‘পবিত্র রিস্তা’ প্রথম নয়, রূপোলি পর্দায় সুশান্ত সিং রাজপুতের জার্নি শুরু আরও আগে..

২০১৩ সালে টেলিসিরিয়াল থেকে ‘কাই পো চে’ থেকে শুরু সুশান্ত সিং রাজপুতের বলিউডি উড়ান ৷ তাঁর আগে ‘পবিত্র রিস্তা’ তাঁকে জনপ্রিয়তার শীর্ষে নিয়ে গেলেও সুশান্ত সিং রাজপুতের রূপোলি পর্দার জার্নি শুরু আরও অনেক অনেক আগে ৷ সে গল্প জানতে হলে ফিরতে হবে ২০০৫ সালে ৷

পড়াশুনায় বরাবরই ক্লাসের প্রথম সারিতে ছিলেন সুশান্ত সিং রাজপুত ৷ তাঁর চোখধাঁধানো অ্যাকডেমিক রেকর্ড যেকোনও পড়ুয়ার কাছেই ঈর্ষণীয় ৷ দিল্লি কলেজ অফ ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের প্রবেশিকা পরীক্ষায় গোটা ভারতে সপ্তম স্থান অধিকার করার পর মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশুনার জন্য ভর্তি হন দিল্লি টেকনোলজিক্যাল ইউনিভার্সিটিতে ৷ পড়াশুনার সঙ্গে সঙ্গে নাচ, গান ও অভিনয় নিয়েও অসম্ভব প্যাশনেট ছিলেন সুশান্ত ৷ রাজপুতের এহেন ট্যালেন্ট দেখেই বন্ধুরাও তাকে লাগাতার উৎসাহ দিতে লাগলেন শোবিজে নিজের কেরিয়ারের চেষ্টা করে দেখার জন্য ৷

বন্ধুদের উৎসাহেই ভর্তি হয়েছিলেন শামক দাভরের ডান্স ক্লাসে ৷ অভিনয়ের তালিম নিতে নিতে কলেজে পড়াশুনার পাশাপাশি যোগ দেন ব্যারি জোন্সের ড্রামা ক্লাসেও ৷ আস্তে আস্তে পড়াশুনা ছেড়ে নিয়মিত থিয়েটার, স্টেজ শোয়ের দিকে ঝুঁকতে থাকেন সুশান্ত ৷ শামক দাভরের টিমের অংশ হিসেবে ২০০৬ সালে ৫১তম ফিল্ম ফেয়ারে ব্যাকগ্রাউন্ড ডান্সার হিসাবে পারফর্ম করেন সুশান্ত ৷ পারফর্ম করেন অস্ট্রেলিয়ায় কমনওয়েলথ গেমসের ওপেনিং সেরিমনিতেও ৷

এরপরই ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ফাইনাল পরীক্ষা না দিয়েই পড়াশুনার পার্ট চুকিয়ে চলে আসেন মুম্বইয়ে ৷ নাদিরা বব্বরের থিয়েটার গ্রুপ ‘একজুটে’-তে কাজ শুরু করেন সঙ্গে চলতে থাকে অডিশন ৷ প্রায় আড়াই বছর বাদে হাতে আসে গোল্ডেন চান্স ৷ নেসলে মাঞ্চ বিজ্ঞাপনে কাজ করেন সুশান্ত ৷ যা তাকে টিভিতে পরিচিত মুখ করে তোলে ৷

সালটা ২০০৮, চুটিয়ে অভিনয় করছিলেন একজুট- দলের এক নাটকে ৷ শান্ত, সৌম্য, সুদর্শন চেহারায় বাড়তি আকর্ষণ বাড়িয়েছিল অনাবিল মন ভাল করা একটা হাসি ৷ একতা কাপুরের বালাজি ফিল্মসের কাস্টিং ডিরেক্টরের নজর রাজপুতকে চিনতে ভুল করেনি ৷

সুশান্ত সিং রাজপুত সুযোগ পান তৎকালীন জনপ্রিয় ডেলিসোপ ‘কিস দেশ মে হ্যায় মেরা দিল ৷’ নায়কের এক ভাই হিসেবে সিরিয়ালে পরিচয় করানো হয় সুশান্তের চরিত্র প্রীত জুনেজাকে ৷ শুরুতে চরিত্রটি ছোট হলেও আলাদা করে দৃষ্টি কাড়েন সুশান্ত ৷ সেই কারণেই প্রথমে চরিত্রটিকে সরিয়ে দেওয়া হলেও পরে ফিরিয়ে আনা হয় ৷

ততদিনে অভিনয় ও আকর্ষণীয় পার্সোনালিটির কারণে একতা কাপুরের প্রিয় অভিনেতাদের তালিকায় নিজের জায়গা করে নিয়েছেন সুশান্ত ৷ জুন ২০০৯, একতা লঞ্চ করেন জনপ্রিয় শো ‘পবিত্র রিস্তা’ ৷ অঙ্কিতা লোখন্ডের বিপরীতে সুশান্ত সিং রাজপুত ৷ এটা ছিল সুশান্তের অন্যতম মাস্টারস্ট্রোক ৷ আগের টেলি সিরিয়াল থেকে যে জনপ্রিয়তা তিনি পেয়েছিলেন তা শিখরে নিয়ে যায় এই সিরিয়াল পবিত্র রিস্তা ‘মানব’ ওরফে সুশান্ত সিং রাজপুত তখন টিনএজ তরুণী থেকে মধ্যবয়সীর হার্টথ্রব ৷ মানব-অর্চনার জুটি তখন ঘরে ঘরে চর্চিত ৷

বলিউডের দিকে সুশান্তকে আরও একধাপ এগিয়ে দেয় ‘ঝলক দিখলা যা ২’ ৷ তিনি যে শুধু একজন দক্ষ অভিনেতাই নন, কমপ্লিট হিরো প্যাকেজ তা প্রমাণ করার সুযোগ করে দেয় এই শো ৷ তাঁর নাচের ফ্যান হয়ে যান জাজ মাধুরীও ৷ বলা বাহুল্য একের পর এক চোখ ধাঁধানো পারফর্মমেন্সে সেই সিজনে শোয়ের ট্রফি ছিনিয়ে নেন সুশান্তই ৷

এরপরটুকু তো ঠিক সিনেমায় যেমন হয় ৷ টেলিজগতের জনপ্রিয় তারকার বড়পর্দায় আগমন ৷ বলিউডে ‘কাই পো চে’ দিয়ে অভিষেকের সঙ্গে সঙ্গেই জীবনের প্রতিটাক্ষেত্রের মতো সাফল্য এখানেও এসে ধরা দিয়েছে সুশান্তের হাতে ৷ তাঁর বলিউডে প্রথম পদক্ষেপের সঙ্গে বাদশা শাহরুখ খানের অনেক মিল থাকলেও রাজপুতের কেরিয়ার ছিল একদম অন্যধাঁচে গড়া ৷ পড়াশুনায় বরাবরই ক্লাসের প্রথম সারিতে ছিলেন সুশান্ত সিং রাজপুত ৷ সেখান থেকে তাঁর শোবিজে আসা বলিউডে নিজের সুযোগ করে নেওয়ার থেকে হতে পারে ধোনির মতো একটা সিনেমা ৷