ফুলকো সাদা-সাদা ঘিয়ে ভাজা লুচি ভালবাসেন না, এমন বাঙালি দূরবীন দিয়ে খুঁজতে হবে! সঙ্গতে সাদা আলুর তরকারি কিংবা কচি পাঁঠার ঝোল... একেই বোধহয় বলে স্বর্গ! কিন্তু 'লুচি' নামটি একেবারেই বাংলা শব্দ নয়। প্রাচীন সংস্কৃত পুঁথিতেও লুচি নামটি পাওয়া যায় না কোথাও। তাহলে এই মুখরোচক অথচ অদ্ভুত নাম 'লুচি' এল কোথা থেকে?
ভারতে প্রথম লুচির খোঁজ পাওয়া যায় পাল যুগে। সেইসময়কার বিখ্যাত চিকিৎসক চক্রপাণি দত্তের লেখা 'দ্রব্যগুন' গ্রন্হে তিনি প্রথম লুচির তিনপ্রকারের কথা উল্লেখ করেছিলেন। সেগুলো হ'ল- খাস্তা, সাপ্তা ও পুরি। বেশি ময়ান দিয়ে তৈরি লুচি হল খাস্তা লুচি। ময়ান ছাড়া ময়দা দিয়ে তৈরি লুচি ছিল সাপ্তা লুচি। আর ময়দার পরিবর্তে আটা দিয়ে যে লুচি তৈরি হত তা ছিল পুরি। পাল যুগের খাস্তা লুচিই বাঙালির কাছে লুচি হিসেবে খ্যাত।
বাংলার নানা প্রান্তে লুচির আয়তন ভিন্ন ভিন্ন। গ্রাম বাংলা থেকে যত কলকাতার দিকে যাওয়া যাবে লুচির আয়তন তত কমতে কমতে ছোট হতে থাকে। গ্রামের দিকে একটি লুচির ব্যাস ৬-৮ ইঞ্চি,আবার কলকাতার দিকে এটি কমতে কমতে ৩-৪ ইঞ্চি। ইতিহাসবিদদের একাংশের মতে, এর নেপথ্যে রয়েছে শ্রেণী বৈষম্য। শিক্ষিত উন্নত শ্রেনী নিজেদের বাবুয়ানার নিদর্শন হিসেবে ছোট আকারের লুচি খেতেন।
একসময় সবচেয়ে বড় আকারের লুচি পাওয়া যেত দিনাজপুরের কান্তনগরের কান্তজিউ মন্দিরের ঠাকুরবাড়িতে। একেকটা থালার মত আকারের। বর্তমানে মালদহ জেলার ইংরেজবাজারের সাদল্লাপুর শ্মশানের কাছে হাতির পায়ের মতো বড় লুচি পাওয়া যায়,যার ব্যাস প্রায় ১০ ইঞ্চির কাছাকাছি। অন্যদিকে, মেদিনীপুরের রাধামোহনপুরের পলাশী গ্রামের নন্দী পরিবারের ঠাকুরবাড়িতে ভোগ হিসেবে যে লুচি দেওয়া হয় তার ব্যাস ১-১.৫ ইঞ্চির মত। মনে করা হয় এটি বাংলার সবচেয়ে ছোট লুচি।