গায়েব হয়ে গিয়েছিল আস্ত একটি বাস। দিন দুয়েক পর বাসের খোঁজ মিলেছিল, তবে বাস থেকে উদ্ধার হয়েছিল তিনটি পচাগলা দেহ! এই ২ দিন বাসটি কোথায় ছিল? সারা দিন যাতায়াতের পর বাসে প্রায় পেট্রল ছিল-ই না! সেই অবস্থায় বাসটি গন্তব্য থেকে শত যোজন দূরে পৌঁছল কী করে? বাসের ভিতরে মৃতদেহগুলো এল কী করে? চিনের রুট নম্বর ৩৭৫-এর শেষ বাসটি ঘিরে আজও রহস্য যার সামাধান করতে পারেননি কেউ-ই।
তবে গোড়া থেকেই বলা যাক! ১৯৯৫ সালের ১৪ নভেম্বর চিনের ইউয়াং মিং হুয়ান নামে এক বাসস্টপে মাঝরাতে ৩৭৫ নম্বর রুটের শেষ বাসের জন্য দাঁড়িয়ে ছিলেন এক বৃদ্ধা ও এক যুবক। বাসটি এসে দাঁড়াতেই বৃদ্ধা এবং যুবকটি তাতে চড়ে বসেন। বাসটির গন্তব্য ছিল শিয়াং শান শহর বা ফ্রেগরেন্ট হিল নামের এক জায়গা। ইউয়াং মিং হুয়ান বাসস্টপ থেকে যা সাতটি স্টপ দূরে। একে একে অনেকেই ওই বাস থেকে তাঁদের নির্দিষ্ট গন্তব্যে নেমে যেতে থাকেন। কয়েকটি স্টপ পরে ওই বাসে ছিলেন কেবলমাত্র বৃদ্ধা, ওই যুবকট, বাসের চালক এবং এক মহিলা কন্ডাক্টর। কিছু ক্ষণ পর চালকের নজরে আসে, রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে দু’জন ব্যক্তি বাস থামানোর ইশারা করছেন। ওই দুই যাত্রীর সামনে বাস থামান তিনি।
বাসের দরজা খুলতেই দেখা যায়, দু’জন যাত্রী নন, তাঁদের মাঝে আরও এক জন রয়েছেন। তৃতীয় ব্যক্তি ওই দুই যাত্রীর কাঁধে ভর করে বাসে উঠেছিলেন। ওই পাঁচ যাত্রীকে নিয়ে আবারও চলতে শুরু করে বাসটি। কয়েকটি স্টপ পরে বাসের ভিতরে চিলচিৎকার জুড়ে দেন ওই বৃদ্ধা। পিছনের আসনে বসা যুবকটি নাকি পকেটমার, তাঁর টাকার ব্যাগটি চুরি করেছে। উটকো ঝামেলায় বিরক্ত হয়ে বাস থামিয়ে দেন চালক। বৃদ্ধা এবং যুবককে জোর করে বাস থেকে নামিয়েও দেন। এর পর দু’জনের সামনে দিয়ে বেরিয়ে যায় বাসটি।
বাস থেকে নেমে যুবককে নিয়ে পুলিশ স্টেশনে যান বৃদ্ধা। সেখানে গিয়ে আরও অদ্ভুত দাবি করেন তিনি। পুলিশ আধিকারিকদের বৃদ্ধা জানান, ওই বাসের তিন যাত্রী আসলে অশরীরী। নিজেদের প্রাণ বাঁচানোর জন্যই যুবকের বিরুদ্ধে পকেটমারির অভিযোগ তুলে তিনি অশান্তির সৃষ্টি করেছিলেন। তাঁর দাবি ছিল, ওই তিন যাত্রীরই পা দেখতে পাননি তিনি। বাসের জানলা দিয়ে হাওয়া এলে তা তিন জনেরই দেহ ভেদ করে চলে গিয়েছিল।
ওই নোটিস বেরোনোর পরের দিন গায়েব হওয়া বাসটির খোঁজ মেলে গন্তব্য থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার দূরে একটি জলের রিজার্ভারের কাছে। ঘটনার তদন্তে নামে পুলিশ, সামনে আসে কয়েকটি প্রশ্ন, যার উত্তর আজও অজানা। প্রথম প্রশ্ন, সারা দিন চলাচলের পর বাসটির পেট্রল ফুরিয়ে যাওয়াটা স্বাভাবিক। তা সত্ত্বেও গন্তব্য থেকে ১০০ কিলোমিটার দূরে বাসটি কী ভাবে পৌঁছল? তদন্তকারীদের দাবি ছিল, বাসটির উদ্ধারের সময় জ্বালানীর ট্যাঙ্কে পেট্রলের বদলে তাজা রক্ত পাওয়া গিয়েছিল।
তদন্তকারীদের দাবি ছিল, বাসটি থেকে উদ্ধার হয় তটি পচাগলা দেহ। পরীক্ষার পর দেখা যায়, দেহগুলো কোনওমতেই ২ দিনের পুরনো নয়। ময়নাতদন্তের পরেও এ বিষয়ে সদুত্তর মেলেনি। ওই রিজার্ভারের আশপাশের সমস্ত সিসিটিভি ফুটেজেও অস্বাভাবিক কিছু ধরা পড়েনি বলে দাবি। কাজেই, রুট নম্বর ৩৭৫-এর শেষ বাসটির রহস্যের আজও কোনও সমাধান হয়নি।