৭৫ বছরের রেকর্ড ভেঙে চুরমার...! ঐতিহাসিক ভোট বিহারে, যে কারণে প্রথম দফায় নজিরবিহীন উপস্থিতি ভোটারদের, নজরে একাধিক সূত্র!

বিহারের ভোটে ইতিহাস! এবারের নির্বাচনে ৭৫ বছরের পুরনো রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে বিহারবাসী। বিহার নির্বাচনের প্রথম দফায় ৬৪.৬৬ শতাংশ ভোটার উপস্থিতি গত ৭৫ বছরে রেকর্ড। সবচেয়ে বেশি ভোটারের উপস্থিতি দেখা গিয়েছে মুজাফফরপুর এবং সমস্তিপুরে। অন্যদিকে বেশ কয়েকটি জেলায় বিক্ষিপ্ত অশান্তি ও ইভিএম মেশিন বিকল হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।

তবে তার চেয়েও বড় বিষয় হল এবারে বিহার ভোটে ঘটেছে ঐতিহাসিক ঘটনা। ভোটদানের নিরিখে নতুন ইতিহাস তৈরি করেছে বিহার। ভেঙে গিয়েছে আগের সব রেকর্ড। ভোটগ্রহণের প্রথম দফায় ভেঙে গিয়েছে ৭৫ বছরের পুরনো রেকর্ড।

বুথে বুথে বৃহস্পতিবার ভোটারদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। নির্বাচন কমিশনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী বিহারে প্রথম দফায় সর্বোচ্চ ভোটার উপস্থিতি দেখা গিয়েছে, ৬৪.৬৬%। এর আগে বিহারের ইতিহাসে কোনও নির্বাচনেই এত বেশি ভোট পড়েনি।

বৃহস্পতিবার বিহার বিধানসভা নির্বাচনের প্রথম ধাপে ১২১টি আসনের ৩৭.৫ কোটি ভোটারের মধ্যে ৬৪.৬৬% ভোট দিয়েছেন, যা এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ। উভয় শিবিরই এই ভোটদানে খুশি। প্রথম দফার ভোটে কী কী ঘটল, দেখে নেওয়া যাক ১২টি সূত্রে।

নির্বাচন কমিশনের মতে, বিহার বিধানসভা নির্বাচনের প্রথম দফায় ভোটার উপস্থিতি ছিল ৬৪.৬৬ শতাংশ। ১৯৫১ সালের পর এটি সর্বোচ্চ এবং ৭৫ বছরে এটি প্রথমবার। এর আগে ১৯৯৮ সালে সর্বোচ্চ ৬৪ শতাংশ ভোট পড়েছিল। মুজাফফরপুর এবং সমস্তিপুরে ভোটার উপস্থিতি এদিন ছিল ৭০ শতাংশেরও বেশি।

এখন প্রশ্ন হল, যে বিহারে বুথে না পৌঁছোনোই কার্যত রেওয়াজ, সেই রাজ্যে আচমকা এত ভোটারের উপস্থিতির নেপথ্যে কারণটা কী? কী ভাবে ভাঙল গত ৭৫ বছরের রেকর্ড? ভোট কুশলীদের ব্যাখ্যা বলছে এর পিছনে রয়েছে বেশ কিছু বড় কারণ।

প্রথমত, SIR হয়েছে এই বছর। আর তাই মানুষ তাদের নাম বাদ পড়ার ভয়ে ভোট দিতে একরকম বাধ্য হয়েছেন। অন্যান্য কারণগুলির মধ্যে রয়েছে ছট পুজোর পরে ভোটগ্রহণ এবং এই ভোটে মহিলাদের উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় অংশগ্রহণ।

এছাড়াও নির্বাচনী প্রক্রিয়া আগের তুলনায় সহজ করা হয়েছে। এর ফলে রাজ্যের ভোটাররা বড় সংখ্যায় ভোটকেন্দ্রে পৌঁছতে সক্ষম হয়েছেন। সর্বশেষ তথ্য অনুসারে, বিহারের ১৮টি জেলায় ভোটগ্রহণ হয়েছে। মুজাফফরপুর এবং সমস্তিপুরে সবচেয়ে বেশি ভোটার উপস্থিতি রেকর্ড করা হয়েছে। মুজাফফরপুরে ৭০.৯৬ শতাংশ, এবং সমস্তিপুরে ৭০.৬৩ শতাংশ ভোটারের উপস্থিতি রেকর্ড করা হয়েছে।

অন্যদিকে মাধেপুরায় ৬৭.২১ শতাংশ ভোটার উপস্থিতি রেকর্ড করা হয়েছে, তারপরে রয়েছে বৈশালী (৬৭.৩৭ শতাংশ), সহরসা (৬৬.৮৪ শতাংশ), খাগারিয়া (৬৬.৩৬ শতাংশ), লক্ষীসরাই (৬৫.০৫ শতাংশ), মুঙ্গের (৬০.৪০ শতাংশ), সিওয়ান (৬০.৩১ শতাংশ), নালন্দা (৫৮.৯১ শতাংশ) এবং পটনা (৫৭ শতাংশ) রয়েছে।

নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৫১-৫২ সালের বিধানসভা নির্বাচনে রাজ্যে সর্বনিম্ন ভোটার উপস্থিতি ছিল ৪২.৬ শতাংশ। বিহারে এ যাবৎ কালের সর্বোচ্চ ভোটার উপস্থিতি ছিল ২০০০ সালে। ভোট পড়েছিল ৬২.৫৭ শতাংশ।

এরপর কোভিড-19 মহামারীর ছায়ায় ২০২০ সালের নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি ছিল ৫৭.২৯ শতাংশ, যেখানে ২০১৫ সালে ছিল ৫৬.৯১ শতাংশ এবং ২০১০ সালে ছিল ৫২.৭৩ শতাংশ।

একনজরে প্রথম দফার ভোটের ১২টি বড় ঘটনা:লক্ষীসরাই- উপ-মুখ্যমন্ত্রীর গাড়িতে হামলা। বিজয় সিনহার সঙ্গে আরজেডি এমএলসি অজয় ​​সিংয়ের সংঘর্ষ। পটনা-মানেরে- আরজেডি প্রার্থীর ভাই বীরেন্দ্র তার পরিচয়পত্র পরীক্ষা করার সময় হুমকি দেন নির্বাচনী পরিদর্শককে। "আমি ওকে এখানেই আগুনে পুড়িয়ে দেব।" মন্তব্য করে শিরোনামে উঠে আসেন আরজেডি প্রার্থীর ভাই।

বৈশালী: আরজেডি প্রার্থী রবীন্দ কুমার সিং-এর প্ররোচনায়, লোকজন সিএপিএফ জওয়ানদের উপর পাথর ছুঁড়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। অন্যদিকে দারভাঙ্গার সিংহওয়াড়া থানা এলাকার একজন পোলিং এজেন্টকে হুমকি দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ। খবর পেয়ে পুলিশ সেখানে পৌঁছয় এবং সেইসময় পুলিশের উপর পাথর ছোঁড়া হয় বলেও অভিযোগ। ঘটনায় আটক করা হয়েছে দুজনকে।

লক্ষ্মীসরাই: বুথ দখলের খবর পেয়ে পুলিশ সুপার ঘটনাস্থলে পৌঁছন। পুলিশ এক ঘণ্টা ধরে গ্রামে মিছিল করে। অন্যদিকে ১০ জেলায় ইভিএম বিকলের ঘটনা ঘটেছে প্রথম দফার ভোটে। বৈশালীর লালগঞ্জে ভোট চুরির স্লোগান ওঠে। এই সময় বেশ কিছুক্ষণ ভোটগ্রহণ বন্ধ রাখা হয়। সরন-জৈতপুরে, মাঞ্জি আসনের সিপিআই প্রার্থী সত্যেন্দ্র কুমারের গাড়িতে ইট, পাথর এবং লাঠি দিয়ে হামলা চালানো হয়।

পটনা: পটনা সাহিবের ২৩৮ নম্বর বুথে, ভোটগ্রহণ কর্মীরা বিধানসভার স্পিকার নন্দ কিশোর যাদবের সঙ্গে তর্ক-বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন। সিওয়ান, দারভাঙ্গা এবং মুজাফফরপুরের আটটি ভোটকেন্দ্রে ভোট বয়কট করা হয়।