দামোদরের জলে ডুবে থাকা পুরুলিয়ার রহস্যময় দেউলনগরী, ঘুরে আসুন তেলকুপির সৌন্দর্য
- Reported by:Shantonu Das
- hyperlocal
- Published by:Sanjukta Sarkar
Last Updated:
Purulia News: তেলকুপির এই দেউলগুলো দেখতে হলে ভরসা একমাত্র নৌকা। দামোদরের পাড়ে গাড়ি দাঁড় করিয়ে তার পর নৌকায় ভেসে পড়া। ঘণ্টাখানেকের নৌকাভ্রমণে দেখে নেওয়া যেতে পারে বাংলার এই ঐতিহাসিক স্থাপত্যকে।
চারপাশে অপার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। তার মাঝখানে দামোদর নদ। মাঝিদের দাঁড় বওয়ার ছন্দময় শব্দে টলমল করতে থাকা নৌকা এগিয়ে চলে ধীরে ধীরে। কিছুক্ষণ নৌকাভ্রমণ করলেই দূরে চোখে পড়বে একের পর এক প্রাচীন দেউল, যেগুলো সময় আর জলের সঙ্গে লড়াই করে এখনও দাঁড়িয়ে থাকা ইতিহাসের নীরব সাক্ষী।খানিক দূরে দেখা মিলবে আরও একটি দেউলের। তারও অবস্থা একই রকম। এই এলাকার তৃতীয় দেউলটি বছরের বেশির ভাগ সময়েই থাকে জলের তলায়। তবে গরমের দিনে দামোদ নদের জল কমলে, অংশবিশেষ দৃশ্যমান হয়ে ওঠে। (ছবি ও তথ্য: শান্তনু দাস)
advertisement
advertisement
advertisement
চেলিয়ামার বাসিন্দা ও পুরুলিয়ার লোকগবেষক সুভাষ রায় বলেন, “তেলকুপিতে গেলে মনটা ভারাক্রান্ত হয়ে যায়। কীভাবে একটা স্বর্ণময় অধ্যায় দামোদরের তলায় তলিয়ে গেল, তা ভাবলে কষ্ট হয়।” ইতিহাস বলছে, এক সময় তেলকুপিতে প্রায় ২৫-২৬টি দেউল ছিল। পরে দামোদর নদের উপর পাঞ্চেত জলাধার নির্মাণের ফলে অধিকাংশ মন্দিরই চলে যায় নদীর গর্ভে। কোনওভাবে মাথা উঁচিয়ে টিকে রয়েছে মাত্র তিনটি দেউল, তার মধ্যেও একটি বছরের বেশির ভাগ সময় অদৃশ্যই থাকে। (ছবি ও তথ্য: শান্তনু দাস)
advertisement
তেলকুপি নামের উৎপত্তি নিয়েও নানা মত রয়েছে। কারও মতে, নামটি এসেছে ‘তৈলকম্প’ শব্দ থেকে। সংস্কৃতে ‘তৈল’ অর্থ তেল, আবার কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রে ‘তৈল’ বলতে এক ধরনের কর বোঝানো হয়েছে। ‘কম্প’ শব্দটি এসেছে পরগনা বা প্রশাসনিক এলাকার অর্থে। সে হিসেবে তেলকুপি ছিল কর প্রদানকারী অঞ্চলের কেন্দ্র। আবার অনেকের ধারণা, তেলকুপি ছিল অতীতের কোনও বন্দরনগরী। (ছবি ও তথ্য: শান্তনু দাস)
advertisement
এখানে ঘুরে আসা মানে শুধু স্থানমাহাত্ম্য নয়, বরং ইতিহাসের সন্ধানে যাত্রা। এই দেউলগুলি মূলত জৈন মন্দির। এক সময় বাংলায় জৈন ধর্মের বিস্তার যে ছিল, এই মন্দিরগুলিই তার প্রমাণ। দুঃখের বিষয়, দীর্ঘদিনের অযত্ন ও সময়ের আঘাতে এই প্রাচীন স্থাপত্য আজ ধ্বংসের মুখে। তবে সাম্প্রতিক কালে উৎসাহী পর্যটকদের আনাগোনা কিছুটা বেড়েছে। বিভিন্ন ওয়েব সিরিজ়ের শুটিংয়ের সূত্রে মাঝেমধ্যেই গ্রামে শহুরে মানুষের উপস্থিতি চোখে পড়ছে। (ছবি ও তথ্য: শান্তনু দাস)
advertisement
কীভাবে যাবেন: তেলকুপির নিকটতম রেলস্টেশন আদ্রা। দূরত্ব প্রায় ২৫ কিলোমিটার। হাওড়া থেকে সারা দিন আদ্রাগামী একাধিক ট্রেন রয়েছে। তবে সবচেয়ে সুবিধাজনক হাওড়া–আদ্রা–বোকারো প্যাসেঞ্জার। ট্রেনটি প্রতিদিন রাত ১২টা ০৫ মিনিটে হাওড়া ছাড়ে এবং ভোর ৫টা ১৫ মিনিটে আদ্রা পৌঁছয়। এই ট্রেনে এলে সকালে তেলকুপি ঘুরে দুপুরের দিকেই কলকাতায় ফিরে আসা সম্ভব। (ছবি ও তথ্য: শান্তনু দাস)
advertisement
কোথায় থাকবেন: তেলকুপি এখনও পূর্ণাঙ্গ পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে ওঠেনি, তাই সেখানে থাকার কোনও ব্যবস্থা নেই। রাত্রিবাস করতে হলে আদ্রা বা রঘুনাথপুরে থাকতে হবে। এই দুই জায়গাতেই বেশ কিছু হোটেল ও অতিথিনিবাস রয়েছে। এছাড়া তেলকুপি থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে জয়চন্ডী পর্যটন কেন্দ্রে থেকেও দিনের বেলায় তেলকুপি ঘুরে নেওয়া যায়। (ছবি ও তথ্য: শান্তনু দাস)









