সেরা ছবিগুলোর জন্যই অমর হয়ে থাকবেন চিন্ময় রায়, রইল তাঁর জীবনের কিছু স্মৃতি
Last Updated:
তপন সিংহের ছবির কথা বলতে গেলে 'গল্প হলেও সত্যি'র কথা না বললেই নয়। সেই ছবিতে রবি ঘোষ এই ছবির অন্যতম চরিত্র। তখন চিন্ময় রায় হলেন রোগা চেহারার পাড়ার রকে আড্ডা জমানোর মতো এক ছেলে। তাঁকে তপন সিংহ ডেকে ছিলেন কাজের লোকের চরিত্রের জন্য অডিশনে। তিনি তো গোবেচারা মুখ করে গিয়েছেন। সামনে সব তাবড় তাবড় অভিনেতা। তাঁদের সামনে থেকে দেখে চিন্ময় তো একেবারে ভেবলে গিয়েছেন। কিন্তু তিনি জানতেন এটাই সুযোগ। নিজের সবটুকু দিয়ে তিনি সেদিন অডিশন দিয়েছিলেন। জুটে গিয়েছিল চোরের রোল। সেই ছোট্ট রোল থেকেই লোকে তাঁকে চিনে নিয়েছিল। চিন্ময় রায় মানে শুধু টেনিদা নয়। তাঁর থেকেও অনেক বেশি কিছু। photo source collected
advertisement
এর পরই তিনি ১৯৬৮ সালে সুযোগ পান সত্যজিৎ রায়ের ছবি 'গুপী গাইন বাঘা বাইন'-এ। এই ছবি দেখেননি এমন বাঙালি খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। রবি ঘোষ, তপেন চট্টোপাধ্যায়, সন্তোষ দত্তর মতো অভিনেতাদের সঙ্গে জমিয়ে কাজ করেছিলেন চিন্ময় রায়। নিশ্চয় চরিত্রটা মনে করতে পারছেন না? তিনি ওই ছবিতে গুপ্তচরের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন। শুণ্ডির রাজাকে খবর দিতে এসেছিলেন তিনি। এসে বলেছিলেন, হাতি শালে হাতি নাই, ঘোড়া নাই, কিন্তু ক্ষেতে ফসল আছে, গাছে পাখি আছে। মনে আনন্দ আছে। এই ছবিতে ওইটুকু চরিত্র তাঁর। কিন্তু তবুও দাগ রেখে গিয়েছিলেন মনে। photo source collected
advertisement
দিনেন গুপ্তর ছবি 'বসন্ত বিলাপ'-এ তাঁর অভিনয় কালজয়ী। তাঁর অভিনয় ভোলার নয়। নায়িকার হাত ধরে পুকুর ধারে বসে প্রেম করছেন তিনি। হাত ধরে সেই বিখ্যাত সংলাপ বলছেন তিনি, 'এই শোনো, তুমি আমাকে বলো উত্তমকুমার, বলো না!' এমন সময় পুকুর ধারে এসে হাজির নায়িকার পিসিমা। আর যাবে কোথায়। হাত ছেড়ে সোজা পুকুরে ঝাঁপ। এই দৃশ্য আজও কালজয়ী। উত্তমকুমার না হলেও চিন্ময় রায় তাঁর নিজের অভিনয় দক্ষতায় পৌঁছে ছিলেন এক অনন্য জায়গায়। photo source collected
advertisement
advertisement
advertisement
'চারমূর্তি' ছবির টেনিদাকে নিয়ে তো কিছু বলারই নেই। মাছের মাথা খাওয়া থেকে শুরু করে, ঢপবাজিতে এই টেনিদাই ছিলেন সেরা। নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের 'টেনিদা'-কে যথাযথ ভাবে পর্দায় তুলে ধরেছিলেন চিন্ময় রায়। photo source collected 'ননীগোপালের বিয়ে' ছবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শোতে নামকরা শিল্পীদের না আনতে পেরে নিজেই দর্শকদের সামাল দিতে উঠে যান। তারপর রবি ঠাকুরকে নিয়ে যা বলেছিলেন তা দর্শক কোনও দিনই ভুলতে পারেননি। এমন অভিনয় কেবল তিনিই পারেন। photo source collected
advertisement
advertisement
রবিরাতে চলে গেলেন এই কালজয়ী শিল্পী। উনি শুধু ভাল কমিডিয়ান নন। ভাল অভিনেতাও বটে। উত্তমকুমারো তাঁর কাজের প্রশংসা করেছিলেন। বলেছিলেন, "ও হল মনের রাজা। মনের খেয়ালে অভিনয় করে। কখন যে ও কী করে দেবে কেউ বলতে পারে না। আর ওর সব কটা দৃশ্যই যেন স্বাভাবিক ছন্দে ভরা।" কিন্তু শেষ জীবনটা মোটেও ভাল কাটেনি এই অভিনেতার। একা থাকতেন গল্ফগ্রিনের ফ্লাটে। সেখানে তাঁকে দেখার কেউ ছিল না। ছেলে সব সময় বিদেশে। কাছের বন্ধু অরুনের সঙ্গে এক সঙ্গে থাকতেন তিনি। হঠাৎ করে সাংবাদিক বন্ধু ইহ জগত ছেড়ে চলে যান। তখন থেকেই মনের দিক থেকে আরও ভেঙে পড়েছিলেন তিনি। এই একাকিত্বই তাঁকে ধীরে ধীরে মানসিক ভাবে দূর্বল করে দিয়েছিল। শেষ জীবনটা হয়তো কাছের মানুষের সঙ্গই চাইছিলেন বারবার তিনি। তবে বাঙালি চিন্ময় রায়কে কোনও দিন ভুলতে পারবে না। তিনি বেঁচে থাকবেন বাঙালির মনে। তাঁর অভিনয়ে। photo source colected