IVF Artificial Sperm: সন্তানের জন্য আর কারও প্রয়োজন নেই! ল্যাবে তৈরি শুক্রাণু-ডিম্বাণুই দেবে সমাধান...বিজ্ঞানের বিরাট চমক....

বিশ্বজুড়ে বহু পুরুষ বন্ধ্যাত্বের সমস্যায় ভুগছেন। এর ফলে বহু দম্পতি বাবা-মা হওয়ার আনন্দ থেকে বঞ্চিত হন। তবে এখন বিজ্ঞানের অগ্রগতির ফলে এই সমস্যা দূর হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। বিজ্ঞানীরা এখন এমন এক প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছেন, যার মাধ্যমে ল্যাবরেটরিতে শুক্রাণু ও ডিম্বাণু তৈরি করে সন্তান জন্ম দেওয়া সম্ভব হবে।

জাপানের ওসাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কাতসুহিকো হায়াশি ও আমেরিকার একটি স্টার্টআপ ‘কনসেপশন বায়োসায়েন্সেস’ এই প্রযুক্তির ওপর কাজ করছেন। তাঁদের দাবি, আগামী ১০ বছরের মধ্যে ল্যাব-তৈরি শুক্রাণু ও ডিম্বাণুর মাধ্যমে পৃথিবীতে প্রথম শিশু জন্ম নিতে পারে।

এই প্রযুক্তির নাম ইন-ভিট্রো গ্যামেটোজেনেসিস (IVG)। এতে মানুষের ত্বক বা রক্তের কোষকে শুক্রাণু বা ডিম্বাণুতে রূপান্তর করা হয়। অধ্যাপক হায়াশি ‘দ্য গার্ডিয়ান’-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, তাঁদের গবেষণাগারে আগামী ৭ বছরের মধ্যে মানুষের জন্য উপযুক্ত শুক্রাণু বা ডিম্বাণু তৈরি সম্ভব হবে।

এই প্রকল্পে শুধু জাপান নয়, আমেরিকার সিলিকন ভ্যালির স্টার্টআপ সংস্থা ‘কনসেপশন বায়োসায়েন্সেস’-ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। সংস্থাটির সিইও ম্যাট ক্রিসিলফের মতে, সবকিছু পরিকল্পনা অনুযায়ী চললে এই প্রযুক্তি আগামী ৫ বছরের মধ্যেই চিকিৎসাক্ষেত্রে ব্যবহারযোগ্য হয়ে উঠবে।

স্টেম সেল ব্যবহার করে বিজ্ঞানীরা ইতিমধ্যে মাউসের উপর সফল পরীক্ষা সম্পন্ন করেছেন। স্টেম সেল থেকে ল্যাবে শুক্রাণুর মতো কোষ তৈরি করে তা দিয়ে একটি ডিম্বাণু নিষিক্ত করা হয়েছে। এই প্রক্রিয়ায় দুই পুরুষ মাউসের জিন ব্যবহার করে একটি মেয়ে ইঁদুরের জন্ম দেওয়া সম্ভব হয়েছে।

অধ্যাপক হায়াশির গবেষণাগারে ১ মিলিমিটারের ‘টেস্টিকুলার অর্গানয়েড’ তৈরি হয়েছে, যাতে শুক্রাণুর পূর্বধাপের কোষ গঠিত হচ্ছে। যদিও এখনও এসব কোষ বেশিক্ষণ জীবিত থাকে না, বিজ্ঞানীরা অক্সিজেন সরবরাহ বাড়িয়ে সেগুলিকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করছেন। একইভাবে, মানব ডিম্বাশয়ের মতো ওভারি অর্গানয়েডও তৈরি হয়েছে।

এই অর্গানয়েডগুলোতে মানব ডিম্বাণু ও শুক্রাণু তৈরির পুরো প্রক্রিয়াটি ধাপে ধাপে অনুকরণ করা হচ্ছে। অর্থাৎ গর্ভধারণের প্রাথমিক প্রক্রিয়া পুনরাবৃত্তি করে বাস্তবের কাছাকাছি একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করা হচ্ছে। বিজ্ঞানীদের বিশ্বাস, ভবিষ্যতে এখান থেকেই পূর্ণাঙ্গ শুক্রাণু বা ডিম্বাণু তৈরি করা সম্ভব হবে।

এই প্রযুক্তির মাধ্যমে একটি শিশু জন্মাতে আর ১০ বছরের বেশি সময় লাগবে না বলে গবেষকরা মনে করছেন। এটি বন্ধ্যাত্বে ভোগা মানুষদের জন্য আশার আলো। তবে একে ঘিরে সমাজে বিতর্কও তৈরি হবে, কারণ এতে জৈবিক অভিভাবকত্বের সংজ্ঞা বদলে যাবে।

একজন নারী ৬০ বছর বয়সে সন্তান জন্ম দিতে পারবেন, আবার একজন পুরুষ নিজের ত্বকের কোষ থেকে ডিম্বাণু তৈরি করে তা নিজেই নিষিক্ত করতে পারবেন। এমনকি একক ব্যক্তির ডিএনএ দিয়ে শিশুর জন্ম দেওয়া কিংবা তিন–চার জনের জিন ব্যবহার করে 'মাল্টিপ্লেক্স বেবি' তৈরির পথও তৈরি হতে পারে।

দিল্লির বিখ্যাত প্রজনন বিশেষজ্ঞ ডা. নীতু গুজরাল বলেছেন, "এই গবেষণা ভবিষ্যতের প্রজনন চিকিৎসাকে এক নতুন দিগন্তে পৌঁছে দেবে। বন্ধ্যাত্বে ভোগা বহু মানুষ এই প্রযুক্তির মাধ্যমে আশার আলো দেখবেন। তবে চিকিৎসাগত ও নৈতিক দিক বিবেচনায় রেখে ধাপে ধাপে এই প্রযুক্তি বাস্তবায়িত হওয়া প্রয়োজন"...

Disclaimer: এই খবরের মধ্যে দেওয়া ওষুধ/স্বাস্থ্য সম্পর্কিত পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করে প্রাপ্ত। এটি সাধারণ তথ্য এবং ব্যক্তিগত পরামর্শ নয়। তাই ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোনও কিছু ব্যবহার না করার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে। নিউজ18 বাংলা কোনও ব্যবহারে ক্ষতির জন্য দায়ী থাকবে না।