সুগারের যমদূত এই 'মাছ'...! হুড়হুড়িয়ে কমবে 'ওজন', মুঠোয় থাকবে কোলেস্টেরল, 'নাম' শুনলে এখনই থলে হাতে ছুটবেন বাজার!

মাছ দেখলেই চোখ চকচক করে বাঙালির। কিন্তু মাছ বাছার ক্ষেত্রে আবার এই বাঙালিই ভীষণই একচোখ। বড় মাছের মধ্যে ইলিশ-রুই-কাতলা ছাড়া এমন মুখে রোচে না, তেমনই আবার পাবদা-পার্শের ভক্ত এই বাঙালি।

আজকাল কিন্তু চিকিৎসকেরাও তালিকায় আরও কিছু মাছ যোগ করার পরামর্শ দিচ্ছেন। বিশেষ করে কিছু স্বাস্থ্যগত সমস্যায় ম্যাজিকের মতো কাজ করে কিছু বিশেষ মাছ। কিন্তু আমরা অনেকেই তাঁর খোঁজ রাখি না।

এমনিতে লবণাক্ত মাছের নাম শুনলেই আমরা মুখ ঘুরিয়ে নিই। কিন্তু জটিল রোগ থেকে ম্যাজিকের মতো মুক্তি দিতে পারে এমনই এক সামুদ্রিক মাছ। সম্প্রতি, গবেষকরা একটি গবেষণায় এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন।

আজকাল সুগারের রোগ ঘরে ঘরে। বেশিরভাগ মানুষই ডায়াবেটিসে ভোগেন। অন্যান্য রোগের মধ্যে কোলেস্টেরলের প্রকোপ ও সেইসঙ্গে হৃদরোগের ঝুঁকিও বাড়ছে ক্রমশ। কিন্তু জানেন কী এই একটি মাছ এই সবকিছুকে এক ঢিলে তাড়াতে পারে।

উচ্চ রক্তচাপ উপশম করতে জুড়ি মেলা ভার। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, লিভারের সমস্যা দূর করে। ভোলা ভেটকি মাছ-সহ সামুদ্রিক মাছ ডায়াবেটিসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে। বিস্তৃত গবেষণার পর অধ্যাপকরা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন।

বেলদা কলেজ, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয় এবং মেদিনীপুরের রাজা নরেন্দ্রলাল খান মহিলা কলেজের অধ্যাপকদের দ্বারা কয়েক বছর ধরে পরিচালিত একটি যৌথ গবেষণায় এই তথ্য উঠে এসেছে।

বেলদা কলেজের পুষ্টি বিভাগের অধ্যাপক কৌশিক দাসের গবেষণা কাজে বেশ কয়েকজন ছাত্র গবেষক যোগ দিয়েছেন। গবেষকরা বলছেন যে এই গবেষণাটি ২০১৭-১৮ সালে শুরু হয়েছিল।

বেলদা কলেজের অধ্যাপক কৌশিক দাসের তত্ত্বাবধানে, রাজা নরেন্দ্রলাল খান মহিলা কলেজের অধ্যাপক শ্রাবন্তী পেইন এবং সহযোগী জয়শ্রী লাহা গবেষণায় সফল হয়েছেন। এর পাশাপাশি, সঞ্জয় দাস, সুপ্রিয়া ভৌমিক এবং সায়ান পাণ্ডা এই গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন।

এই মাছ খেলে রক্তচাপ এবং হৃদরোগের ঝুঁকিও কমে, বলেন পুষ্টি বিভাগের অধ্যাপক শ্রাবন্তী পেইন। গবেষকরা বলছেন, যারা সামুদ্রিক খাবার খান তাদের জয়েন্টে ব্যথা কম হয় এবং মাসিকের সময় ব্যথাও কম হয়।

উপকূলীয় অঞ্চলে বসবাসকারী ১২৪ জনের উপর করা একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে মাত্র তিন থেকে চারজনের ডায়াবেটিস ছিল। অন্যদিকে, যারা মিঠা পানির মাছ খান তাদের প্রায় ৩০ শতাংশের মধ্যে সুগারের মাত্রা বেশি থাকে।

এর থেকে দেখা যায় যে, সামুদ্রিক মাছ ভোলা ভেটকি রক্তে শর্করার মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে কমাতে পারে। ইঁদুরের উপর পরিচালিত গবেষণায় এটি প্রকাশিত হয়েছে। নিয়মিত খাবার খাওয়ানোর পাশাপাশি এঁদের চিনিযুক্ত খাবারও খাওয়ানো হয়েছিল।

গবেষণায় দেখা যায়, সামুদ্রিক মাছ খাওয়ানোর ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা অস্বাভাবিকভাবে কমে যায়। সেই কারণেই বিশেষজ্ঞরা বলেন, যদি এই মাছের ভিতরের পদার্থটি ক্যাপসুল আকারে বাজারে আনা হয়, তাহলে সাধারণ মানুষ উপকৃত হবে।

এই বিষয়ে গবেষণার জন্য অধ্যাপক শ্রাবন্তী পেইনকে পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান প্রযুক্তি কংগ্রেস ২০২৩-এ সম্মানিত করা হয়। আগামী দিনে গবেষণা আরও বৃদ্ধি পেলে, ভবিষ্যতে রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে সামুদ্রিক মাছ আশার আলো হয়ে উঠতে পারে বলেই বিশ্বাস বিজ্ঞানীদের।

পুষ্টিগুণের দিক থেকে ভোলা ভেটকি আরও অনেক মাছকে টেক্কা দেয়। যদিও এই মাছের গন্ধের জন্য মাছটি এড়িয়ে চলেন অনেকেই কিন্তু গুণের বহর জানলে এবার আর হয়তো এড়িয়ে চলবেন না আপনিও।