♦ নরেন্দ্রনাথ দত্ত থেকে স্বামী বিবেকানন্দ হয়ে ওঠা যুবকের জীবনের গল্প কমবেশি সকলেই জানেন। মহান এই বাঙালি যুগে যুগে আসমুদ্রহিমাচলকে জ্ঞানের চক্ষু খুলে জাগ্রত করে চলেছেন। বাঙালি জাতি ও হিন্দু ধর্মকে বিশ্বের মঞ্চে সর্বপ্রথম তিনিই প্রতিষ্ঠিত করেন। শিকাগোর সেই ধর্ম সভার গল্প সকলেই জানেন। নিজের প্রতি বিশ্বাস রাখা, সমস্যায় বুক চিতিয়ে লড়া, জাতীয়তাবাদের ভাবনা, সমাজের সকলকে এক করে দেখার অনুপ্রেরণা এই মহানা বাঙালির কাছ থেকেই পাওয়া। তাঁকে নিয়ে আরও কিছু কম জানা তথ্য জেনে নেওয়া যাক একনজরে।
advertisement
advertisement
♦ সমস্যায় লড়ার শপথ-১৮৮৭ সালে একবার বারাণসীর রাস্তায় স্বামী প্রেমানন্দকে নিয়ে ঘুরছেন স্বামীজি। সেইসময়ে কিছু বাঁদরের তাড়া খান। স্বামীজি দৌড়তে শুরু করলে একজন চেঁচিয়ে তাঁদের দাঁড় করান। বিবেকানন্দ ঘুরে দাঁড়ালে বাঁদরের দলও হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে। সেই ঘটনা নিয়ে পরে ব্যাখ্যা করে স্বামীজি বলেছিলেন, সমস্যা হলে তার মুখোমুখি হতে হবে। তা থেকে পালিয়ে গেলে তার সমাধান হবে না। সাহসী চিত্তে সমস্যার মোকাবিলা করতে হবে।
advertisement
♦ সকলে ঈশ্বরের সন্তান-আগ্রা থেকে বৃন্দাবন যাওয়ার পথে ১৮৮৮ সালে রাস্তার ধারে একজনকে গাঁজা খেতে দেখে স্বামীজিও রাস্তায় বসে পড়েন। গাঁজার ছিলিম চাইলে সেই ব্যক্তি বলেন, আপনি সন্ন্যাসী। আমি নীচু জাতের লোক। আমি আপনাকে ছিলিম দিই কি করে? উঠে দাঁড়িয়ে চলে যেতে গিয়েও স্বামীজি বসে পড়ে জোর করে গাঁজা খান। পরে জানিয়েছিলেন, কাউকে ঘৃণা করতে নেই। আমরা সবাই ঈশ্বরের সন্তান।
advertisement
♦ আপন ঈশ্বরে বিশ্বাস-একবার স্বামীজি ঠিক করেন সকলের থেকে তিনি খাবার চেয়ে খান, এবার থেকে তা বন্ধ। লোকে এসে তাকে সাধ করে খেতে দিক। সেই না বলা, সেদিন থেকেই স্বামীজি খাবার চাইছেন না। দুপুর গড়িয়ে গিয়েছে। খিদেয় ছটফট করছেন তিনি। হঠাৎ একজন পিছন থেকে ডাক দিলেন মহারাজ বলে। স্বামীজি না দেখেই সামনে ছুট লাগালেন। সেই ব্যক্তিও ছুটে চলেছেন। কিছুটা যাওয়ার পরে তিনি বললেন, মহারাজ, দয়া করে খাবার গ্রহণ করুন। চোখ ভিজে এল স্বামীজির। তিনি বুঝলেন ঈশ্বর তাঁর সহায় রয়েছেন।
advertisement
♦ স্বামীজির শিষ্য শরৎ- হরিদ্বার যাওয়ার পথে শরত চন্দ্র গুপ্ত নামে এক অ্যাসিস্ট্যান্ট স্টেশন মাস্টারের সঙ্গে দেখা হয়। স্বামীজির বড় চোখ দেখেই শরৎ বুঝতে পারেন ইনি কোনও সামান্য ব্যক্তি নন। বিবেকানন্দকে সঙ্গে দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন শরত। শেষপর্যন্ত নাছোড় শরৎকে দীক্ষা দিয়ে স্বামী সদানন্দ নাম দেন স্বামীজি। সদানন্দ বলতেন, বিবেকানন্দের চেয়ে বড় গুরু কেউ হয় না। আমি তাঁর সারমেয়।
advertisement
♦ রামকৃষ্ণের প্রভাব -১৮৯০ সালে উত্তরপ্রদেশের গাজিপুরে গিয়ে বিবেকানন্দ জানতে পারেন পোহারি বাবা সম্পর্কে। তিনি সেখানেই থাকতেন। যৎসামান্য খেতেন। তাঁকে মহাপুরুষ বলে মনে হয় স্বামীজির। তিনি চিঠি লেখেন প্রেমদাদাস মিত্রকে। জানান, তিনি পোহারি বাবার দীক্ষা নেবেন। তবে দীক্ষা নেওয়ার আগের রাতে শ্রীরামকৃষ্ণ দুঃখ ভরা মুখে স্বপ্নে দেখা দেন। এরপরে পরপর ২১ দিন স্বামীজির স্বপ্নে একইরকম দুঃখ ভরা মুখে দেখা দেন স্বামীজি। ব্যস তারপরে দীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত পাল্টে ফেলেন স্বামীজি।
advertisement
♦ সন্ন্যাসীর উপলব্ধি -স্বামী অভেদানন্দের অসুস্থতার খবর শুনে স্বামীজি গাজিপুর থেকে বারাণসী ছুটে যান। পথে যেতে যেতেই জানতে পারেন শ্রীরামকৃষ্ণের পরম সেবক বলরাম বসু প্রয়াত হয়েছেন। চোখের জল গড়িয়ে পড়ে স্বামীজির গালে। তা দেখে প্রেমদাদাস মিত্র বলেন, সন্ন্যাসীর কাঁদতে নেই। যা শুনে স্বামীজি রেগে গিয়ে বলেন, আমি এমন সন্ন্যাস মানি না যেখানে হৃদয় পাথরের মতো করে ফেলতে হবে।
advertisement
♦ বিদ্বান স্বামীজি- মেরঠে থাকাকালীন স্বামীজি লাইব্রেরি থেকে বই আনাতেন। স্বামী অভেদানন্দ বইগুলি নিয়ে আসতেন। আবার পরের দিনই পড়ে তা ফেরত দিয়ে দিতেন স্বামীজি। একদিন লাইব্রেরিয়ানের সন্দেহ হয়। একদিনে কীভাবে বই পড়া সম্ভব। স্বামীজি লাইব্রেরিতে আসতেই, সেই বই থেকে জিজ্ঞাসা করলেন লাইব্রেরিয়ান। স্বামীজি শুধু উত্তর দিলেন না, কোন পাতায় কী লেখা রয়েছে প্রায় সবই বলে দিলেন। যা দেখেন বাকরুদ্ধ হয়ে যান লাইব্রেরিয়ান।
advertisement
advertisement
♦ অভুক্ত হয়েও গর্বিত-বিবেকানন্দের পিতা বিশ্বনাথ দত্তের প্রয়াণের পর পরিবারের অবস্থা বেশ খারাপ হয়। খাবার জোটানো তখন দায় ছিল। স্বামীজি প্রায় প্রতিদিনই বলতেন, আজ দুপুরে বাইরে নিমন্ত্রণ রয়েছে। এই বলে বেরিয়ে যেতেন যাতে বাড়ির খাবারের ভাগ বাকিরা বেশি পায়। নিজে প্রায় বেশিরভাগ দিনই অভুক্ত থাকতেন। তা নিয়ে গর্বও করতেন।
