৬ কোটি বছরেরও বেশি পুরনো এই 'মাছের বমি'...! নতুন দিগন্ত খুলে দিল বিজ্ঞানে! বদলে গেল ইতিহাস, জানলে চমকে যাবেন

ডেনমার্কের এক স্থানীয় জীবাশ্ম সন্ধানকারী ৬৬ মিলিয়ন অর্থাৎ ৬ কোটি বছরেরও বেশি পুরনো মাছের বমির সন্ধান পেয়েছেন! পূর্ব জিল্যান্ড জাদুঘর (Museum of East Zealand) সূত্রে খবর, পিটার বেনিক নামের ওই ব্যক্তি কোপেনহেগেনের দক্ষিণে ইউনেস্কো তালিকাভুক্ত স্টিভন্স ক্লিফসে হাঁটার সময় এটি আবিষ্কার করেন।

পিটার কিছু অস্বাভাবিক খণ্ড খুঁজে পান, যা চক পাথরের মধ্যে সি লিলির অংশ ছিল। পরে তিনি এগুলো পরীক্ষা করার জন্য জাদুঘরে নিয়ে গেলে জানা যায়, এটি মাছের বমি, যা ক্রিটেশিয়াস যুগের শেষ দিকের, প্রায় ৬৬ মিলিয়ন বছর আগের। তখন পৃথিবীতে টাইরানোসরাস (Tyrannosaurus) ও ট্রাইসেরাটপস (Triceratops)-এর মতো ডাইনোসর ঘুরে বেড়াত।

বিশেষজ্ঞরা জানান, বমিটি অন্তত দুটি পৃথক প্রজাতির সি লিলির (সমুদ্রের এক ধরনের উদ্ভিদ) অংশ নিয়ে গঠিত, যা সম্ভবত কোনও মাছ খেয়েছিল এবং পর হজম না করতে পেরে বমি করে ফেলেছিল।

পূর্ব জেল্যান্ড জাদুঘর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, এ ধরনের আবিষ্কার অতীতের বাস্তুতন্ত্র পুনর্গঠনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এগুলো থেকে বোঝা যায়, কোন প্রাণী কী খেত।

প্যালিয়ন্টোলজিস্ট জেসপার মিলান এই আবিষ্কারকে সত্যিই বিরল বলে বর্ণনা করেছেন এবং বলেছেন, এটি প্রাগৈতিহাসিক খাদ্যশৃঙ্খলা বোঝার ক্ষেত্রে সহায়ক।

তিনি ব্যাখ্যা করেন, সি লিলি খুব বেশি পুষ্টিকর খাদ্য নয়, কারণ এটি মূলত ক্যালসিয়ামযুক্ত পাত দিয়ে গঠিত, যা খুব কম নরম অংশ দিয়ে সংযুক্ত থাকে। “কিন্তু এখানে এমন একটি প্রাণীর সন্ধান মিলেছে, সম্ভবত কোনো ধরনের মাছ, যা ৬৬ মিলিয়ন বছর আগে ক্রিটেশিয়াস সাগরের তলদেশে বসবাসকারী সি লিলি খেয়েছিল এবং এর কঙ্কাল অংশ বমি করে দিয়েছে,” তিনি বিবিসিকে বলেন।

গত বছর, নেচার (Nature) সাময়িকীতে প্রকাশিত এক গবেষণায়, বিজ্ঞানীরা ২০০ মিলিয়ন বছর পুরনো বমি ও মল জীবাশ্ম বিশ্লেষণ করে দেখান, কীভাবে সেই সময়ের ডাইনোসররা প্রাগৈতিহাসিক বাস্তুতন্ত্রে রাজত্ব করেছিল।

তাঁরা জানান, ওই জীবাশ্ম নমুনায় হাড়, দাঁত, মাছের আঁশ, গাছপালা ও ক্ষুদ্র পোকামাকড়ের অংশ পাওয়া গিয়েছে, যা প্রাচীন খাদ্যাভ্যাস সম্পর্কে বিরল ধারণা দেয়।

গবেষণার সহ-লেখক এবং সুইডেনের উপসালা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যালিয়ন্টোলজিস্ট মার্টিন কোয়ার্নস্ট্রম জনপ্রিয় বিজ্ঞান সাময়িকী *Popular Science*-এ দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় ছিল, এই জীবাশ্মজাত মল ও বমির মধ্যে থাকা খাদ্যাংশ কতটা সংরক্ষিত এবং বৈচিত্র্যময়।”