‘স্ট্রেস’—একটি অতি পরিচিত শব্দ হয়ে উঠেছে আজকের জীবনে। পরিবর্তনশীল জীবনধারা, চ্যালেঞ্জ ইত্যাদির সঙ্গে জড়িয়ে গিয়েছে মানসিক চাপ বা উদ্বেগের মতো বিষয়টি। প্রতিদিন এমন অনেক ঘটনা ঘটে যার ফলে আমাদের মানসিক, শারীরিকভাবে দুর্বল করে তোলে, কর্টিসল, অ্যাড্রেনালিন-সহ স্ট্রেস হরমোন নিঃসৃত হয় যা রক্তচাপ, ঘুমের ধরণ, রক্তে শর্করার মাত্রার পাশাপাশি হৃদস্পন্দনকেও প্রভাবিত করতে পারে। গুরুতর মানসিক চাপের ফলে দেখা দিতে পারে টাকোটসুবো কার্ডিওমায়োপ্যাথি, যা ‘ব্রোক হার্ট সিন্ড্রোম’ নামেও পরিচিত, এমনই জানাচ্ছেন বেঙ্গালুরুর ফোর্টিস হাসপাতালের ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজি বিভাগের ডিরেক্টর চিকিৎসক রাজপাল সিংহ।
সাধারণত এক একজন মানুষের মানসিক উদ্বেগের ধরন এক একরকম হতে পারে। কারও অ্যাকিউট স্ট্রেস হয়, কারও এপিসোডিক অ্যাকিউট, কারও আবার ক্রনিক হতে পারে। এর উপর ভিত্তি করেই বৈশিষ্ট্য, লক্ষণ, উপসর্গ, সময়কাল এবং চিকিৎসা পদ্ধতি বিন্যাস করা হয়। মানসিক চাপ মানেই খারাপ নয়, এটি দৈনন্দিন কাজের স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া। সুস্থ স্ট্রেস একজন ব্যক্তিকে সতর্ক হতে, চিন্তাশীল হতে অনুপ্রাণিত করে। কিন্তু অত্যধিক চাপ ক্ষতিকারক হতে পারে।
অ্যাকিউট স্ট্রেস- খুব অল্প সময়ের জন্য চাপ অনুভব করে থাকি আমরা সকলেই, ঘন ঘন এমন হওয়াও স্বাভাবিক। অদূর ভবিষ্যতের কোনও ঘটনা বা চাহিদা সম্পর্কে অতিরিক্ত বা নেতিবাচক চিন্তার কারণে ঘটতে পারে। এতে ক্ষণস্থায়ী মানসিক যন্ত্রণা, মাথাব্যথা, ঘাড়ে ব্যথা, কখনও কখনও ক্ষণস্থায়ী পেট, অন্ত্র এবং অন্ত্রের সমস্যা, অম্বল, অ্যাসিড পেট, পেট ফাঁপা, ডায়রিয়া, কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো সমস্যা হতে পারে।
এপিসোডিক অ্যাকিউট স্ট্রেস- এক্ষেত্রে প্রায়ই কোনও ব্যক্তি তীব্র মানসিক চাপে ভুগতে পারেন। এতে জীবনে সঙ্কট ও বিশৃঙ্খলা বাড়তে পারে। এ ধরনের মানুষের আবার দু’টি ভিন্ন ধারা থাকতে পারে। ‘টাইপ এ’—এঁরা সাধারণত খুব ঘন ঘন মানসিক চাপে আক্রান্ত হন। তখন তাঁরা অধৈর্য, আক্রমণাত্মক হয়ে পড়েন। অন্য পাশে ‘উদ্বিগ্ন’ ধরনের মানুষেরা সব সময় সব কিছু নিয়ে নেতিবাচক চিন্তা করতে থাকেন। এ থেকে করোনারি হার্ট ডিজিজের মতো রোগও হতে পারে।
টাকোটসুবো কার্ডিওমায়োপ্যাথি কী?
এটি ‘ব্রোক হার্ট সিন্ড্রোম’ বা স্ট্রেস ইনডিউসড কার্ডিওমায়োপ্যাথি নামেও পরিচিত। এতে হৃৎপিণ্ডের প্রধান চেম্বার, বাম ভেন্ট্রিকলের দুর্বলতা দেখা যায়। অনেক রকম মানসিক বা শারীরিক ক্ষতির কারণে এটি হতে পারে— প্রিয়জনের বিচ্ছেদ, আকস্মিক দুর্ঘটনা, হঠাৎ রক্তচাপ কমে যাওয়া, তীব্র ভয়
মানসিক চাপ হৃদযন্ত্রের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেই। কোনও ব্যক্তি যত বেশি চাপে থাকে, অ্যামিগডালা (মস্তিষ্কের একটি এলাকা যা মানসিক চাপের সাথে কাজ করে) তত বেশি অস্থিমজ্জাকে আরও শ্বেত রক্তকণিকা তৈরি করার জন্য সঙ্কেত দেয়। ফলে ধমনীগুলি স্ফীত হয়ে যায়, যা হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক এবং এনজাইনা (হার্টে রক্ত প্রবাহ হ্রাসের কারণে এক ধরনের বুকে ব্যথা) হতে পারে। ব্রোকেন হার্ট সিন্ড্রোম হল কার্ডিওভাসকুলার রোগ যা তীব্র, গুরুতর মানসিক চাপের ফলে হতে পারে।
হাসি স্ট্রেস হরমোনের মাত্রা কমায়, ধমনীতে প্রদাহ কমায় এবং ভাল এইচডিএল কোলেস্টেরল বাড়ায়। শারীরিক ভাবে সক্রিয় থাকলে এন্ডোরফিন নামক রাসায়নিক নির্গত করে যা মন ভাল করে দেয়। ব্যায়াম শুধুমাত্র মানসিক চাপ দূর করে না বরং রক্তচাপ কমিয়ে হার্টের পেশীকে শক্তিশালী করে। ব্যায়ামের অভাবে ওজন বৃদ্ধি, করোনারি আর্টারি ডিজিজের ঝুঁকিও বাড়ে। স্ট্রেস হলে অনেকেই দ্বিগুণ খাওয়া দাওয়া করেন। এ থেকে ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপের মতো সমস্যা হতে পারে। ডায়েটে পুষ্টি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের পরিমাণ বাড়াতে হবে। রাখতে হবে সালমন, অ্যাভোকাডো, অ্যাসপারাগাস, ডার্ক চকোলেট।
হাসি স্ট্রেস হরমোনের মাত্রা কমায়, ধমনীতে প্রদাহ কমায় এবং ভাল এইচডিএল কোলেস্টেরল বাড়ায়। শারীরিক ভাবে সক্রিয় থাকলে এন্ডোরফিন নামক রাসায়নিক নির্গত করে যা মন ভাল করে দেয়। ব্যায়াম শুধুমাত্র মানসিক চাপ দূর করে না বরং রক্তচাপ কমিয়ে হার্টের পেশীকে শক্তিশালী করে। ব্যায়ামের অভাবে ওজন বৃদ্ধি, করোনারি আর্টারি ডিজিজের ঝুঁকিও বাড়ে। স্ট্রেস হলে অনেকেই দ্বিগুণ খাওয়া দাওয়া করেন। এ থেকে ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপের মতো সমস্যা হতে পারে। ডায়েটে পুষ্টি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের পরিমাণ বাড়াতে হবে। রাখতে হবে সালমন, অ্যাভোকাডো, অ্যাসপারাগাস, ডার্ক চকোলেট।