চাকরি মানেই পরের গোলামি। তাই চাকরি ছেড়ে বা চাকরির পাশাপাশি নিজের স্বাধীন একটা ব্যবসা করে ভবিষ্যৎ সুনিশ্চিত করতে অনেকেই চান। কিন্তু সেখানেই বাধা হয়ে দাঁড়ায় পুঁজির চিন্তা। তবে কেমন হয় যদি কম পুঁজিতেই লাভবান হওয়ার সুযোগ বা আইডিয়া পাওয়া যায়? আসলে তার জন্য প্রয়োজন দক্ষতা, উদ্ভাবনী আইডিয়া, সৃজনশক্তি আর লেগে থাকার ধৈর্য। ৫ হাজার টাকায় ব্যবসা শুরু করতে হলে প্রথমেই চিহ্নিত করতে হবে আপনার আগ্রহ ও দক্ষতার ক্ষেত্র। যেহেতু এই সব ব্যবসায় বিনিয়োগ কম তাই বাস্তবে আপনি বিক্রি করবেন আপনার দক্ষতা আর শ্রম। প্রতীকী ছবি।
১. অনলাইন শিক্ষকতা: অনলাইনে আপনার পছন্দের বিষয়টি শিখিয়ে ঘরে বসেই ভাল রকমের আয় করা সম্ভব। বিষয়টি হতে পারে পড়াশোনা, বাদ্যযন্ত্র বা ভাষা শিক্ষা। আপনার দক্ষতা ও আগ্রহের ভিত্তিতে নির্ধারণ করুন বিষয়। নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেল খুলে বিনা বিনিয়োগেই আয় করতে পারবেন। রয়েছে অনলাইন শিক্ষকতার বিভিন্ন পোর্টাল, ও এডুকেশনাল সেন্টার যেখানে নাম নথিভুক্ত করে সহজেই শুরু করতে পারবেন শিক্ষকতা। প্রতীকী ছবি।
বিভিন্ন এডুকেশনাল প্ল্যাটফর্মে কোর্স আপলোড করেও শুরু করতে পারেন আপনার ব্যবসা। অঙ্ক, বিজ্ঞান, ভাষা শিক্ষার পাশাপাশিই আঁকা, প্রোগ্রামিং, বাদ্যযন্ত্র বাজানো, মার্কেটিং, ফটোগ্রাফি, ব্যবসা ইত্যাদি নানা বিষয়ে কোর্স আপলোড করার সুযোগ রয়েছে এই ধরণের প্ল্যাটফর্মে। টেক্সট, ভিডিও, অডিও বা প্রেজেন্টেশনের আকারে আপলোড করতে পারেন কোর্স। প্রতীকী ছবি।
২. খাবারের হোম ডেলিভারি: বর্তমান ব্যস্ততার যুগে বাড়িতে রোজ রান্না করার সুযোগ হয় না অনেকেরই, আবার প্রতিদিন হোটেলের খাবারও খেতে চান না বেশিরভাগ। এই চাহিদা মেটাতেই শুরু হয়েছিল খাবারের হোম ডেলিভারির ব্যবসা। নিজের বাড়িতে রান্না করে পৌঁছে দিন বাড়ি বাড়ি, কাঙ্খিত সময়ে সুস্বাদু খাবার দিতে পারলে ব্যবসার অভাব হবে না। প্রতীকী ছবি।
কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন অঞ্চলে ব্যবসার সুযোগ বেশি। শহরের বাইরে থেকে পড়তে আসা ছাত্রছাত্রীরা অনেকেই রোজকার রান্না করতে চান না, সেক্ষেত্রে তাঁরা নির্ভর করেন হোম ডেলিভারির ওপর। এছাড়া অনেক ছোট পরিবারও রোজকার খাবারের জন্য হোম ডেলিভারির খাবারের ওপরই নির্ভর করেন। স্বল্প বিনিয়োগে ৫ থেকে ১০ হাজার টাকায় শুরু করুন এই ব্যবসা। প্রতীকী ছবি।
৩. অনলাইন বেকারি: কেক, কুকিস্ বানাতে ভালবাসেন? আত্মীয়-বন্ধুদের জন্মদিন-অ্যানিভারসারিতে আপনার বানানো কেকের বিশাল চাহিদা? তাহলে এই কাজটিও হয়ে উঠতে পারে আপনার নতুন ব্যবসার সুপারহিট আইডিয়া। ওভেন-ফ্রেশ বেকারি আইটেমের চাহিদা প্রচুর, আর তা যদি আপনি একেবারে ক্রেতার ঘরে পৌঁছে দিতে পারেন তাহলে তো কথাই নেই। নিত্যনতুন রেসিপি চেষ্টা করুন, তৈরি করুন আপনার স্পেসালিটি। ১০ হাজার টাকার মধ্যেই রয়েছে এই ব্যবসাটিও। শুরুতে ঘরের ওভেনেই কেক-কুকিস্ বানিয়ে অনলাইনে বিক্রি করতে পারেন। প্রতীকী ছবি।
৪. ফলের রসের কিয়স্ক: প্রথমেই বেছে নিতে হবে জায়গা। এমন জায়গায় কিয়স্ক করতে হবে যাতে সহজেই চোখে পড়ে। কোনও বাজার বা মল সংলগ্ন এলাকা হলে ভালো। অথবা আসে পাশে অফিস, স্কুল, কলেজ থাকলেও বিক্রি হওয়ার সুযোগ বেশি। ওই জায়গায় কিয়স্ক বসানোর অনুমতি পত্র যোগাড় করতে হবে, ভাড়া নিতে হবে জায়গা। এর পর দরকার কাঁচামাল আর ফলের রস তৈরির যন্ত্র। গোটাটাই ১০ হাজার টাকার কমেই করে ফেলা সম্ভব। প্রতীকী ছবি।
৫. ট্রাভেল এজেন্সি: অল্প পুঁজিতে ব্যবসা শুরু করতে হলে বাসের টিকিট বুকিংয়ের ব্যবসার কথা ভাবতে পারেন। ১০ হাজার টাকায় ব্যবসা শুরু করতে পারবেন। স্বল্প মূলধনে ব্যবসা করতে চাইলে সব থেকে সহজ উপায় হল হোস্ট এজেন্সির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হওয়া। প্রাথমিক বিনিয়োগের পরিমাণ নির্ভর করে হোস্ট এজেন্সির উপর কিন্তু তা ১০ হাজার টাকার মধ্যে রাখা সম্ভব। প্রতীকী ছবি।
৬. ট্যুর গাইড: বেড়াতে যেতে ভালবাসেন বেশিরভাগ মানুষই। আর বাঙালির তো পায়ের তলায় সর্ষে। যার জন্য তারা অনেক সময়েই নির্ভর করে ট্যুর গাইডের ওপর। ফ্লাইট, ট্রেনের টিকিট বুকিং, হোটেল বুকিং থেকে শুরু করে সম্পূর্ণ ট্যুরটি প্ল্যান করা পুরোটার দায়িত্ব আপনার। অফিস, স্কুল বা কলেজের ট্যুর করাতে পারলে নিয়মিত ব্যবসা পাওয়া সম্ভব। প্রতীকী ছবি।
৭. কাস্টমাইজড গয়না তৈরি: নতুন ধরণের গয়না তৈরি করুন, অভিনবত্ব আনুন গয়নার ডিজাইন, স্টাইল আর উপকরণে। অনলাইনে ব্যবসা করুন। ৫ হাজার টাকায় এই ব্যবসা শুরু করতে পারবেন। এই ধরণের গয়না তৈরির উপকরণ সহজেই পাওয়া যায় এবং সস্তায়। কলকাতার বিভিন্ন হোলসেল বাজারে মিলবে এগুলি। পছন্দ মতো উপকরণ সংগ্রহ করে বাড়িতে বসে সহজেই বানিয়ে ফেলুন গয়না। প্রতীকী ছবি।
৯. দর্জির দোকান: ১০ হাজার টাকায় ব্যবসা শুরু করতে হলে ভাবতে পারেন দর্জির দোকানের কথা। তবে এক্ষেত্রে আপনার অবশ্যই থাকতে হবে উপযুক্ত দক্ষতা ও সৃজনশীলতা। নিজের বাড়ি থেকেও এই ব্যবসা করতে পারেন। ক্রেতার বাড়ি গিয়ে ডিজাইন আর মাপ নিয়ে এসে বাড়িতে বসে বানিয়ে পৌঁছে দিয়ে আসুন ক্রেতার বাড়িতে। অনলাইনে বহু নতুন নতুন অভিনব ডিজাইন পাওয়া যায়, সেখান থেকে নিজের পছন্দ মতো ক্যাটালগ তৈরি করে নিন। প্রতীকী ছবি।
১০. বিউটিশিয়ান: উপযুক্ত দক্ষতা ও প্রশিক্ষণ থাকলে অল্প পুঁজিতে এই ব্যবসা করা সম্ভব। প্রথমেই কিনে ফেলুন প্রাথমিক পরিষেবা দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ। বাড়িতে গিয়ে ফেসিয়াল, পেডিকিওর, ম্যানিকিওর, অয়েল ম্যাসাজ বা ওয়্যাক্সিংয়ের মতো পরিষেবা দিন ক্রেতাকে। অনেকে বিউটি পার্লারে না গিয়ে বাড়িতেই এই সমস্ত পরিষেবা পেতে পছন্দ করেন। পরিষেবার মান ভাল হলে লোক মুখেই প্রচার হবে। তৈরি করতে পারেন আপনার ওয়েবসাইটও। ১০ হাজার টাকায় ব্যবসা শুরু করতে পারবেন। প্রতীকী ছবি।
১১. মেকআপ আর্টিস্ট: আপনি যদি সাজাতে ভালবাসেন, যদি থাকে উপযুক্ত প্রশিক্ষণ, তাহলে খুব সহজেই অল্প পুঁজিতে লাভজনক ব্যবসা করা সম্ভব। কনে সাজানো থেকে পার্টি মেকআপ অথবা নাচ বা অন্যান্য অনুষ্ঠান, ডাক পেতে পারেন বিভিন্ন জায়গা থেকে। এক্ষেত্রেও একটি ওয়েবসাইট থাকলে ক্রেতার কাছে পৌঁছনো সহজ হবে। প্রতীকী ছবি।
১২. নাচ, গান বা আঁকার স্কুল: আপনার যদি এর মধ্যে কোনও একটি বিশেষ জ্ঞান থাকলে সেই জ্ঞান ও দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে প্রায় বিনিয়োগ ছাড়াই আয় করতে পারবেন। আপনার বাড়িতেই এই স্কুল খুলতে পারেন, বা ভাড়া করতে পারেন কোনও ঘর। ছাত্রছাত্রীদের বাড়ি গিয়েও শেখাতে পারেন গান, নাচ বা আঁকা। এই ব্যবসার প্রচার মূলতঃ হয় লোকমুখে। তাই আপনি যদি ছাত্রছাত্রীদের খুশি করতে পারেন তাহলে তাদের থেকে শুনেই নতুন ছাত্রছাত্রী আসবে। প্রতীকী ছবি।
১৩. বিদেশী ভাষা শিক্ষা: আপনার যদি কোনও বিদেশী ভাষা জানা থাকে, তাহলে সেই দক্ষতা ব্যবহার করে সহজেই লাভজনক ব্যবসা করতে পারবেন। ছোট থেকে বয়স্ক, বিভিন্ন বয়সের ছাত্রছাত্রী পাওয়া সম্ভব। বিনা বিনিয়োগে আয় করতে পারবেন এই ব্যবসায়। তবে এই ব্যবসা করতে সংশ্লিষ্ট ভাষায় আপনাকে যথেষ্ট দক্ষ হতে হবে নিশ্চিতভাবেই, হতে হবে যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী ও ধৈর্যশীল। প্রতীকী ছবি।
১৪. ফ্রিল্যান্স কন্টেন্ট রাইটিং: ইংরেজিভাষায় যথেষ্ট দক্ষতা থাকলে কন্টেন্ট রাইটিংয়ের কাজ পাওয়া সহজ। ঘরে বসে অনলাইনে ব্যবসা করে আয়ও হবে ভালই। বিভিন্ন ফ্রিল্যান্স সাইটের মাধ্যমে এই কাজ পাওয়া যেতে পারে। ইদানিং আঞ্চলিক ভাষায়ও কাজের সুযোগ তৈরি হচ্ছে। এই লেখার নিজস্ব কিছু কৌশল রয়েছে, যেমন সার্চ ইঞ্জিনে যাতে আপনার লেখা ওপরের দিকে স্থান পায় তার জন্য জানতে হয় সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশনের কৌশল। তবে চর্চা করলে রপ্ত করে নেওয়া কঠিন নয় এইধরণের কাজগুলি। প্রায় বিনা বিনিয়োগে ঘরে বসে আয় করতে পারবেন চমৎকার এই ব্যবসায়। প্রতীকী ছবি।
১৫. ইউটিউব চ্যানেল: ঘরে বসেই আয় করার আরও একটি সহজ উপায় ইউটিউব চ্যানেল। শিক্ষামূলক থেকে রান্না শেখানো, লাইফ হ্যাকস্ থেকে বেড়ানো, বিষয় হতে পারে যে কোনও। চ্যানেলের ফলোয়ার বাড়াতে নিয়মিত ভিডিও আপলোড করতে হবে। স্মার্টফোনে ভিডিও তুলেও আপলোড করতে পারেন চ্যানেলে। তবে শব্দ ও ছবির গুণমান ভাল হওয়া জরুরি। ভিডিওর যথেষ্ট ভিয়্যু হলে বিজ্ঞাপন বাবদ টাকা পাবেন। প্রতীকী ছবি।