

গণেশ চতুর্থীকে বলা হয়ে থাকে গণেশ জয়ন্তীও- অর্থাৎ যে দিনে জন্মগ্রহণ করেছিলেন সিদ্ধিদাতা এই দেবতাটি! এই মর্মে পুরাণ ভাগ হয়ে গিয়েছে দুই দলে। দাক্ষিণাত্য এবং মহারাষ্ট্রে জনপ্রিয় স্কন্দপুরাণ মতে গণেশের জন্মদিন ভাদ্রমাসের শুক্লপক্ষের চতুর্থী তিথিতে। আবার অন্য সব পুরাণ, বিশেষ করে বঙ্গদেশে রচিত এবং জনপ্রিয় ব্রহ্মবৈবর্তের মতে মাঘমাসের শুক্লপক্ষের চতুর্থী তিথিতেই হরগৌরীর এই সন্তানের জন্মদিন পালন করা বিধেয়।


তবে জন্মতিথি নিয়ে যতই মতভেদ থাক না কেন, একটি বিষয়ে কিন্তু কোনও বিরোধ নেই- আজকের রাতে চাঁদ দেখা মানে মহাপাপ! যিনি চাঁদ দেখবেন, তাঁর উপরে কুপিত হবেন সিদ্ধিদাতা স্বয়ং! কেন, তা নিয়ে একটি কাহিনি আমাদের জানাচ্ছে ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ। যা তার গণেশখণ্ডে উল্লেখ করা আছে।


ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণের গণেশখণ্ডের এই কাহিনি আমাদের বলে, এই মাঘ মাসের শুক্লপক্ষের চতুর্থী তিথিতে গজাননকে নিজের গৃহে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন ধনাধিপতি কুবের। তাঁর গৃহে ভোজনের মাত্রা একটু বেশিই হয়ে গিয়েছিল গণপতির, বিশ্রাম নিয়ে ফিরতেও দেরি হয়েছিল। কুবেরের ভবন থেকে তিনি যখন বেরোলেন, ততক্ষণে আকাশে চাঁদ উঠে গিয়েছে। হিমালয়ের পার্বত্য পথে বাহন ইঁদুরের পিঠে চড়ে চাঁদের আলো আর শীতল বাতাস উপভোগ করতে করতে বাড়ি ফিরছিলেন তিনি। গুরুপাক ভোজন, শীতল বাতাস- সব মিলিয়ে আলস্যে তাঁর একটু ঝিমুনি এসে গিয়েছিল।


এমন সময়ে পথে একটা সাপ দেখে বাহনটি পিঠ থেকে গণেশকে ফেলে দিয়ে এক দৌড় দেয়! পড়ে গিয়ে একটি দাঁতের কিছুটা ভেঙে যায় গণেশের। সেই থেকে তাঁর নাম হয় একদন্ত। তা, এ হেন একদন্ত গজাননকে দেখে অট্টহাসিতে ফেটে পড়েন চন্দ্রদেব। ক্রুদ্ধ হয়ে গণেশ নিজের ভাঙা দাঁতটি ছুড়ে মারেন তাঁর দিকে। অভিশাপ দেন- চন্দ্রের কলা বা জ্যোতি ক্ষয়প্রাপ্ত হবে। যে রূপের জন্য তাঁর এত দম্ভ, তা আর কোনও দিনই দেখতে পাবে না কেউ!


পরিস্থিতি বেগতিত দেখে গণেশের হাতে-পায়ে ধরে ক্ষমা চেয়ে নেন চন্দ্রদেব। গণেশ এক্ষেত্রে শাপটিকে একটু বদলে দেন। বলেন, এবার থেকে মাসে ১৫ দিন একটু একটু করে ক্ষয় পেতে পেতে একটি দিনে চন্দ্রের জ্যোতি সম্পূর্ণ বিলীন হয়ে যাবে। আবার তার পরের দিন থেকেই আগামী ১৫ দিন জুড়ে একটু একটু করে জ্যোতি বাড়তেও থাকবে, নির্দিষ্ট দিনে আবার আগের মতোই পূর্ণকলায় নয়নমনোহর রূপ ফিরে পাবেন চন্দ্রদেব!