চিকিৎসক থেকে সাধারণ মানুষ আমরা সকলেই কম বেশি জানি যে শরীরে মেদ জমা ভাল নয়। তাই সুস্থ জীবনযাপনের জন্য প্রত্যেকরই একটি নির্দিষ্ট শারীরিক ওজন বজায় রাখা দরকার। এখন প্রশ্ন হচ্ছে কোন বয়সে কী রকম ওজন থাকা উচিত? এই বিষয়টি নিয়ে প্রচুর পরস্পরবিরোধী মতামত রয়েছে। আজকের এই প্রতিবেদনে জেনে নেওয়া যাক বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী প্রতিটি ব্যক্তির ক্ষেত্রে তাঁর বয়স অনুযায়ী কেমন ওজন থাকা কাম্য।
সহজ ভাষায় বিএমআই নির্ধারণের অঙ্কটা হল- শরীরের ওজনকে (কেজি) উচ্চতার (মিটার) বর্গফল দিয়ে ভাগ করা। অর্থাৎ কারও ওজন ৮০ কেজি হলে এবং উচ্চতা ১.৮ মিটার (৬ ফুট) হলে ওই ব্যক্তির বিএমআই হবে ২৪.৭। সাধারণত এক্ষেত্রে ১৮-২৫ কে আদর্শ মাত্রা ধরা হয়। ২৫-৩০ মানে ওজন বেশি এবং ৩০ এর বেশি মানে খুব মোটা ধরা হয়। অর্থাৎ বড়দের ক্ষেত্রে বিভিন্ন বয়সে দেহের ওজন এই বিএমআই অনুযায়ী হওয়া উচিত।
ব্যতিক্রম ভারতীয়রা : উপরের আন্তর্জাতিক বিএমআই মানদণ্ডটা মূলত পাশ্চাত্যের কথা মাথায় রেখে তৈরি। এশিয়দের ক্ষেত্রে কিন্তু এর কিছু পরিবর্তন করা হয়েছে। কারণ পাশ্চাত্য সমাজের তুলনায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আমাদের উচ্চতা কম হয়, শরীরে পেশির পরিমাণ কম থাকে ও মেদ বেশি থাকে। আমাদের দেশের ক্ষেত্রে বিএমআই ২৩ এর বেশি হলে তার ওজন বেশি ধরা হয়। আর সেটা ২৫ এর বেশি হলে তাকে ‘ওবিস’ বলা হয়।
বিএমআই নাকি ওজনতাহলে কি ওজন মাপা প্রয়োজন নাকি বিএমআই? দেহের মেদ, অস্থি এবং পেশির মধ্যে কার ওজন বেশি, সেটা আলাদা করে বোঝার কোনও উপায় নেই। কোনো বডি বিল্ডারের চেহারা হয়তো ছোটখাট কিন্তু শরীরে পেশি (মাসল মাস) বেশি হওয়ার কারণে ওজন বেশি হতে পারে। তার মানে কিন্তু তিনি মোটা নন। আবার সারাদিন অফিসে বসে কাজ করছেন এমন একজন মানুষের শরীরে মেদ বেশি হলে তাকে মোটা বলা হয়। অর্থাৎ কেউ ‘মোটা’ কি না এই ধারণার সঙ্গে মূলত শারীরিক মেদের একটা যোগসূত্র রয়েছে।
বয়স অনুযায়ী ওজনএক কথায় এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া কঠিন। কারণ বয়স, উচ্চতা, পুষ্টি, দেহের গড়ন ও আরও বিভিন্ন ফ্যাক্টরের উপর কোনও ব্যক্তির ওজন নির্ভর করে। সাধারণত মধ্য বয়স থেকে আমাদের ওজন বাড়তে থাকে। সেটা যাতে না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। যেকোনও বয়সে দেহের ওজনকে স্থিতিশীল রাখার চেষ্টা করতে হবে। আদর্শ ওজনের ধারণার জন্য বিএমআই-এর সাহায্য নেয়া যেতে পারে।
মাত্রাতিরিক্ত ওজন কমানোর বিপদ: ওজন কমাতে অনেকেই কঠোর ডায়েট মেনে চলেন। এক্ষেত্রে সাময়িকভাবে ওজন কমে। কারণ খাবার কম খেলে পেশির গ্লাইকোজেন ভাঙতে শুরু করে। কিন্তু কিছুদিন পর আবার ওজন বাড়তে পারে। এইভাবে ওজন কমালে, শরীর কিন্তু তখন দেহের মেটাবলিজমের গতি কমিয়ে দেয়। ফলে মাসল লস বাড়তে থাকে, কিন্তু ফ্যাট থেকেই যায়।
এর ফলে একটা সময়ের পর পেশির গুণগত মান কমতে শুরু করে বলে তখন কিন্তু শরীরে আবার ফ্যাট জমতে শুরু করে। তাছাড়া ক্র্যাশ ডায়েটের ফলে ওজন কমলেও শরীরে অতি প্রয়োজনীয় ভিটামিন, খনিজ উপাদানের অভাব দেখা দেয়। এর ফলে ব্যক্তির কোষ্ঠকাঠিন্য, এনার্জি হারানো, মাথা ব্যথা, খিটখিটে মেজাজ, বেশি খিদে পাওয়া, মাঝে মাঝে পেশিতে ব্যথা পর্যন্ত হতে পারে। তাই নিয়মিত সুষম আহার বজায় রেখে শরীরচর্চার সাহায্যে এবং ধীর গতিতে দেহের ওজন কমানো উচিত।