জিন্নাহর বোনের সঙ্গে প্রেমের জেরে চর্চার শিরোনামে, এমনকী বিয়ে করে রীতিমতো রেকর্ডও গড়েছিলেন এই ভারতীয় শিল্পপতি !
- Published by:Siddhartha Sarkar
- news18 bangla
Last Updated:
Ram Krishna Dalmia: জীবনে সাফল্য পেতে গেলে যে বড় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চশিক্ষা কিংবা বড় বড় ডিগ্রি পেতে হবে, এর কোনও মানে নেই। এটা প্রমাণ করেছেন ভারতের এক সেরা শিল্পপতি। মাত্র ১৮ বছর বয়সে পা রেখেছিলেন ব্যবসার দুনিয়ায়। তাঁর বাবা একটা কানাকড়িও ছেড়ে যাননি।
Author- Sachin Srivastava: জীবনে সাফল্য পেতে গেলে যে বড় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চশিক্ষা কিংবা বড় বড় ডিগ্রি পেতে হবে, এর কোনও মানে নেই। এটা প্রমাণ করেছেন ভারতের এক সেরা শিল্পপতি। মাত্র ১৮ বছর বয়সে পা রেখেছিলেন ব্যবসার দুনিয়ায়। তাঁর বাবা একটা কানাকড়িও ছেড়ে যাননি। তবে সেসব কিছুর তোয়াক্কা না করে পরবর্তী কয়েক বছরের মধ্যে এক বিশাল সাম্রাজ্য তৈরি করেছিলেন তিনি। আর তাঁর শিক্ষাগত যোগ্যতার কথা বলতে গেলে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পর আর পড়াশোনাই করেননি। কিন্তু তিনিই প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ডালমিয়া গ্রুপ।
advertisement
গান্ধি এবং জিন্নাহর প্রিয়পাত্র রামকৃষ্ণ ডালমিয়া: রাজস্থানের চিরাওয়া গ্রামে জন্ম রামকৃষ্ণ ডালমিয়া। আর সেখান থেকেই বিশাল উচ্চতায় পৌঁছেছিলেন তিনি। চিনিকল থেকে শুরু করে সিমেন্ট, পেপার, ব্যাঙ্ক, বিমা সংস্থা, বিস্কুট, পরিবহণ সংস্থা এবং পাবলিকেশনে কাজ করেছেন। যদিও তাঁর শিক্ষাগত যোগ্যতা খুবই সীমিত। কিন্তু বলা হয়, যে ব্যবসাই রামকৃষ্ণ ডালমিয়া শুরু করেছেন, তাতেই সাফল্য তাঁর পায়ে এসে ঠেকেছে। মহাত্মা গান্ধি থেকে শুরু করে মহম্মদ আলি জিন্নাহর সঙ্গে ভাল সম্পর্ক ছিল তাঁর। শুধু তা-ই নয়, খুবই রোম্যান্টিক ব্যক্তিত্ব ছিলেন রামকৃষ্ণ ডালমিয়া। এমনকী বলা ভাল, নারী-সঙ্গে আসক্ত ছিলেন। Photo: Collected
advertisement
ডালমিয়ার স্বভাব: অর্থের দিক থেকে জামশেদজি টাটা এবং ঘনশ্যাম দাস বিড়লার পরেই ছিলেন রামকৃষ্ণ ডালমিয়া। সবথেকে বড় খবরের কাগজের গ্রুপের এই মালিক একবার কিংবা দুবার নন, জীবনে ৬ বার বিয়ে করেছেন। একাধিক সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন। এমনকী পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা মহম্মদ আলি জিন্নাহর বোন ফতিমার সঙ্গে তাঁর প্রেমের গুঞ্জন পর্যন্ত উঠেছিল। কিন্তু ৬ বার বিয়ে নিয়ে গুঞ্জনে কর্ণপাত করেননি ডালমিয়া। প্রথম দুই বিয়ের পরে অন্য চার স্ত্রীকে বিয়ের আগে চুটিয়ে প্রেমও করেছিলেন। এছাড়াও প্রচুর নারীর প্রেমে পড়েছিলেন তিনি। Photo: Collected
advertisement
প্রেম নিয়ে প্রচুর চর্চা: বিয়ে ছাড়াও ডালমিয়ার প্রেম নিয়ে কম চর্চা হয়নি। কন্যা নীলিমা ডালমিয়া আধার তাঁর বিয়ে এবং প্রেম নিয়ে নিজের বইতে লিখেছেন। বইটির নাম হল ‘ফাদার ডিয়ারেস্ট: দ্য লাইফ অ্যান্ড টাইমস অফ আরকে ডালমিয়া’। প্রতিবেদন থেকে জানা যায় যে, নীলিমা একটি সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন যে, তাঁর বাবা নিজেকে একজন রাজার চেয়ে কম কিছু ভাবতেন না। তাই রাজার মতোই জীবন কাটাতেন - সে ক্ষমতার দিক থেকেই হোক কিংবা নারী-সঙ্গের প্রতি আসক্তির দিক থেকেই হোক। Photo: Collected
advertisement
প্রথম দুই বিয়ে: খুব কম বয়সে প্রথমবারের জন্য বিয়ের পিঁড়িতে বসেছিলেন রামকৃষ্ণ ডালমিয়া। সেই সময় প্রথম স্ত্রী নর্মদার বয়স ছিল মাত্র ১২ বছর। এর ২-৩ বছরের মধ্যে মারা গিয়েছিলেন তিনি। এরপর দুর্গা নামে এক মহিলার সঙ্গে ডালমিয়াকে বিয়ে দিয়েছিলেন তাঁর মা। সকলেই ভেবেছিলেন যে, বাকি জীবনটা তাঁরা সুখে কাটাবেন। কিন্তু কে জানত যে, খোদ ডালমিয়া একের পর এক বিয়ে করে রীতিমতো রেকর্ড গড়ে ফেলবেন! Photo: Collected
advertisement
একের পর এক বিয়ে: দ্বিতীয় বিয়ের কয়েক বছর পর প্রীতম নামে এক সুন্দরী পঞ্জাবি মহিলার প্রেমে পড়েছিলেন রামকৃষ্ণ ডালমিয়া। গোপনে প্রীতমকে বিয়েও করেছিলেন। যখন দ্বিতীয় স্ত্রী দুর্গা এবং পরিবারকে এই বিয়ের কথা জানান, তখন জুটেছিল শুধুই বিরোধিতা। কিন্তু সেসবে পাত্তা দেননি ডালমিয়া। প্রীতমকে দিল্লিতে আলাদা করে একটি বিশাল বাড়িতে রেখেছিলেন তিনি। তবে সেই প্রেমও বেশিদিন টিকল না। এরপরেও তড়িঘড়ি আরও ২ বার বিয়ের পিঁড়িতে বসেছিলেন ডালমিয়া। তাঁর নতুন দুই স্ত্রীর নাম ছিল সরস্বতী এবং আশা। প্রসঙ্গত আশা ছিলেন বাঙালি কন্যে। যদিও এই দুই বিয়েও গোপনেই হয়েছিল। Photo: Collected
advertisement
কমবয়সী লেখিকার প্রেমে ডালমিয়া: এখানেই থেমে থাকেননি ডালমিয়া। এক কমবয়সী মহিলাকে মনে ধরেছিল তাঁর। ওই মহিলা ছিলেন রাজস্থানের এক উঠতি কবি। তাঁর নাম ছিল দীনেশ নন্দিনী। এমনকী ডালমিয়া ইনস্টিটিউটের দেওয়া সেক্সারিয়া অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত হয়েছিল দীনেশ নন্দিনী। ওই পুরস্কার অনুষ্ঠানে তাঁকে প্রথম দেখেন ডালমিয়া। সেখানেই পছন্দ হয়ে যায় লেখিকাকে। Photo: Collected
advertisement
বিয়ের জন্য রাজি করাতে পোড়াতে হয়েছিল কাঠখড়: প্রায় ২ বছর ধরে চিঠির আদানপ্রদান চলেছিল। ডালমিয়া বিয়ের জন্য বারবার রাজি করাতে থাকেন দীনেশ নন্দিনীকে। অবশেষে রাজি হন লেখিকা। কিন্তু একটা শর্ত ছিল যে, এরপরে তাঁরা কেউই আর বিয়ের পিঁড়িতে বসতে পারবেন না। নীলিমা ডালমিয়া বলেন যে, “বেনারসে গঙ্গার তীরে অবস্থিত ডালমিয়ার বাড়িতে গোপনে বিয়ে সারেন তাঁরা। কিন্তু যখন আমার মা গোপনে বিয়ের কথা জানতে পারেন, তখন তিনি সাবধান হয়ে গিয়েছিলেন। তবে তাঁর কিছু করার ছিল না। আর এই বিয়ের পরেই ডালমিয়া আমার মা-কে লন্ডনে গিয়ে সেখানেই থাকতে বলেছিলেন, তবে মা মুখের উপর না বলে দিয়েছিলেন। এরপর তাঁকে দিল্লিতে একটি বিশাল বাড়ি দেওয়া হয়।” Photo: Collected
advertisement
লেখিকার সঙ্গে বিয়ে নিয়ে বিরোধিতা: ৬টি বিয়ের পর প্রবল বিরোধিতা এসেছিল। কারণ সেই সময় ডালমিয়ার সন্তানরা বেড়ে উঠছিল। মা এবং ভাইয়ের থেকে এসেছিল বিরোধিতা। নীলিমার বক্তব্য, “বিয়ের পর আমার মায়ের সঙ্গে ট্রেনে দেখা হয়েছিল ঠাকুমার। কিন্তু তিনি এমন আচরণ করেছিলেন যেন মনে হচ্ছিল আমার মা-ই কোনও ভুল করেছেন।” আর এসব ক্ষেত্রে মহিলাদেরকে দোষারোপ করার ক্ষেত্রে সমাজের যে নিয়ম, তার বিরুদ্ধেই প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। Photo: Collected
advertisement
ষষ্ঠ বিয়ের পরেও সম্পর্কে জড়িয়েছেন: আসলে ষষ্ঠ বিয়ের পর ওয়ান ওয়ার্ল্ড মুভমেন্ট শুরু করেছিলেন ডালমিয়া। যার জেরে তাঁকে নিজের ব্যক্তিগত উড়ানে চেপে একাধিক দেশে ঘুরতে হয়েছিল। ভাল সাড়াও পেয়েছিলেন তিনি। ষষ্ঠ স্ত্রী দীনেশ নন্দিনীর সঙ্গে সেই কারণে আমেরিকা গিয়েছিলেন ডালমিয়া। সেখানেই এক ইংরেজ মহিলার প্রেমে পড়েছিলেন। নিজের বইয়ে নীলিমা লেখেন, “এক ইংরেজ মহিলার প্রেমে পড়েছিলেন আমার বাবা। ইংরেজ মহিলার সঙ্গে আমার মা-ও তাঁকে হাতেনাতে ধরেছিলেন।” Photo: Collected
advertisement
ফতিমা জিন্নাহর সঙ্গে সম্পর্ক: মহম্মদ আলি জিন্নাহর বোন ফতিমা ভুট্টোর সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন ডালমিয়া। সেই নিয়ে চর্চাও হয়েছে প্রচুর। নীলিমা স্মৃতিচারণ করে বলেন যে, তাঁর মা দীনেশ নন্দিনী বলতেন যে, তোমার বাবা ফতিমার সঙ্গেও বেশ ঘনিষ্ঠ। কারণ অনেক সময় তাঁর সঙ্গেই থাকতেন। ফতিমা জিন্নাহ একাই থাকতেন। যদিও এ বিষয়ে সন্দেহ রয়েছে নীলিমার। তবে জিন্নাহ এবং তাঁর বোনের সঙ্গে ভাল সম্পর্ক ছিল ডালমিয়ার। যখন ১৯৪৭ সালের অগাস্টের দ্বিতীয় সপ্তাহে যখন জিন্নাহ ভারত ছাড়েন, তখন নিজের নয়াদিল্লির ১০ ঔরঙ্গজেব রোড (বর্তমানে কালাম রোড)-এর বিশাল বাংলোটি ডালমিয়াকে বিক্রি করে দিয়েছেন। ১৯৪৭ সালে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তাঁর সময় পরিবর্তিত হতে থাকে। পরিবারেও ভাগাভাগি শুরু হয়। প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর সঙ্গে খারাপ সম্পর্কের জেরে কিছু জটিল পরিস্থিতির মুখে পড়তে হয়েছিল ডালমিয়াকে। ২ বছরের জন্য জেলে পর্যন্ত যেতে হয়েছিল তাঁকে। কিন্তু ফেরার পর পরিস্থিতি বদলে যায়। নিজের অবস্থান এবং আর্থিক ক্ষমতা আর পুনরুদ্ধার করতে পারেননি। এরপর ১৯৭৮ সালে ৮৫ বছর বয়সে প্রয়াত হয়েছিলেন ডালমিয়া। Photo: Collected