Kalbaishakhi : গ্রীষ্মের ঝড়ের নাম ‘কালবৈশাখী’ কেন? শুধু বিকেলবেলাতেই ধেয়ে আসে কেন এই ঝঞ্ঝা?

‘মধ্যদিনের রক্ত নয়ন অন্ধ করিল কে / ধরণীর ’পরে বিরাট ছায়ার ছত্র ধরিলে কে’-লাইনগুলো পড়ে স্কুলজীবন কাটিয়েছে কয়েক প্রজন্ম৷ মোহিতলাল মজুমদারের ‘কালবৈশাখী’ কবিতার প্রতি ছত্র তুলে ধরেছে এই ঝড়ের বৈশিষ্ট্য৷

ক্রান্তীয় গ্রীষ্মপ্রধান দেশগুলিতে বিকেলবেলা ঝড় বৃষ্টি দেখা দেয়৷ বিভিন্ন জায়গায় তার নাম হরেক রকম৷ পূর্ব ভারতে এই ঝড়বৃষ্টি হল কালবৈশাখী৷

‘কাল’ শব্দের অর্থ জড়িয়ে আছে নঞর্থক বিপদের সঙ্গে৷ যেমন আমরা কথায় কথায় বলি, ‘সেটাই কাল হল’৷ সেভাবেই ঝড়ের সঙ্গেও জু়ড়ে গিয়েছে এই শব্দটি৷

তাছাড়া এই ঝড়ে আকাশ ছেয়ে যায় কালো মেঘে৷ তাই কালোর রঙের সঙ্গে এর একটা সম্পর্ক থেকেই যায়৷ সাধারণত বৈশাখের গরমে এই ঝড় আসে বলেই বলা হয় কালবৈশাখী৷

তবে তার মানে এই নয় যে বৈশাখ ছাড়া অন্য কোনও সময় এই বৈকালিক ঝড়বৃষ্টি হবে না৷ চৈত্র বা জ্যৈষ্ঠ, যে সময়েই হোক না কেন, নাম থাকে কালবৈশাখীই৷

এই ঝড় উত্তর পশ্চিম দিক থেকে দক্ষিণ পূর্বে বয়ে যায় বলে ইংরেজিতে এর নাম ‘নরওয়েস্টার’ বা Nor'wester।

গ্রীষ্মকালে দিনভর রোদের কড়া তাপে নদী পুকুর খাল বিল থেকে প্রচুর জলীয় অংশ বাষ্পীভূত হয়ে যায়৷ উপরে উঠে উল্লম্ব মেঘের সৃষ্টি করে৷ তার ফলে বিকেল বেলা ঝড় বৃষ্টি দেখা দেয়৷

তাছাড়া, এ সময়ে প্রচুর নিম্নচাপ অংশ তৈরি হয়৷ বায়ুমণ্ডলের উচ্চচারপ অংশ থেকে বায়ু ছুটে আসে নিম্নচাপের অংশে৷ ফলে গরম ও ঠান্ডা বাতাসের ঘর্ষণে জলীয় বাষ্পপূর্ণ মেঘ ও ঝড়বৃষ্টি দেখা দেয়৷

তবে কালবৈশাখী মানেই শুধু ধ্বংস নয়৷ গরমে আমরা হাপিত্যেশ করে বসে থাকি, কখন এক চিলতে কালবৈশাখী আসবে৷ এই ঝড়েই লুকিয়ে থাকে সৃষ্টির বীজ৷

মোহিতলাল মজুমদার তাঁর কবিতায় লিখে গিয়েছেন চৈত্রের চিতাভস্ম উড়িয়ে আসা এই ঝড়ে পৃথিবীর জ্বালযন্ত্রণা জুড়িয়ে যায়৷ তাই ‘‘ওরি মাঝে আছে নববিধানের আশ্বাস দুর্ধর্ষ৷’’ ধ্বংেসর মাঝেই সৃষ্টির বীজ বপন করে এই ঝড়৷