Midnapore News: খেজুরিতেই তৈরি হয়েছিল প্রথম ডাকঘর! এখানেই চলত মানুষ কেনা বেচা! গৌরবময় ইতিহাসের প্রথম সাক্ষী খেজুরি!
- Published by:Piya Banerjee
Last Updated:
Midnapore News: ১৭৭২ সালে খবর আদান প্রদানের জন্য খেজুরি বন্দর সংলগ্ন এলাকায় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ডাকঘর গড়ে তোলে। যা ভারতের প্রথম ডাকঘর।এখনও রয়েছে তার ধ্বংসাবশেষ, যা পরিদর্শন করল হেরিটেজ কমিশন।
পূর্ব মেদিনীপুর জেলার উপকূলবর্তী অঞ্চল খেজুরি। এই উপকূলবর্তী অঞ্চল অনেক গৌরবময় ইতিহাসের সাক্ষী থেকেছে বহুকাল থেকে। সালটা ১৭৫৭ পলাশীর প্রান্তরে বাংলা তথা ভারতের স্বাধীন সূর্য অস্তমিত হয়। ভারতে ব্যবসা-বাণিজ্য করতে আসা ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি রাতারাতি বণিকের মানদণ্ড রাজদণ্ডে পরিণত হয়। খেজুরের ইতিহাস কয়েকশ বছরের পুরনো। খেজুরিতে ডাচ ওলন্দাজ ও পর্তুগীজ বণিকেরা বহু সময় ধরে ব্যবসা-বাণিজ্য করে আসছিল। খেজুরি সংলগ্ন হিজলিতে ১৫১৪ খ্রিস্টাব্দে পর্তুগিজ নাবিকদের জাহাজ এসে পৌঁছায়। ১৬৭২ খ্রিস্টাব্দে ক্যাপ্টেন জেমস মেরিনার নেতৃত্বে রেবেকা নামক একটি পালতোলা জাহাজ খেজুরি বন্দরে আসে। তৎকালীন খেজুরির নাম ছিল কেডিগিরি। (ছবি ও লেখা Saikat Shee)
advertisement
সেই থেকে শুরু হয় খেজুরি বন্দর। এরও প্রায় একশ বছর পর ইংরেজরা ১৭৫৬ খ্রিস্টাব্দে খেজুরি বন্দর গড়ে তোলে। মূলত লবণ, নীল ও দাসপ্রথার জন্য মানুষ কেনা বেচার ক্ষেত্র হিসেবে দ্রুতই খেজুরি বন্দরের নাম ছড়িয়ে পড়ে। খেজুরিতে ডাকঘর আরও কয়েক বছর পরে চালু হয়। ১৭৭২ খ্রিস্টাব্দে ইংরেজ বণিকদের ইন্ডিয়া কোম্পানির খবর আদান প্রদানের জন্য খেজুরিতে প্রথম ডাকঘর স্থাপন হয়। যা ভারতের প্রথম ডাকঘর। (ছবি ও লেখা Saikat Shee)
advertisement
খেজুরির বাসিন্দা ও ইতিহাস গবেষক অরবিন্দ বেরা জানান, এশিয়াটিক সোসাইটি ও ন্যাশনাল লাইব্রেরিতে প্রচুর বইপত্রে উল্লেখ পাওয়া যায় এই ডাকঘরের। তিনিবলেন, "ইস্ট ইন্ডিয়া কম্পানির তথ্য আদান প্রদান করার জন্য ১৭৭২ সালে ভারতের প্রথম ডাকঘর তৈরি করেছিলেন ইংরেজ বণিকরা বা ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি। খেজুরি বন্দরের পাশেই গড়ে উঠেছিল চারতলা ডাকঘর। ১৮৩০ সালের ১৯ নভেম্বর রাজা রামমোহন রায় এই ডাকঘরে রাত্রি যাপন করেছিলেন।'' (ছবি ও লেখা Saikat Shee)
advertisement
খেজুরিতে প্রথম শুধু ডাকঘর নয় প্রথম টেলিগ্রাফ ব্যবস্থা গড়ে উঠেছিল এই খেজুরী ডাকঘর থেকেই। ১৯৭০ সালে প্রকাশিত ‘ইম্পিরিয়াল গেজেট অফ ইন্ডিয়া থেকে জানা যায়, ভারতের প্রথম তার যোগাযোগ ব্যবস্থাও শুরু হয়েছিল এই ডাকঘর থেকে। ১৮৫১ সালে কলকাতা মেডিকেল কলেজের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ডঃ ডব্লু বি ওসাগনেসে খেজুরি ও কলকাতার মধ্যে তার যোগাযোগ চালু করার জন্য ব্রিটিশ সরকারের কাছ থেকে অনুমতি পান। (ছবি ও লেখা Saikat Shee)
advertisement
১৮৫২ সালে চালু হয় দেশের সর্বপ্রথম তার যোগাযোগ ব্যবস্থা-খেজুরি থেকে কলকাতা ভায়া ডায়মন্ডহারবার, বিষ্ণু্পুর, মায়াপুর, কুঁকরাহাটি। ৮২ মাইল লম্বা এই তার যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রথমে অবশ্য চালু হয় খেজুরি থেকে কুঁকরাহাটি (হলদিয়া) পর্যন্ত। ভারতপথিক রাজা রামমোহন রায় তাঁর বিলেত যাত্রাকালে কলকাতা থেকে ফোবর্স স্টিমারে সকালে যাত্রা করে সন্ধ্যায় খেজুরী বন্দর অফিসে পৌঁছান ১৯ নভেম্বর, ১৮৩০। রাত্রে খেজুরী বন্দর অফিস তথা খেজুরীর প্রাচীন ডাক ও তার ভবনের অতিথিনিবাসে রাত্রি যাপন করেন। রাত্রি যাপনকালে খেজুরী থেকে কলকাতার সংবাদপত্রে দুটি চিঠি লেখেন ও পরদিন ২০ নভেম্বর, ১৮৩০ খেজুরী বন্দর থেকে বিলেতের বিলেতের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে বিলেতের লিভারপুল বন্দরে পৌঁছান। (ছবি ও লেখা Saikat Shee)
advertisement
advertisement
সম্প্রতি রাজ্য হেরিটেজ কমিশন রাজা রামমোহন রায় স্মৃতি বিজড়িত জায়গা গুলিকে হেরিটেজ জায়গা হিসেবে চিহ্নিত করার উদ্যোগ নিয়েছে। ২১ জুন মঙ্গলবার রাজ্য হেরিটেজ কমিশন এর স্পেশাল অফিসার অন ডিউটি বাসুদেব মালিক ও তার সহকর্মী অরিন্দম রায় রাজা রামমোহন রায়ের স্মৃতি বিজড়িত ভারতের প্রথম ডাকঘর খেজুরিতে আসেন এবং প্রাচীন ডাকঘরটি পরিদর্শন করেন। (ছবি ও লেখা Saikat Shee)
advertisement
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য প্রাচীন ডাকঘর টির শুধু সিঁড়ি ঘর ছাড়া সবকিছুই নষ্ট হয়ে গেছে। খেজুরির বন্দরের কোন স্মৃতিচিহ্ন বর্তমানে দেখা যায় না। কেননা, ১৮০৭, ১৮৩১, ১৮৩৩ এবং ১৮৬৪ সালের প্রবল ঝড় ও বন্যায় খেজুরি বন্দর ও খেজুরি ডাকঘর ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এমনকি বন্যায় খেজুরি পোস্ট অফিসের পোস্টমাস্টার তার পরিবারসহ ভেসে যায়। সম্প্রতি বনদফতরের উদ্যোগে ওই এলাকায় বাচ্চাদের জন্য একটি পার্ক তৈরি করা হয়েছে। খেজুরি হেরিটেজ সুরক্ষা সমিতির উদ্যোগে ওই এলাকায় রাজা রামমোহন রায় ও প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুরের পূর্ণাবয়ব মূর্তি বসানো হয়েছে।(ছবি ও লেখা Saikat Shee)