বিজেপির ১ নম্বর শত্রু হয়ে গেলেন প্রশান্ত কিশোর? বিহারে যা ঘটল, আসল ট্রাম্পকার্ড তাহলে পিকে নিজেই হয়ে গেলেন! কী ঘটল জানেন?

বিহার বিধানসভা নির্বাচন ২০২৫-এর আগে প্রশান্ত কিশোরের রাজনীতি বিহারে নতুন ঝড় তুলেছে। বিহারের রাজনীতিতে এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় রয়েছেন প্রশান্ত কিশোর অর্থাৎ পিকে। তাঁর জন সুরাজ যাত্রা এবং ক্রমাগত বড় বড় সভার মাধ্যমে পিকে রাজ্যের রাজনৈতিক সমীকরণ পাল্টে দেওয়ার চ্যালেঞ্জ করছেন।

পাশাপাশি বিজেপির নেতাদের একে একে নিশানা করছেন তিনি। প্রথমে বিহারে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ জয়সওয়াল পিকের নিশানায় ছিলেন, এখন বিহার সরকারের নম্বর-২ এবং উপমুখ্যমন্ত্রী সম্রাট চৌধুরী তাঁর নিশানায় এসেছেন। সম্প্রতি তিনি সম্রাট চৌধুরী সম্পর্কে যে তীব্র বিবৃতি দিয়েছেন, তার পরে তার বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হয়েছে।

এমন পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠছে, বিজেপি সত্যিই প্রশান্ত কিশোরের রাজনীতি নিয়ে ভীত কিনা? এফআইআর দায়ের করে কি পিকের উপর এক ধরনের রাজনৈতিক চাপ তৈরি করার চেষ্টা হচ্ছে?

বিহারের রাজনীতিতে পিকের বিরুদ্ধে বিজেপি একজন অজানা নেতাকে দিয়ে করানো সম্রাট চৌধুরীর অপমানের অভিযোগ তুলে পটনার গান্ধি ময়দান থানায় দায়ের করা এফআইআর রাজনৈতিক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। এই ঘটনা শুধুমাত্র পিকের ক্রমবর্ধমান সক্রিয়তাকে সামনে আনছে, তাই নয়, বরং এই প্রশ্নও তোলে যে বিজেপি সত্যিই প্রশান্ত কিশোরকে নিয়ে ভীত কিনা? প্রশান্ত কিশোর, যিনি ২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদির লোকসভা নির্বাচন জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।

পিকের জন সুরজ পার্টি রাজ্যে অতি পিছিয়ে পড়া, দলিত এবং যুব ভোটারদের আকৃষ্ট করার চেষ্টা করছে। পিকের ৩,০০০ কিলোমিটার পদযাত্রা এবং 'বিহার পরিবর্তন যাত্রা' গ্রামীণ এবং শহুরে উভয় অঞ্চলে তার জনপ্রিয়তা বাড়িয়েছে। বিজেপির গড়ে পিকের সভায় জমায়েত হওয়া ভিড় তাকে বিজেপির উপর আরও আক্রমণাত্মক করে তুলেছে।

পিকে সম্প্রতি আরারিয়ায় সম্রাট চৌধুরীকে কটাক্ষ করে বলেছিলেন, তিনি উপমুখ্যমন্ত্রী পদে লালসায় তার প্রতিশ্রুতি এবং 'মুরেঠা' উভয়কেই ত্যাগ করেছেন। এই বিবৃতিকে বিজেপি অপমানজনক বলে মনে করেছে এবং একজন নেতা তার বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেছেন, যেখানে অভিযোগ করা হয়েছে যে পিকে বিজেপি নেতাদের ভাবমূর্তি খারাপ করার চেষ্টা করছেন।

এই এফআইআর বিজেপির প্রতিরক্ষামূলক কৌশলের অংশ হতে পারে, যার উদ্দেশ্য পিকের ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তাকে আইনি চাপ দিয়ে থামানো। তবে, এই পদক্ষেপটি উল্টোও হতে পারে, কারণ এটি পিকেকে ভুক্তভোগী হিসাবে উপস্থাপন করতে পারে, যার ফলে তার জন সুরজ পার্টি সহানুভূতি পেতে পারে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে বিহারে ৩৬% অতি পিছিয়ে পড়া এবং ২০% দলিত ভোটারদের মধ্যে তার আবেদন বিজেপির জন্য বিপদের ঘণ্টা। কারণ এই ভোট ব্যাংক ঐতিহ্যগতভাবে এনডিএ এবং রাজদ এর মধ্যে বিভক্ত হয়ে থাকে। পিকের বিহারে উন্নয়ন, কর্মসংস্থান এবং শিক্ষা মতো বিষয়গুলিতে ফোকাস বিজেপি-জেডিইউ জোটের সুশাসনের দাবিকে চ্যালেঞ্জ করে।

পিকের প্রভাব শুধুমাত্র তার কৌশলগত বোঝাপড়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। তার শক্তি বিহারের যুবক এবং হতাশ ভোটারদের একটি নতুন বিকল্প দেওয়ার মধ্যে রয়েছে। বিজেপির সেই সমর্থকরা যারা নীতীশ কুমারের সঙ্গে জোটে দেখতে চান না, তারা সবাই পিকের দিকে তাকাতে শুরু করেছেন। পিকের ন্যারেটিভ তাদের সাবর্ণ এবং ওবিসি ভোট ব্যাংকে ফাটল ধরাতে পারে।

পিকে সম্প্রতি সিএজি রিপোর্টের উল্লেখ করে নীতীশ সরকারের উপর ৭০,০০০ কোটি টাকা লুঠপাটের করার অভিযোগ করেছেন, যা এনডিএর ভাবমূর্তিকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। পাশাপাশি, তার বিপিএসসি প্রার্থীদের আন্দোলনে অংশগ্রহণ এবং পুলিশ লাঠিচার্জের সমালোচনা তাকে যুবকদের মধ্যে আরও জনপ্রিয় করেছে।