তেল থেকে অস্ত্রচুক্তি, ভারত-রাশিয়া সম্পর্ক উন্নত করার লক্ষ্যে একাধিক পরিকল্পনা, অ্যাজেন্ডায় কী কী রয়েছে? দেখুন!

ইতিমধ্যেই চিনের সঙ্গে কূটনৈতিক বৈঠক সম্পন্ন হয়ে গিয়েছে। বাকি ছিল রাশিয়া। সেই দীর্ঘ প্রতীক্ষিত অপেক্ষার অবসান। রাশিয়ার রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিন দু'দিনের ভারত সফরে নয়াদিল্লিতে পৌঁছে গিয়েছেন বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায়। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি পালাম বিমানবন্দরে তাঁকে স্বাগত জানাতে প্রোটোকল ভেঙেই হাজির হয়েছিলেন নিজে।

রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের অবতরণের পর দুই রাষ্ট্রনেতা নৈশভোজের জন্য প্রধানমন্ত্রী মোদির বাসভবনের দিকে রওনা হন একযোগে। নৈশভোজের টেবিলে একান্তে কথোপকথন চলে রাত প্রায় সাড়ে দশটা পর্যন্ত। বৈঠকের পর রাতের বিশ্রামের জন্য হোটেলে চলে যান পুতিন। দুই দেশের আনুষ্ঠানিক কর্মসূচি শুরু হয় শুক্রবার ভোরে রাষ্ট্রপতি ভবনে ভারতের রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাতের মাধ্যমে।

সেখান থেকে মহাত্মা গান্ধির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে রাজঘাটে যেতে পারেন পুতিন। পরের গন্তব্য হায়দরাবাদ হাউস, যেখানে বেশিরভাগ কূটনৈতিক আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে। দুপুর ২টোর দিকে হায়দরাবাদ হাউজে রাশিয়ার রাষ্ট্রপতি পুতিনের জন্য এক মধ্যাহ্নভোজের আয়োজনও করবেন প্রধানমন্ত্রী মোদি।

মন্ত্রক সূত্রে জানানো হয়েছে, বিকেলের বাকি সময় দুই প্রতিনিধিদলের মধ্যে পরিকাঠামোগত বৈঠকের জন্য সংরক্ষিত রাখা হয়েছে। উভয় পক্ষ দুই দেশের চলতি সম্পর্ক ও সহযোগিতার পরিস্থিতি পর্যালোচনা করবে এবং সেক্ষেত্রে সম্ভাব্য নতুন ক্ষেত্রগুলি নিয়ে আলোচনা করবে।

হায়দরাবাদ হাউজের মূল অ্যাজেন্ডা হল অর্থনৈতিক পুনর্গঠন, কারণ উভয় নেতাই তাঁদের "বিশেষ এবং সুবিধাপ্রাপ্ত কৌশলগত দিকগুলি" আরও গভীর করার চেষ্টা করছেন এবং একই সঙ্গে বহিরাগত নিষেধাজ্ঞা এবং ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতা থেকে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যকে দূরে রাখতে চাইছেন।

ভারতের মূল লক্ষ্য হল রাশিয়ার তেল আমদানি বৃদ্ধির ফলে সৃষ্ট উল্লেখযোগ্য বাণিজ্য ভারসাম্যহীনতা মোকাবিলা করা এবং এই শীর্ষ সম্মেলন ভারতীয় রফতানির ব্যাপক সম্প্রসারণের ভিত্তি স্থাপন করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

কূটনৈতিক মহলের ইঙ্গিত, দুই রাষ্ট্রনেতা ২০৩০ সাল পর্যন্ত রাশিয়া-ভারত অর্থনৈতিক সহযোগিতার কৌশলগত ক্ষেত্রগুলির উন্নয়নের জন্য একটি দীর্ঘমেয়াদী কর্মসূচি ঘোষণা করতে চলেছেন, যার লক্ষ্য দশকের শেষের দিকে ১০০ বিলিয়ন ডলারের বিপুল অঙ্কের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ।

গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, বিশেষ করে ওষুধ, অটোমোবাইল, কৃষি এবং সামুদ্রিক পণ্যের মতো ক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যকে উন্নীত করা। রাশিয়ার সঙ্গে আসা ব্যবসায়িক প্রতিনিধিদল বর্তমান বাণিজ্য ঘাটতি নিয়ে নয়াদিল্লির উদ্বেগ মোকাবিলা করার ক্ষেত্রে মস্কোর অভিপ্রায় এবং সহায়তার ইঙ্গিত দেয়।

দুই দেশের মধ্যে জাহাজ চলাচল, স্বাস্থ্যসেবা, সার এবং সংযোগের ক্ষেত্রে অসংখ্য আন্তঃসরকারি চুক্তি এবং বাণিজ্যিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার সম্ভাবনা এই সফরে। ভারত এবং রাশিয়ার নেতৃত্বাধীন ইউরেশিয়ান অর্থনৈতিক ইউনিয়নের (EAEU) মধ্যে একটি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (FTA) নিয়ে আলোচনাও এগিয়ে যেতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে, যা ইউরেশিয়ান বাণিজ্য রুটগুলিকে মৌলিকভাবে পুনর্গঠন করতে পারে বলেই আশা করা হচ্ছে।