাড়ির গাছের কাঁচা থোড়ের নৈবেদ্য করে মায়ের পুজো চালু রাখতে। এভাবেই এই বারোয়ারিতে মায়ের পুজোয় কাঁচা থোড়ের নৈবেদ্যর প্রচলন আজও চলে আসছে। কালস্রোতের অভিঘাত বুকে বহন করে আজও দৃঢ়তার সঙ্গে দাঁড়িয়ে রয়েছে সোমড়া গ্রামের বুড়িমাতলার দুর্গাপুজো।
মুখোপাধ্যায় পরিবারের হাত ধরে সোমড়া গ্রামে প্রথমবার শুরু হয় মা বুড়িমার আরাধনা। কথিত আছে, এরপর বাংলার বুকে নেমে আসে করাল দুর্ভিক্ষ (পঞ্চাশের মন্বন্তর)। ইতিহাস সাক্ষী, আনুমানিক ৩০ থেকে ৫০ লক্ষ মানুষ অনাহার, অপুষ্টি, ম্যালেরিয়া ও অন্যান্য রোগে মারা যায়। লক্ষ লক্ষ পরিবার তাদের সম্পত্তি বিক্রি করতে বাধ্য হয়– চরম দারিদ্র্যের শিকার হয়। জিনিসপত্র দুর্লভ এবং বাজারদর অগ্নিমূল্য দেখে পাঁচুগোপাল মুখোপাধ্যায় সিদ্ধান্ত নেন দেবী মায়ের পূজার্চনা সেই বছরের মতো বন্ধ রাখার। কিন্তু মা বুড়িমা ‘স্বপ্নাদেশ’ দেন বাড়ির গাছের কাঁচা থোড়ের নৈবেদ্য করে মায়ের পুজো চালু রাখতে। এভাবেই এই বারোয়ারিতে মায়ের পুজোয় কাঁচা থোড়ের নৈবেদ্যর প্রচলন আজও চলে আসছে। কালস্রোতের অভিঘাত বুকে বহন করে আজও দৃঢ়তার সঙ্গে দাঁড়িয়ে রয়েছে সোমড়া গ্রামের বুড়িমাতলার দুর্গাপুজো।
advertisement
4/5
পাঁচুগোপাল মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যুর পর তাঁর নাবালক সন্তানেরা এই পুজো চালাতে অক্ষম হলে সেই অবস্থায় প্রায় দেড়শো বছরের মাথায় বন্ধ হয়ে যাওয়ার মুখে সোমড়া অঞ্চলের কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তির উদ্যোগে এই পুজো মুখোপাধ্যায় পরিবারের হাতবদল হয়– বারোয়ারি রূপ নেয় বুড়িমাতলার পুজো। সেই থেকে পুজোটি সোমড়া আঞ্চলিক সার্বজনীন দুর্গোৎসব নামে ঐতিহ্য ও ধারাবাহিকতা বজায় রেখে চলছে। পুজো কমিটির সদস্যদের বিশ্বাস, শহুরে ব্যস্ততার থেকে অনেক দূরে দাঁড়িয়ে তিল তিল করে গড়ে-ওঠা মা বুড়িমার এই অকথিত কাহিনি এভাবেই হয়তো একদিন ইতিহাসের পাতায় স্থান করে নেবে।
পাঁচুগোপাল মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যুর পর তাঁর নাবালক সন্তানেরা এই পুজো চালাতে অক্ষম হলে সেই অবস্থায় প্রায় দেড়শো বছরের মাথায় বন্ধ হয়ে যাওয়ার মুখে সোমড়া অঞ্চলের কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তির উদ্যোগে এই পুজো মুখোপাধ্যায় পরিবারের হাতবদল হয়– বারোয়ারি রূপ নেয় বুড়িমাতলার পুজো। সেই থেকে পুজোটি সোমড়া আঞ্চলিক সার্বজনীন দুর্গোৎসব নামে ঐতিহ্য ও ধারাবাহিকতা বজায় রেখে চলছে। পুজো কমিটির সদস্যদের বিশ্বাস, শহুরে ব্যস্ততার থেকে অনেক দূরে দাঁড়িয়ে তিল তিল করে গড়ে-ওঠা মা বুড়িমার এই অকথিত কাহিনি এভাবেই হয়তো একদিন ইতিহাসের পাতায় স্থান করে নেবে।
advertisement
5/5
সময় চিরপ্রবহমান। সেই বহমানতাতেই তার সার্থকতা। তবুও মহাবিশ্বের শরীরে অদৃশ্য আচ্ছাদন হয়ে জড়িয়ে থাকা সময়-চাদরের বুনোটে কখনও কখনও ফুটে ওঠে জরির ঝলমলে অলংকরণ। সে-অলংকরণ আসলে কিছু অনন্য মুহূর্ত, কিছু অপ্রতিম কালখণ্ড, কিছু বিশিষ্ট ঋতুকাল।সে-বিশিষ্ট ঋতুকালের একটি এই শরৎ। বাঙালির সনাতন মাতৃ-আরাধনার সার্থক সময়। প্রকৃতির ফুল্ল আশীর্বাদবর্ষণের সময়। বছরের সেই অতিপ্রতীক্ষিত সময়টি এসেছে আবার। মা আসছেন। মা আসছেন কৈলাস থেকে বাপের বাড়ি। দীর্ঘ অমানিশান্তে সোনার আলোর ছোঁয়ায় জেগে উঠবে ব্যাপ্ত চরাচর— ক্ষয়িষ্ণু রুক্ষ জীবনে ঘটে যাবে অভাবনীয় উত্তরণ।আজ এই শারদসাহিত্যের ডালি আমাদের সক্কলকে, বাংলার সমস্ত সুসন্তানকে, বুড়িমাতলা তথা সোমড়ার সকল গ্রামবাসীকে একসূত্রে বেঁধে রাখবে। আজ বেঁধে বেঁধে থাকা বড়ো দরকার। বাঙালির আত্মপরিচয়ের নিশান হিসেবে থাকুক শারদীয় দুর্গোৎসব– মহামিলনের পূণ্যভূমি।
সময় চিরপ্রবহমান। সেই বহমানতাতেই তার সার্থকতা। তবুও মহাবিশ্বের শরীরে অদৃশ্য আচ্ছাদন হয়ে জড়িয়ে থাকা সময়-চাদরের বুনোটে কখনও কখনও ফুটে ওঠে জরির ঝলমলে অলংকরণ। সে-অলংকরণ আসলে কিছু অনন্য মুহূর্ত, কিছু অপ্রতিম কালখণ্ড, কিছু বিশিষ্ট ঋতুকাল।সে-বিশিষ্ট ঋতুকালের একটি এই শরৎ। বাঙালির সনাতন মাতৃ-আরাধনার সার্থক সময়। প্রকৃতির ফুল্ল আশীর্বাদবর্ষণের সময়। বছরের সেই অতিপ্রতীক্ষিত সময়টি এসেছে আবার। মা আসছেন। মা আসছেন কৈলাস থেকে বাপের বাড়ি। দীর্ঘ অমানিশান্তে সোনার আলোর ছোঁয়ায় জেগে উঠবে ব্যাপ্ত চরাচর— ক্ষয়িষ্ণু রুক্ষ জীবনে ঘটে যাবে অভাবনীয় উত্তরণ।আজ এই শারদসাহিত্যের ডালি আমাদের সক্কলকে, বাংলার সমস্ত সুসন্তানকে, বুড়িমাতলা তথা সোমড়ার সকল গ্রামবাসীকে একসূত্রে বেঁধে রাখবে। আজ বেঁধে বেঁধে থাকা বড়ো দরকার। বাঙালির আত্মপরিচয়ের নিশান হিসেবে থাকুক শারদীয় দুর্গোৎসব– মহামিলনের পূণ্যভূমি।
advertisement
advertisement
advertisement