Weekend Trip: শহরের কোলাহল থেকে ২ দিনের মুক্তি চান? ঘুরে আসুন টাকির রায়চৌধুরী বাড়ি, মুগ্ধতার রেশ থেকে যাবে

উত্তর ২৪ পরগনার সীমান্ত শহর টাকি শুধু ইছামতি নদী ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য নয়, ইতিহাস-ঐতিহ্যের কারণেও উল্লেখযোগ্য। এখানকার এক প্রখ্যাত পরিবার হল রায় চৌধুরী বংশ, যার অন্যতম কৃতী সন্তান ভারতের প্রাক্তন সেনা প্রধান জেনারেল শংকর রায়চৌধুরী।

জেনারেল রায়চৌধুরীর পূর্বপুরুষরা এই টাকিতেই স্থায়ীভাবে বসবাস করতেন। সৈয়দপুর এলাকায় অবস্থিত তাঁদের পৈতৃক বাড়িটি এক সময় রায়চৌধুরীদের জমিদারি কেন্দ্র ছিল। এই বাড়ির স্থাপত্য, দালান-কোঠা, মাটির সিঁড়ি, আর বাগানের প্রাচীর-সবই বহন করে সেই জমিদারিকালের ছাপ। বাড়িটি আজও টাকির অন্যতম দ্রষ্টব্য ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা হিসেবে রয়ে গেছে।

এই বাড়ির অন্যতম পরিচিতি তাদের শতাব্দীপ্রাচীন দুর্গাপুজো। কথিত আছে, প্রাচীন কেদার রায় চৌধুরী এই পুজোর সূচনা করেছিলেন। সময়ের পরিবর্তনে বলির নিয়ম বদলালেও উৎসবের আচার-অনুষ্ঠানে আজও টিকে আছে সেই রাজকীয় ঐতিহ্য। প্রতিমা তৈরি হয় গোপনে, পঞ্চমীতে হয় প্রথম উন্মোচন—এক আধ্যাত্মিক আবহ তৈরি করে পুরো বাড়িতে।

স্বাধীনতার আগে ওপার বাংলা থেকে বহু মানুষ ইছামতি নদী পেরিয়ে এই বাড়ির পুজো দেখতে আসতেন। ধর্মীয় উৎসব হলেও এটি ছিল এক সাংস্কৃতিক মিলনের মঞ্চ। আজও টাকির প্রবীণরা সেই দিনের স্মৃতি চারণ করেন, যখন দুই বাংলার মানুষ একসাথে মিলিত হতেন এই পুজোর আঙিনায়।

সেনাবাহিনীর প্রধান হিসেবে জেনারেল রায়চৌধুরী কাশ্মীর সমস্যা, উত্তর-পূর্ব ভারতের জটিলতা, এবং কার্গিল-পূর্ব সময়ে দেশের প্রতিরক্ষা নীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। অবসর নেওয়ার পরে তিনি রাজনীতিতেও সক্রিয় হন, রাজ্যসভার সদস্য হন ও প্রতিরক্ষা বিষয়ক বিশেষজ্ঞ হিসেবেও পরিচিতি পান।

আজও টাকিতে বেড়াতে এলে বহু মানুষ ঘুরে যান এই বাড়িটি। শুধু একজন সেনা জেনারেলের শিকড় জানতেই নয়, বরং বাংলার জমিদারী ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও পারিবারিক ধর্মাচরণের এক জীবন্ত নিদর্শন দেখতে। রায়চৌধুরী বাড়ি যেন ইতিহাসের পাতায় লেখা এক জীবন্ত অধ্যায়।