Coromandel Express Train Accident Survivors : অভিশপ্ত করমণ্ডলের স্বপ্নে ঘুম নেই, কখনও অট্টহাসি, কখনও নীরব! হাসপাতালে এ কী ঘটছে

করমণ্ডল এক্সপ্রেস দুর্ঘটনায় কেঁপে উঠেছিল গোটা দেশ। ভয়ঙ্কর সেই স্মৃতিকে কাটিয়ে স্বাভাবিক ছন্দে ফিরছে ট্রেন পরিষেবা। তবে এখনও স্বাভাবিক হয়ে ওঠেনি দুর্ঘটনায় আহত মানুষদের জীবন। পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডারের শিকার আহতরা।

ভয়ঙ্কর কোনও দুর্ঘটনা বা দীর্ঘদিন ধরে ভয়াবহ অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে জীবন কাটালে সেখান থেকে উদ্ধারের পর মানসিক সমস্যা দেখা দেয়। সহজে সেই ঘটনার থেকে নিজেকে বার করে আনা যায় না। আর এই মানুষগুলি সেই মানসিক সমস্যার মধ্যেই দিয়েই যাচ্ছেন এখন।

বালাসোরে তিনটি ট্রেন দুর্ঘটনায় প্রাণে বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের অনেকেই ওড়িশার এসসিবি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ভর্তি। ১০৫ রোগীর মধ্যে প্রায় ৪০ জনের পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার (PTSD)-এর প্রবণতা দেখাচ্ছেন, শনিবার এমনটাই জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. যশোবন্ত মহাপাত্র বলেছেন, দুর্ঘটনায় প্রাণে বেঁচে যাওয়া মানুষদের মানসিক স্বাস্থ্যের অবস্থা বিবেচনা করে হাসপাতাল সমস্ত রোগীদের কাউন্সেলিং শুরু হয়েছে। ড. মহাপাত্রের কথায়, “কেউ প্রচণ্ড ভয়ে আছেন। কেউ মাঝে মাঝে আতঙ্কে ভুগছেন বা কেউ একেবারে কথা বন্ধ করে দিয়েছেন। আমরা তাঁদের কাউন্সেলিং করছি।’’

‘‘পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে বসিয়ে কথা বলছি। চিকিৎসকেরা চারটি দলে ভাগ হয়ে সকলের উপর নজর দিচ্ছি। প্রত্যেক টিমে একজন সাইকোলজিস্ট, একজন সাইকায়াট্রিস্ট, একজন সমাজকর্মী এবং পরিবারের দু’জন করে রয়েছেন।”

হাসপাতালের এক নার্সের থেকে জানা যায়, কেউ কেউ রাতে ঘুম ভেঙে উঠে বসছেন। দুঃস্বপ্ন দেখছেন কেউ কেউ। সর্বদা কেউ না কেউ তাঁদের উপর নজর রাখছেন।

এক ২৩ বছরের যুবকের হাত-পা বাদ গিয়েছে দুর্ঘটনায়। তিনি সারা দিনরাত চোখের পাতা এক করতে পারছেন না। ভয় করছে, চোখ বুজলেই কেবল সেই অভিশপ্ত মুহূর্তের কথা ভেসে উঠছে। তাঁকে সিটের তলা থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল, যেখানে তিনি প্রায় তিন-চার ঘণ্টা আটকে ছিলেন।

এক ব্যক্তি দুর্ঘটনায় বন্ধুকে হারিয়েছেন। রাতে ঘুমের মধ্যে বন্ধুর নাম ধরে ডেকে উঠছেন। কেউ কেউ আবার দেওয়ালের দিকে তাকিয়ে বসে রয়েছেন কেবল।

তিন জন এমন আছেন যাঁদের পা একেবারে বাদ চলে গিয়েছে। কারও শিরদাঁড়া গুরুতর আঘাত লেগেছে। তাঁদের দেখা যাচ্ছে, মাঝে মাঝে অট্টহাসি হেসে উঠতে, কেউ আবার কেঁদে চলেছেন ক্রমাগত।

চিকিৎসকের কথায়, সকলেই ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠবেন। শারীরিক ভাবে পুরোপুরি ভাবে না হলেও মানসিক ভাবে পিটিএসডি থেকে বার করে আনা যাবে।