১৬ বছরে ৪ ছবি, পেয়েছে বলিউডের কাল্ট ক্লাসিকের তকমা, জিতেছে জাতীয় পুরস্কার, আপনারও সবকটা দেখা তো?
- Published by:Siddhartha Sarkar
Last Updated:
Bollywood Cult Movies : পুজোর আবহে নিজের মতো সময় কাটানো হোক বা বন্ধুরা মিলে বাড়ি বসে একটা অর্থপূর্ণ কিছু দেখা- অনায়াসে এই ৪ ছবি তালিকায় রাখা যায়। সংগ্রাম, ন্যায় আর বিজয়- দুর্গাপুজোর মতো এই ৪ ছবিরও থিম সেটাই!
ছবি দেখা নিয়ে সচেতনতা আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। প্রযুক্তির যুগে বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম এমন অনেক ভাল ভাল ছবি দেখার সুযোগ করে দিচ্ছে, যা এক সময়ে সুলভ ছিল না। পুজোর আবহে নিজের মতো সময় কাটানো হোক বা বন্ধুরা মিলে বাড়ি বসে একটা অর্থপূর্ণ কিছু দেখা- অনায়াসে এই ৪ ছবি তালিকায় রাখা যায়। সংগ্রাম, ন্যায় আর বিজয়- দুর্গাপুজোর মতো এই ৪ ছবিরও থিম সেটাই! ছবিগুলোর তৈরির সময়কালে একটা মজার অঙ্ক কাকতালীয় ভাবে এসে পড়েছে। ১৬ বছরের ব্যবধান দেখা যাচ্ছে প্রথম থেকে শেষ ছবিটার মধ্যে। ছবিগুলো হল সলিম লংগড়ে পর মত রো (১৯৮৯), এক ডকটর কি মৌত (১৯৯০), মকবুল (২০০৩) এবং সেহর (২০০৫)। ১৯৮৯ থেকে ২০০৫- ১৬ বছরই হয়!
advertisement
প্রথমেই ১৯৮৯ সালের ‘সলিম লংগড়ে পর মত রো’ ছবিটার কথায় আসা যাক। এই ছবিতে পবন মালহোত্রা মুখ্য ভূমিকায় ছিলেন। যদিও নাসিরুদ্দিন শাহকে মাথায় রেখে ছবিটি লিখেছিলেন সঈদ আখতার মির্জা। পরে এই ভূমিকায় অভিনয় করেন পবন মালহোত্রা। মালহোত্রা সেই সময়ে থাকতেন ডোংরিতে, ছবির জগতে প্রোডাকশন ম্যানেজমেন্টে টিমে কাজ করতেন। প্রধান অভিনেতা হিসেবে এটিই ছিল তাঁর প্রথম ছবি, এই তথ্য অভিনেতা পরে একটি সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন। ছবিটিতে সলিম নামে এক যুবকের গল্প বলা হয়েছে, যে দারিদ্র্যের কারণে অপরাধ জগতে প্রবেশ করে। সে তোলাবাজিতে জড়িয়ে পড়ে। এর পর সে শিক্ষার গুরুত্ব বুঝতে পারে এবং পৃথিবীকে বোঝে। সে নতুন করে জীবন শুরু করে, কিন্তু তাকে হত্যা করা হয়। এই ছবিতে দর্শকরা সলিমের জীবন ও মৃত্যুকে খুব কাছ থেকে দেখেছেন।
advertisement
এটি অসাধারণ সততার সঙ্গে সামাজিক অবিচারকে চিত্রিত করেছে। এটি কীভাবে পক্ষপাতদুষ্টতা সমাজব্যবস্থা পরিচালনা করে সেই কঠোর বাস্তবতাও তুলে ধরে। দারিদ্র্য একজন ব্যক্তির উপর কী নিদারুণ প্রভাব ফেলতে পারে সেই বিষয় এই চলচ্চিত্রটি অনন্যভাবে তুলে ধরেছে। ছবিটি ইউটিউবে পাওয়া যাচ্ছে। যে কোনও সময়ে দেখে নেওয়া যায়। ১৯৯০ সালে মুক্তি পায় তপন সিংহের এক ডকটর কি মৌত। ছবির গল্প একটি সত্য ঘটনা থেকে অনুপ্রাণিত। সেই সত্য ঘটনা অবলম্বনে অভিমন্যু নামে এক উপন্যাস লিখেছিলেন রমাপদ চৌধুরী। সেই বই তপন সিংহের ছবির অবলম্বন হয়ে দাঁড়ায়। ডা. সুভাষ মুখোপাধ্যায় কুষ্ঠ রোগের টিকা নিয়ে গবেষণা করছিলেন।
advertisement
এই গবেষণার সময় তিনি যে কষ্ট ও অসুবিধার মুখোমুখি হন তা ছবিটিতে সুন্দরভাবে চিত্রিত করা হয়েছে। পঙ্কজ কাপুর প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন, ডা. সুভাষ মুখোপাধ্যায়কে রুপোলি পর্দায় জীবন্ত করে তুলেছিলেন। গল্পটি টিকা গবেষণার চ্যালেঞ্জ, সামাজিক দায়িত্ব, পারিবারিক টানাপোড়েন, সরকারি ব্যবস্থার অদক্ষতা এবং এর মধ্যে প্রচলিত দুর্নীতি তুলে ধরে। ছবিটির গল্পে দেখানো হয়েছে যে কীভাবে একজন ডাক্তার, যিনি দেশ ও সমাজের জন্য কিছু করার জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, তাঁর বন্ধুবান্ধব, সমাজ এবং সম্পর্ককে ঝুঁকির মুখে ফেলেন, যার ফলে সরকারি কর্মকর্তারা তাঁকে মানসিকভাবে পঙ্গু করে দেন এবং প্রচলিত ব্যবস্থা তাঁকে ক্রমাগত নিরুৎসাহিত করে। এই ছবিটি তার সময়ের চেয়ে অনেক এগিয়ে ছিল। ইরফান খানও এই ছবিতে অভিনয় করেছেন। ছবিটি দুটি জাতীয় পুরষ্কার এবং বেশ কয়েকটি ফিল্ম ফেয়ার পুরষ্কার জিতেছে। ছবিটি ইউটিউবে পাওয়া যাচ্ছে।
advertisement
৩০ জানুয়ারি, ২০০৩ সালে মুক্তি পেয়েছিল মকবুল, বলিউডের সেরা ছবিগুলির মধ্যে একটি বলাই যায়। চিত্রনাট্য, সংলাপ এবং অভিনয় সব কিছুই নিখুঁত ছিল। যদিও ছবিটি বক্স অফিসে গড়পড়তা সাফল্য পেয়েছিল, তবে এখন এটি একটি কাল্ট ক্লাসিক হিসেবে বিবেচিত হয়। ছবিটিতে পঙ্কজ কাপুর, নাসিরুদ্দিন শাহ, ইরফান খান, ওম পুরি, পীযূষ মিশ্র এবং টাবু মুখ্য ভূমিকায় অভিনয় করেছেন। গল্প লিখেছিলেন পরিচালক বিশাল ভরদ্বাজের সঙ্গে যুগ্মভাবে আব্বাস টায়ারওয়ালা- তিনি ছবিতে একটি ছোট চরিত্রে অভিনয়ও করেছিলেন। মকবুল ইরফান খানকে বড় পর্দায় রাতারাতি পরিচিতি এনে দিয়েছিল। এই ছবিতে শেক্সপিয়রের ম্যাকবেথের গল্পটিই মুম্বইয়ের আন্ডারওয়ার্ল্ডের পটভূমিতে দেখানো হয়েছে। ইরফান মিয়াঁ মকবুলের চরিত্রে অভিনয় করেছেন, যিনি আন্ডারওয়ার্ল্ড ডন জাহাঙ্গীরের ডান হাত, যিনি আব্বাজি নামে পরিচিত, এই চরিত্রে অভিনয় করেন পঙ্কজ কাপুর। আব্বাজির বান্ধবী নিম্মি মিয়াঁ মকবুলকে ডন হওয়ার লক্ষ্যে আব্বাজিকে হত্যা করতে প্ররোচিত করে। পঙ্কজ কাপুরের প্রথমে মকবুলে কাকা চরিত্রে অভিনয় করার কথা ছিল, কিন্তু পরে তাঁর ভূমিকা পরিবর্তন করা হয়। আবার, ইরফান খানের জায়গায় নেওয়ার কথা ছিল কে কে মেননকে, শেষ পর্যন্ত আর তাঁর ছবিটা করা হয়নি।
advertisement
২০০৫ সালে কবীর কৌশিক পরিচালিত একটি শক্তিশালী ছবি মুক্তি পায়। গল্পটি উত্তরপ্রদেশের গোরখপুরের একজন কুখ্যাত গ্যাংস্টার শ্রীপ্রকাশ শুক্লার জীবন থেকে নেওয়া। ছবিটির নাম সেহর। ছবিটিতে আরশাদ ওয়ার্সি, পঙ্কজ কাপুর, মহিমা চৌধুরী, সুশান্ত সিং এবং রাজেন্দ্র গুপ্তের মতো প্রবীণ অভিনেতারা অভিনয় করেছিলেন। সেহর উত্তর ভারত জুড়ে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে, উত্তরপ্রদেশ, বিহার এবং ঝাড়খণ্ডের সকল বয়সের মানুষের কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ছবিটি মুক্তির পর ২০ বছর পার হয়ে গিয়েছে, কিন্তু জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়েনি। ছবিতে, আরশাদ ওয়ার্সি লখনউয়ের তৎকালীন এসএসপি অরুণ কুমারের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন।
advertisement
গোরখপুরের মামখোর গ্রামে জন্ম হয় গ্যাংস্টার শ্রীপ্রকাশ শুক্লার, বাবা রামস্বরূপ শুক্লা বিমানবাহিনীতে চাকরি করতেন। তিনি ব্যাঙ্ককে পোস্টিং পেয়েছিলেন। অবসর গ্রহণের পর তিনি গোরখপুরে ঠিকাদারি কাজ শুরু করেন। তিনি একজন এ-গ্রেড ঠিকাদার ছিলেন। মামখোর গ্রামবাসীরা অবশ্য ছবিতে দেখানো বোনের শ্লীলতাহানির গল্প বিশ্বাস করেন না। গ্রামবাসীরা বলছেন যে শ্রীপ্রকাশ শুক্লার প্রথম খুন ছিল পার্শ্ববর্তী গ্রামের ছাপড়ার রাকেশ তিওয়ারি। এই খুনের উদ্দেশ্য ছিল অপমানের প্রতিশোধ নেওয়া। আসলে, রাকেশ আগে তাঁকে আক্রমণ করেছিলেন। শ্রীপ্রকাশ শুক্লার পরিবারকে ধনী হিসেবে বিবেচনা করা হত। সে অশোক সিং নামে টাকা আদায় করত।
