প্রায় ২৫০টি ছবিতে চুটিয়ে অভিনয় করেছেন, অথচ রোজ লাগত ১৩ বোতল করে মদ ! আর এই পানাসক্তিই ডেকে এনেছিল মৃত্যুকে, জানেন কোন অভিনেতার কথা বলা হচ্ছে?
- Published by:Siddhartha Sarkar
- news18 bangla
Last Updated:
সিনেমা জগতে প্রতিভা অন্যতম জরুরি বিষয়। আর নিজের প্রতিভার বলে বলীয়ান হয়ে নায়ক হয়ে উঠেছিলেন কলাভবন মণি। ভক্তদের মধ্যে জনপ্রিয়তাও অর্জন করেছিলেন তিনি। কুন্নিসেরিতে কলাভবন মণির আসল নাম রমন মণি।
সিনেমা জগতে প্রতিভা অন্যতম জরুরি বিষয়। আর নিজের প্রতিভার বলে বলীয়ান হয়ে নায়ক হয়ে উঠেছিলেন কলাভবন মণি। ভক্তদের মধ্যে জনপ্রিয়তাও অর্জন করেছিলেন তিনি। কুন্নিসেরিতে কলাভবন মণির আসল নাম রমন মণি। কেরলের ত্রিশূরের কাছে চলাকুড়িতে জন্ম তাঁর। শৈশব থেকেই শিল্পের প্রতি ছিল গভীর অনুরাগ। ছোটবেলায় গান গাইতে ভালবাসেন। কিন্তু মিমিক্রিই তাঁর মনোযোগ আকর্ষণ করে নেয়।
advertisement
এরপর তিনি কলাভবন গ্রুপে যোগ দেন। যার জেরে তাঁর নাম হয়ে যায় কলাভবন মণি। আসলে কলাভবন গ্রুপ ছিল এমন একটি গোষ্ঠী, যাঁরা মঞ্চে পারফর্ম করত। আজকালকার প্রথম সারির মালয়ালম অভিনেতারা এই দল থেকেই এসেছেন। ১৯৯০-এর দশকে এই গ্রুপের জনপ্রিয়তা ছিল তুঙ্গে। আর এই গ্রুপের সুপারস্টার ছিলেন কলাভবন মণি। তিনি মিমিক্রি করতেন, গান গাইতেন এবং নাচও করতেন। যদিও গানগুলি ছবির সাউন্ডট্র্যাক ছিল না। তিনি নিজেই নিজের মতো সঙ্গীত রচনা করতেন এবং সুর দিতেন। আর সেই গানই মঞ্চে উঠে গাইতেন।
advertisement
এহেন প্রতিভা কি রুপোলি দুনিয়া থেকে দূরে থাকতে পারে? সিনে দুনিয়াও যেন দুই হাতে আলিঙ্গন করে নিয়েছিল কলাভবন মণিকে। যদিও তাঁর প্রথম ছবি মালয়ালম ছিল না। তামিল ছবি ‘ক্যাপ্টেন প্রভাকরণ’-এ জুনিয়র শিল্পী হিসেবে কাজ করেছিলেন তিনি। এরপরে ‘অক্ষরম’ ছবির হাত ধরে মালয়ালম ছবির দুনিয়ায় আসেন। একজন অটোচালক হিসেবে কেরিয়ার জীবন শুরু করেছিলেন। আর প্রথম ছবিতেই অটোচালকের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন।
advertisement
কলাভবন মণি ছিলেন একজন বহুমুখী অভিনেতা। যে কোনও চরিত্র সাবলীল ভাবে ফুটিয়ে তুলতে পারবেন। কমেডি থেকে শুরু করে দুর্ধর্ষ খলনায়ক এমনকী পার্শ্বচরিত্র সব ক্ষেত্রেই ছিল তাঁর অবাধ গতিবিধি। যার জেরে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে খ্যাতি লাভ করেন কলাভবন মণি। একের পর এক সুযোগ আসতে থাকে। একটা জায়গায় গিয়ে প্রথম সারির মালয়ালম সুপারস্টারদের পাশাপাশি অভিনয় শুরু করেছিলেন। মালয়ালম ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির ইতিহাসে তিনিই ছিলেন কেরলের প্রথম অভিনেতা, যিনি সেরা অভিনেতা হিসেবে জাতীয় পুরস্কার জিতেছিলেন।
advertisement
মালয়ালমের পাশাপাশি তামিল, তেলুগু এবং কন্নড় ছবিতে অভিনয় করেছিলেন কলাভবন। রজনী, কমল, বিজয়কান্ত, বিজয়, সূর্য, সিম্বু, বিক্রম, মাধবনের মতো প্রথম সারির তারকাদের সঙ্গে ‘জেমিনি’, ‘পুথিয়া গীতা’, ‘এন্থিরান’, ‘পাপনাশম’, ‘ভেল’, ‘কুথু’-র মতো তামিল ছবিতে অভিনয় করেছেন। ৩০টিরও বেশি তামিল ছবিতে তিনি কাজ করেছেন। আর সব মিলিয়ে তাঁর ঝুলিতে রয়েছে ২৫০টিরও বেশি ছবি।
advertisement
শুধু সিনেমা জগতের জন্যই নন, কলাভবন মণি নিজের সাহায্যকারী মনোভাবের জন্যও বিখ্যাত। নিজের জন্মস্থান চলাকুড়িতে প্রচুর ভাল ভাল কাজ করেছেন। এর পাশাপাশি, প্রত্যেক দিন অন্তত ২০ জন মানুষ তাঁর সঙ্গে দেখা করতে আসতেন। সকলের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টাও করতেন তিনি। এমনকী, নিজের অ্যাসিস্ট্যান্টের লিভারের চিকিৎসার জন্য ১০ লক্ষ টাকা দিতেও পিছপা হননি তিনি।
advertisement
এদিকে ২০১৬ সালের ৩ মার্চ চলাকুড়িতে নিজের খামার বাড়িতে অভিনেতাকে সংজ্ঞাহীন অবস্থায় পাওয়া যায়। রক্তবমি হচ্ছিল তাঁর। চিকিৎসার জন্য তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু সব আশায় জল ঢেলে সেদিনই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন তিনি। যদিও তাঁর মৃত্যু নিয়ে প্রচুর ধোঁয়াশা রয়েছে। অনেকেই বলেন যে, বিষ খাইয়ে তাঁকে হত্যা করা হয়েছে। যদিও তদন্তে জানা গিয়েছে যে, অতিরিক্ত মদ্যপানই তাঁর মৃত্যুর কারণ।
advertisement
কলাভবন মণির মৃত্যুর সাত বছর পর কলাভবনের মৃত্যুর মামলার তদন্তকারী আধিকারিক প্রকাশ করেন যে, প্রতিদিন ১২ থেকে ১৩ বোতল বিয়ার পান করার অভ্যাসই কলাভবন মণির মৃত্যু ডেকে এনেছিল। আসলে অভিনেতার লিভার নষ্ট হওয়ার পরেও তিনি অতিরিক্ত বিয়ার পান করার অভ্যাস ত্যাগই করেননি। এই প্রসঙ্গে আরও জানা গিয়েছে যে, নিজের লিভার নষ্ট হয়ে গিয়েছিল, কিন্তু রক্ত বমি হওয়া সত্ত্বেও তিনি বিয়ার পান করার অভ্যাস বন্ধ করেননি। তদন্তকারী আইপিএস অফিসার উন্নিরাজন বলেছেন যে, কলাভবন মণি আসলেই নিজের মৃত্যু চেয়েছিলেন।
advertisement
আরও দুঃখজনক বিষয় হল, ২০১৬ সালের ৬ মার্চ যখন কলাভবন মণির মৃত্যু হয়, সেই সময় তিনি ১২ বোতল বিয়ার পান করেছিলেন। আর ময়নাতদন্তে জানা গিয়েছিল যে, এতে মিথাইল অ্যালকোহল ছিল। আদালতে সিবিআই-এর দ্বারা দাখিল করা চার্জশিটেও একই তথ্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। আইপিএস অফিসারের মতে, একজন বিখ্যাত শিল্পী হওয়া সত্ত্বেও কলাভবন মণি মদ্যপানের অভ্যাসের মাধ্যমেই নিজের মৃত্যু ডেকে এনেছিলেন।