Pakistan Nuclear Weapon: পাকিস্তান পরমাণু বোমা বানাতেই পারত না, ধ্বংসের সব প্ল্যান সেরে ফেলেছিল 'র'! কেন 'অপারেশন কাহুটা' ব্যর্থ হল জানেন? শুনে অবাক হয়ে যাবেন
- Published by:Suman Biswas
- news18 bangla
Last Updated:
Pakistan Nuclear Weapon: পারমাণবিক বোমার অধিকারী হওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী ভুট্টো সর্বপ্রথম দেশীয় পারমাণবিক বিজ্ঞানী আবদুল কাদির খানের শরণাপন্ন হন।
১৯৭৪ সালের ১৮ মে, রাজস্থানের থর মরুভূমির পোখরান টেস্ট রেঞ্জে পারমাণবিক বোমার পরীক্ষা চালায় ভারত। যার সাংকেতিক নাম ছিল ‘স্মাইলিং বুদ্ধ’। ভারতের পারমাণবিক শক্তিধর দেশ হওয়ার খবর পাকিস্তানের কাছে ছিল একইসাথে অস্বস্তিকর ও উদ্বেগজনক। এ কারণে ভারতের পারমাণবিক শক্তিধর দেশ হওয়ার এক বছর পর থেকে পারমাণবিক বোমা তৈরির দিকে মনোনিবেশ করে পাকিস্তান। এজন্য পাকিস্তান সরকার তাদের জনগণকে অভুক্ত রাখতেও রাজি ছিল। তবু তাদের যে কোনও মূল্যে পারমাণবিক বোমার অধিকারী হওয়া চাই। পাক প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টো বলেছিলেন, পাকিস্তানীরা প্রয়োজনে ঘাস খাবে, তবু তারা পারমাণবিক বোমা বানাবে।
advertisement
পারমাণবিক বোমার অধিকারী হওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী ভুট্টো সর্বপ্রথম দেশীয় পারমাণবিক বিজ্ঞানী আবদুল কাদির খানের শরণাপন্ন হন। কাদির তখন নেদারল্যান্ডে আলমেলো ইউরেনিয়াম এনরিচমেন্ট ফ্যাসিলিটিতে কাজ করতেন। পাক প্রধানমন্ত্রী তাকে পাকিস্তানে একই ধরনের প্রকল্প চালু করার জন্য অনুরোধ করেন। আবদুল কাদিরকে প্রথমে পাকিস্তান এটমিক এনার্জি কমিশন (পিএইসি) এর সহকারী প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেন। তখন পিএইসির প্রধান ছিলেন মুনির আহমেদ। কিন্তু মুনির আহমেদের সাথে কাদির খানের চিন্তা-ভাবনার বেশ ফারাক থাকার কারণে সে বছর প্রকল্পের কোনো অগ্রগতি হয়নি।
advertisement
কিন্তু প্রধানমন্ত্রী ভুট্টো পারমাণবিক অস্ত্রের জন্য মরিয়া হয়ে পড়েন। এবং তিনি চাচ্ছিলেন প্রকল্পের কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাক। এজন্য তিনি মূল যে সমস্যা তার সমাধানও করে দেন। কাদির খানকে পিএইসির প্রধান হিসেবে বসিয়ে পূর্ণ স্বাধীনতা প্রদান করেন। কাদির খানকে একমাত্র প্রধানমন্ত্রীর কাছে জবাবদিহি করার নির্দেশ দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী ভুট্টোর দ্ব্যর্থহীন সমর্থনের পর পাঞ্জাব প্রদেশের রাওয়ালপিন্ডি জেলার কাহুটা শহরে প্রথম ইঞ্জিনিয়ারিং রিসার্চ ল্যাবরেটরি প্রতিষ্ঠা করেন।
advertisement
১৯৭৬ সালের ৩১ জুলাই, কাহুটায় পাকিস্তানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ প্রকল্পের যাত্রা শুরু হয়। এবং পারমাণবিক বোমা তৈরির জন্য পাঁচ বছর সময় বেঁধে দেওয়া হয়। সেই মোতাবেক দ্রুতগতিতে কাজ চালিয়ে যায় পাকিস্তানের পরমাণু বিজ্ঞানীরা। ১৯৮১ সালের ১ মে, আবদুল কাদির খানের অসামান্য অবদানকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য রিসার্চ ল্যাবরেটরির নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ‘ড. এ কিউ খান রিসার্চ ল্যাবরেটরি’। যদিও পাকিস্তান তখনও পারমাণবিক বোমার অধিকারী হতে পারেনি।
advertisement
advertisement
পাকিস্তান সরকার কাহুটা ল্যাবরেটরির নিরাপত্তার বিষয়ে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়। ১৯৭৯ সালে এক গোয়েন্দা রিপোর্ট অনুযায়ী ভারত কাহুটায় আক্রমণ করতে পারে বলে গোয়েন্দারা আভাস দেন। তখন পাকিস্তানে সামরিক শাসন চলছিল। জেনারেল জিয়াউল হক তখন কাহুটার নিরাপত্তা নিয়ে বিমান বাহিনীর প্রধান এয়ার মার্শাল আনোয়ার শামীমের সাথে কথা বলেন।
advertisement
কিন্তু এয়ার মার্শাল জেনারেল জিয়াকে যে তথ্য দেন তা ছিল আঁতকে ওঠার মতো। আনোয়ার শামীমের মতে, ভারতীয় যুদ্ধবিমান মাত্র তিন মিনিটের মধ্যে কাহুটা ল্যাবরেটরির কাছে পৌঁছাতে সক্ষম, যেখানে পাকিস্তান বিমান বাহিনীর সময় লাগবে আট মিনিট। ফলে তারা কোনো প্রতিরোধ গড়ার আগেই ভারতের যুদ্ধবিমান হামলা চালিয়ে নিজ দেশে ফিরে যেতে পারবে। কারণ কাহুটার অবস্থান ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে।
advertisement
ভারতের এই হুমকি মোকাবেলার জন্য পাকিস্তানের কাছে একমাত্র পথ ছিল বিমান বাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধি করা, যাতে ভারতের আক্রমণের শক্ত জবাব দিয়ে ভারতের পারমাণবিক প্রকল্পগুলো ধ্বংস করে দিতে পারে। এজন্য পাকিস্তানের প্রয়োজন ছিল আধুনিক যুদ্ধবিমান ও অস্ত্রশস্ত্র। পাকিস্তানের বিমান বাহিনী তখন চাহিদা হিসেবে মার্কিন যুদ্ধবিমান এফ-১৬ এর কথা তুলে ধরে।
advertisement
কিন্তু সে সময় পাকিস্তানের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি আধুনিক যুদ্ধবিমান এফ-১৬ পাওয়ার কোনো সম্ভাবনা ছিল না। তাদের সেই সুযোগ করে দেয় সোভিয়েত ইউনিয়ন। আফগানিস্তানে সোভিয়েত আগ্রাসনের ফলে পাকিস্তান সেখানকার আঞ্চলিক রাজনীতিতে তুরুপের তাসে পরিণত হয়, যার ফলে যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের সাথে সম্পর্ক আরো ঘনিষ্ঠ করার উদ্যোগ নেয়। পাকিস্তান এই সুযোগকে পুরোপুরি কাজে লাগায়।
advertisement
আফগান যুদ্ধের গুরুত্ব অনুধাবন করে যুক্তরাষ্ট্র প্রথমে পাকিস্তানকে ৪০০ মিলিয়ন ডলারের সামরিক সহায়তা প্রদান করা প্রস্তাব দেয়। কিন্তু জেনারেল জিয়া তা অতিসামান্য উল্লেখ করে সেই প্রস্তাব প্রত্যাখান করেন। পরবর্তীতে ১৯৮১ সালে যুক্তরাষ্ট্র ও পাকিস্তান সম্মতিতে পৌঁছায়। যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানকে সামরিক সরঞ্জাম দিতে রাজি হয়। প্রথমে তারা এফ-৫ ইএস এবং ৫-জিএস দিতে চাইলে পাকিস্তান তা প্রত্যাখান করে। পরবর্তীতে যুক্তরাষ্ট্র শর্তভিত্তিক পাকিস্তানের কাছে ৪০টি এফ-১৬ যুদ্ধবিমান বিক্রি করতে রাজি হয়। ১৯৮৩ সালের ১৫ জানুয়ারি তিনটি বিমান নিয়ে প্রথম চালান পাকিস্তানে পৌঁছায়।
advertisement
কাহুটার পারমাণবিক প্রকল্পে পাকিস্তান আসলেই ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করছে কি না সে বিষয়ে প্রথমে নিশ্চিত হতে চেয়েছিল ‘র’। এজন্য তারা কাহুটা ল্যাবরেটরিতে কাজ করা এক পাকিস্তানি বিজ্ঞানীর উপর নজরদারি চালাতে থাকে। একদিন সেই বিজ্ঞানী চুল কাটানোর জন্য সেলুনে যান। চুল কাটানোর পর ‘র’ এর এজেন্টরা সেই বিজ্ঞানীর চুল নিয়ে আসেন। সেই চুল পরবর্তীতে পরীক্ষা করে তারা নিশ্চিত হন যে পাকিস্তান কাহুটায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধের কাজ চালিয়ে যাচ্ছিল।
advertisement
১৯৭৫ সালে ভারতের জয়েন্ট ইন্টেলিজেন্স কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী, পাকিস্তানের কাছে প্লুটোনিয়াম-২৩৯ অথবা ইউরেনিয়াম-২৩৫ এর মধ্যে যেকোনো একটির ঘাটতি থাকার কারণে তাদের পক্ষে আগামী আগামী চার বছরের মধ্যে পারমাণবিক অস্ত্রের মালিক হওয়া সম্ভব না। কিন্তু এর এক বছর পরেই তাদের রিপোর্ট অনুযায়ী জানা যায় যে, পাকিস্তান অল্প সময়ের মধ্যেই পারমাণবিক অস্ত্রের অধিকারী হতে সক্ষম।
advertisement
তখন ভারতীয় গোয়েন্দা বাহিনী বিকল্প পন্থা নিয়ে ভাবতে শুরু করে। এর মধ্যে সরাসরি পাকিস্তানের পারমাণবিক প্রকল্পে হামলা চালানোর মতো সিদ্ধান্তও ছিল। প্রথমে ‘র’ প্রচুর সংখ্যক এজেন্ট নিয়োগ করে। তাদের মাধ্যমে তারা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করতো। পাশাপাশি বিভিন্ন কূটনীতিক চ্যানেল থেকেও ভারত তথ্য সংগ্রহ করতো। এক্ষেত্রে কানাডা ও রাশিয়া তাদের সাহায্য করেছিল।
advertisement
এর মধ্যে ১৯৭৭ সালে জেনারেল জিয়াউল হকের চাচাতো ভাই আবদুল ওয়াহিদ জার্মানি থেকে নিউক্লিয়ার ইকুইপমেন্ট কেনার একটি রাস্তা তৈরি করেন। কানাডা ও জার্মানি থেকে প্রযুক্তি নিয়ে পাকিস্তান ইউরেনিয়াম হেক্সাফ্লুরাইড তৈরি করার পদ্ধতি বের করে। এরপর ১৯৮১ সালে ইসলামাবাদ থেকে ভারতীয় দূতাবাসের পাঠানো রিপোর্ট থেকে জানা যায়, পাকিস্তান সে বছরই পারমাণবিক অস্ত্রের পরীক্ষা চালাতে পারে। এজন্য তারা সিন্ধু, বেলুচিস্তান ও খাইবার পাখতুনওয়ায় মাটির নিচে গোপন সুড়ঙ্গ তৈরি করে, যা রুশ স্যাটেলাইটে ধরা পড়ে।
advertisement
এর আগে থেকেই ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা পাকিস্তানের পারমাণবিক প্রকল্পে হামলা চালানোর পরিকল্পনা করেছিল। তাদের এই কাজে সহায়তা করতে চেয়েছিল ‘র’ এর পাকিস্তানি এজেন্টরা। ১৯৭৮ সালের শুরুর দিকে কাহুটা নিউক্লিয়ার প্লান্টের ভেতরের সকল তথ্য সরবরাহ করতে চেয়েছিল পাকিস্তানে থাকা ‘র’ এর এজেন্টরা। এর বিনিময়ে তাদের দাবি ছিল মাত্র ১০ হাজার ডলার।