ডিম না পনির, ব্রেকফাস্টে বেশি প্রোটিন কে জোগান দেয় জেনে নিয়ে ডায়েট ঠিক করুন, তবেই না উপকার পাবেন
- Published by:Tias Banerjee
- trending desk
Last Updated:
Egg versus Paneer: কোনটা ব্রেকফাস্টে বেশি প্রোটিন জোগান দেয়, তা জানা দরকার। তারও আগে জানা দরকার ব্রেকফাস্টে প্রোটিন কেন গুরুত্বপূর্ণ!
যদি ব্রেকফাস্টের কথা ওঠে, তাহলে অনেক বছর ধরে ডিম বাঙালির পাতে নিজের একচ্ছত্র আধিপত্য বজায় রেখেছে এটা মেনে নিতেই হবে। সেই তুলনায় ব্রেকফাস্টে পনির খাওয়ার প্রচলন অনেকটাই কম। কিন্তু ডিম বনাম পনির এই প্রশ্ন যখন উঠল, তখন আমিষাশী এবং নিরামিষাশী দলভাগের প্রয়োজনীয়তাও দেখা দেয়, আর এই সূত্র ধরেই আসে প্রোটিনের কথা। কোনটা ব্রেকফাস্টে বেশি প্রোটিন জোগান দেয়, তা জানা দরকার। তারও আগে জানা দরকার ব্রেকফাস্টে প্রোটিন কেন গুরুত্বপূর্ণ! (Representative Image: AI Generated)
advertisement
প্রোটিন হল মানবদেহের গঠন উপাদান। এটি টিস্যু তৈরি, মেরামত এবং রক্ষণাবেক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি পেশি, ত্বক, চুল এবং এমনকি এনজাইম এবং হরমোনের ভিত্তি তৈরি করে যা শরীরের গুরুত্বপূর্ণ কার্যাবলী নিয়ন্ত্রণ করে। প্রোটিন সমৃদ্ধ খাদ্য পেশির বৃদ্ধিতে সহায়তা করে, বিপাক বৃদ্ধি করে এবং দীর্ঘ সময় ধরে পেট ভরাতে সাহায্য করে।
advertisement
আর ঠিক সেই জন্যই ব্রেকফাস্টে প্রোটিনের সমৃদ্ধ খাবার রাখা দরকার। এটা অনেকটা জ্বালানির মতো কাজ করে যা সারা দিন সক্রিয় এবং সতেজ রাখে। সেই দিক থেকে দেখলে ডিম আর পনির এই দুটোর কথাই মাথায় আসে, তৈরি করা সহজ, খেতে ভাল আর স্বাস্থ্যকর তো বটেই। কিন্তু দুটোর মধ্যে কোনটা বেশি ভাল? চুলচেরা বিশ্লেষণ করে জেনে নেওয়া যাক।
advertisement
ডিমের পুষ্টিগুণ ৪৪ গ্রাম ওজনের একটি সেদ্ধ বা পোচ করা ডিমে ৫.৫ গ্রাম প্রোটিন, ৪.২ গ্রাম মোট চর্বি, ২৪.৬ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ০.৮ মিলিগ্রাম আয়রন, ৫.৩ মিলিগ্রাম ম্যাগনেসিয়াম, ৮৬.৭ মিলিগ্রাম ফসফরাস, ৬০.৩ মিলিগ্রাম পটাসিয়াম, ০.৬ মিলিগ্রাম জিঙ্ক, ১৬২ মিলিগ্রাম কোলেস্টেরল এবং ১৩.৪ মাইক্রোগ্রাম সেলেনিয়াম থাকে।
advertisement
ডিম পুষ্টির এক শক্তিশালী উৎস। বলা হয় যে এতে উচ্চমানের প্রোটিন রয়েছে, যা পেশি তৈরি এবং মেরামত করতে সাহায্য করে, সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ পেট ভরে রাখে, অপ্রয়োজনীয় খাবার খাওয়া কমায়। বি১২, ডি এবং কোলিনের মতো প্রয়োজনীয় ভিটামিন সমৃদ্ধ ডিম মস্তিষ্কের কার্যকারিতা সমর্থন করে, বিপাক বৃদ্ধি করে এবং সামগ্রিক শক্তির মাত্রা উন্নত করে। লুটেইন এবং জেক্সানথিনের মতো এর স্বাস্থ্যকর চর্বি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট চোখের স্বাস্থ্যের উন্নতি করে এবং প্রদাহ থেকে রক্ষা করে।
advertisement
ডিমে ক্যালোরি কম থাকলেও তা অত্যন্ত পুষ্টিকর, যা ওজন নিয়ন্ত্রণের জন্য আদর্শ। পরিমিত পরিমাণে খাওয়া হলে ডিম হৃদরোগীর স্বাস্থ্যকেও ভাল রাখে, কারণ এর স্বাস্থ্যকর চর্বি। ডিমের কোলিন স্মৃতিশক্তি, মনোযোগ এবং স্নায়ুর কার্যকারিতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ওমেগা-৩ সহ ডিমের কুসুমে থাকা স্বাস্থ্যকর চর্বি হৃদপিণ্ডের স্বাস্থ্য ভাল এবং প্রদাহ কমায়।
advertisement
advertisement
উচ্চমানের প্রোটিনে ভরপুর, যা পেশির বৃদ্ধি এবং সারাদিন ধরে শক্তির জন্য অপরিহার্য। পনির ধীরে ধীরে হজম হয়, ফলে দীর্ঘ সময় ধরে পেট ভরা রাখে, ক্ষুধা কমায় এবং ওজন কমাতে এবং নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। এটি ক্যালসিয়াম এবং ফসফরাস সমৃদ্ধ যা হাড় ও দাঁতকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে। এতে স্বাস্থ্যকর চর্বিও রয়েছে যা রক্তে শর্করার মাত্রা না বাড়িয়ে স্থির শক্তি সরবরাহ করে, ফলে পনির ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য আদর্শ। এছাড়াও, পনির হজম করা সহজ। আয়ুর্বেদে পনিরকে একটি সাত্ত্বিক খাবার হিসাবে বিবেচনা করা হয়- হালকা, পুষ্টিকর এবং মানসিক স্বচ্ছতা বৃদ্ধির সহায়ক। এটি বাতত এবং পিত্ত দোষের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে, স্থির শক্তি প্রদান করে।
advertisement
পনির সম্পর্কে গবেষণা কী বলছে? Paneer- An Indian Soft Cheese Variant: A Review নামের একটি গবেষণা অনুসারে পনিরে মোটামুটি উচ্চ মাত্রার চর্বি (২২-২৫%) এবং প্রোটিন (১৬-১৮%) এবং কম মাত্রার ল্যাকটোজ (২.০-২.৭%) রয়েছে। খাদ্যতালিকায় পনির অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে ভারতীয় নিরামিষভোজীদের ক্ষেত্রে, কারণ এতে প্রচুর পরিমাণে চর্বি এবং প্রোটিনের পাশাপাশি কিছু খনিজ পদার্থ, বিশেষ করে ক্যালসিয়াম এবং ফসফরাস রয়েছে। এটি চর্বিতে দ্রবণীয় ভিটামিন এ এবং ডি-এরও একটি ভাল উৎস। তাই এর খাদ্য এবং পুষ্টিগুণ মোটামুটি উচ্চ স্তরেরই। পনিরে উচ্চতর পুষ্টিগুণ আসে হুই প্রোটিনের উপস্থিতি থেকে যা শরীরের জন্য অপরিহার্য অ্যামিনো অ্যাসিডের এক সমৃদ্ধ উৎস। উচ্চ পুষ্টিগুণের কারণে পনির অন্তঃসত্ত্বা, শিশু, বাড়ন্ত শিশু, কিশোর এবং প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য একটি আদর্শ খাবার। ডায়াবেটিক এবং করোনারি হৃদরোগের রোগীদের জন্যও চিকিৎসকরা পনির সুপারিশ করেন। গবেষণায় আরও বলা হয়েছে যে মোষের দুধ এবং গরুর দুধ থেকে তৈরি পনিরের প্রোটিন দক্ষতা অনুপাত (PER) এবং জৈবিক মান (BV) ৩.৪ আর ২.৩; যথাক্রমে ৮৬.৫৬ এবং ৮১.৮৮। (Representative Image: AI Generated)
advertisement
ডিম সম্পর্কে গবেষণা কী বলছে? Health Functions of Egg Protein নামের এক গবেষণায় বলা হয়েছে যে ডিম প্রোটিনের একটি উল্লেখযোগ্য উৎস, যার অ্যামিনো অ্যাসিড স্কোর ১০০ এবং সর্বোচ্চ নেট প্রোটিনও বেশি। আরও বলা হয়েছে যে এতে দুধের প্রোটিনের মতো প্রায় একই পরিমাণে ব্রাঞ্চড-চেইন অ্যামিনো অ্যাসিড রয়েছে। অন্যান্য প্রোটিন উৎসের তুলনায় এতে সালফারযুক্ত অ্যামিনো অ্যাসিডও বেশি। EWP-এর জন্য অ্যামিনো অ্যাসিড স্কোর ১০০, এর নেট প্রোটিন ব্যবহার হুই প্রোটিনের চেয়ে বেশি বলে জানা গিয়েছে। প্রোটিন এমনকি ডিমের খোসার ঝিল্লিতেও উপস্থিত থাকে। উল্লেখ করা হয়েছে যে ডিমের সাদা অংশ প্রোটিনের একটি ভাল উৎস যা পেশির ভর বৃদ্ধি করতে ব্যবহার করা যেতে পারে। সামগ্রিকভাবে, ডিম বিপাকীয় স্বাস্থ্য, পেশির কার্যকারিতা এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট লেভেল ধরে রাখে। পেশির ভর উন্নত করে বলে ব্যায়ামের ডায়েটে তা পেশিকে শক্তিশালী করে এবং ক্লান্তি দূর করে; ডিম ভিসারাল ফ্যাট হ্রাস করে এবং সিরাম কোলেস্টেরলের মাত্রাও হ্রাস করে লিপিড বিপাক উন্নত করতে পারে। ডিম শারীরিক দুর্বলতা এবং বিপাকীয় সিন্ড্রোম প্রতিরোধে অবদান রাখতে পারে। (Representative Image: AI Generated)
advertisement
ডিম বনাম পনির: তাহলে প্রোটিনের ভাল উৎস কোনটা বলা হয়ে থাকে যে ডিম এবং প্রোটিন উভয়েরই পুষ্টির গঠন একই রকম। প্রোটিন তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় নয়টি পুষ্টি উপাদানই দুটোতেই থাকে। এছাড়াও, দুগ্ধজাত পণ্য এবং ডিম ভিটামিন বি-১২ এবং ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ, এই দুই পুষ্টি উপাদান কোনও উদ্ভিদ-ভিত্তিক খাবারে খুব কমই পাওয়া যায়। যদি আমরা পুষ্টির মাত্রা দেখি, তাহলে উভয়ই স্বাস্থ্যকর এবং রোজই খাদ্যতালিকায় রাখা যেতে পারে। ওজন কমাতে চাইছেন এমন নিরামিষাশীদের জন্য পনির খাওয়া ডিম খাওয়ার মতোই উপকারী হতে পারে। সর্বাধিক পুষ্টি পেতে এবং সারা দিন ধরে স্থিতিশীল, ভারসাম্যপূর্ণ শক্তির স্তর বজায় রাখতে খাদ্যতালিকায় সয়া, মুসুর ডাল এবং বাদামও যোগ করা যেতে পারে। (Representative Image: AI Generated)
advertisement
সিদ্ধান্ত তাহলে কী? একটা কথা শুধু ভুললে চলবে না! এই প্রতিবেদনে শুধুমাত্র সাধারণ কিছু তথ্য দেওয়া হল, অতএব এটিকে চিকিৎসাগত পরামর্শ হিসেবে বিবেচনা করা উচিত নয়। ব্রেকফাস্টে ডিম হোক বা পনির, শুরু করার আগে সব সময়েই ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলে নেওয়া উচিত হবে। তিনিই শারীরিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে কোনটা খেলে ভাল হয়, তা ঠিক করে দিতে পারবেন। (Representative Image: AI Generated)
