East Medinipur News: মহাভারতের গল্পের সঙ্গে যোগ ছিল তমলুকের এই মন্দিরের, পুজো দিয়েছেন পাণ্ডব-কৌরবরা, লোক কাহিনি ঘিরে উৎসাহ
Last Updated:
গান্ধারীর দেওয়া নামে বিখ্যাত তমলুকের চক্রেশ্বর মন্দির। এলাকার মানুষের মুখে মুখে শোনা যায় এই গল্প৷
'বিশ্বাসে মিলায় বস্তু তর্কে বহুদূর' মানুষের বিশ্বাস থেকে জন্ম নেন ভগবান। সেই বিশ্বাসের উপর ভর করে নানান কাহিনি গড়ে ওঠে। যা এক সময় মানুষের কাছে সত্যি মনে হয়। তাম্রলিপ্ত বা অধুনা তমলুকের চক্রেশ্বর শিব মন্দির সম্পর্কে মানুষের বিশ্বাস আজও অটুট রয়েছে। লোকমুখে প্রচলিত কাহিনি অনুসারে জানা যায় এই মন্দিরের সঙ্গে নাকি মহাভারতের পাণ্ডব ও কৌরবের যোগসূত্র রয়েছে। তমলুকের চক্রেশ্বর মন্দিরে নাকি পঞ্চপান্ডবসহ কুন্তি পুজো দিয়েছিলেন। এই প্রচলিত কাহিনি মানুষ আজও বিশ্বাস করে। (প্রতিবেদন -Saikat Shee)
advertisement
অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলার সঙ্গে মহাভারতের যোগসূত্র রয়েছে। মহাভারতে উল্লেখিত নানা নিদর্শন অবিভক্ত মেদিনীপুরের নানা এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। মেদিনীপুরের গোপগড় কিংবা পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুক হোক মহাভারতে উল্লেখিত নানান নিদর্শন পাওয়া যায়। মহাভারতে বর্ণিত শিব মন্দির আজও বর্তমান তমলুক শহরে। ভগবান শিবের ছলনায় রুষ্ট হয়ে গান্ধারীর দেওয়া নামে নামাঙ্কিত চক্রেশ্বর শিব মন্দির তমলুক শহরের মাঝখানে অবস্থিত। মহাভারতে বর্ণিত কাহিনি অনুসারে জানা যায় পঞ্চপান্ডবসহ কুন্তি নাাকি এই মন্দিরে পুজো দিয়েছিলেন। আবার কৌরব জননী গান্ধারী নিজের পুত্র সন্তানদের সঙ্গে পুজো দিতে এসে শিবের ছলনার কারণে পুজো দিতে না পেরে ভগবান শিবকেই অভিশাপ দিয়ে বসেন।
advertisement
মহাভারতের কাল থেকে আজকের ভারতের প্রবাহমান ইতিহাসের সাক্ষী তাম্রলিপ্ত নগর বা অধুনা তমলুক। রূপনারায়ণ নদের তীরবর্তী তমলুক শহর পূর্ব মেদিনীপুর জেলার সদর শহর। রূপনারায়ণ নদের জলের স্রোতের মতো প্রবাহমান তমলুক শহরের ইতিহাস। যার নানা নিদর্শন পাওয়া যায় মহাকাব্য মহাভারতে। তমলুক শহরে রয়েছে বেশ কিছু প্রাচীন মন্দির। এই প্রাচীন মন্দির গুলির মধ্যে একটি হল চক্রেশ্বর শিব মন্দির। এই শিব মন্দিরের নিদর্শন পাওয়া যায় মহাভারতে।
advertisement
কথিত আছে পান্ডবদের অজ্ঞাতবাসের সময় পঞ্চপান্ডবসহ কুন্তী পুজো দিয়েছিলেন। তৃতীয় পান্ডব অর্জুন পশুপত অস্ত্রের জন্য কৃষ্ণের পরামর্শে শিবের শরণাপন্ন হয়। ভগবান শিব অর্জুনকে বলেন তাম্রলিপ্ত নগরে গিয়ে তার পুজো দিলেই তবে এই অস্ত্র পাবেন। তখন অর্জুন সহ পঞ্চপান্ডব এবং মাতা কুন্তী তাম্রলিপ্ত নগরীতে এসে শিবের পূজো দেন। কৌরবেরাও পশুপত অস্ত্রের জন্য গান্ধারী সহ তাম্রলিপ্ত নগরীতে শিবের পূজো দিতে আসেন। কিন্তু শিবের ছলনায় গান্ধারী পুজো দিতে পারেন না। ফলে রুষ্ট হয়ে ভগবান শিব কেই অভিশাপ দিয়ে বসেন।
advertisement
চক্রেশ্বর মন্দির সঙ্গে মহাভারতের যোগসূত্র নিয়ে অধ্যাপক ও আঞ্চলিক ইতিহাসবিদ ব্রহ্মময় নন্দ জানান, মন্দিরের নামকরণ চক্রেশ্বর পেছনে গান্ধারীর শিব পুজো দিতে না পারার আক্ষেপ। মহাদেবের ছলনায় কৌরব সহ গান্ধারী তাম্রলিপ্ত নগরীতে শিবের পূজা দিতে পারেনি। মহাদেবের চক্রান্তের কারণেই গান্ধারী পূজা দিতে পারেনি। তাই গান্ধারী নাম রাখেন চক্রেশ্বর। অধ্যাপক ব্রহ্মানন্দ আরও জানান শিব মন্দিরের পিছনে একটি বড় পুকুর রয়েছে। কিন্তু তার জন সব সময় নোংরা ও ব্যবহারের অযোগ্য। কথিত আছে সেটিও নাকি কৌরব জননী গান্ধারীর অভিশাপের কারণ। পুজো দিতে না পেরে গান্ধারী রুষ্ট হয়ে শিবকে বলেন এই পুষ্করনীর জল কোনদিন কোন পুজোর কাজে লাগবে না।' মহাভারতের কাহিনী বা কথিত যা থাক না কেন এই মন্দিরে ভগবান শিবের পুজো আজও হয়ে আসছে।
advertisement