রবি ঠাকুরের নতুন বৌঠান

Last Updated:

রবি ঠাকুরের নতুন বৌঠান

#কলকাতা: একদিন চতুর্দোলায় চড়ে একটি ছোট্ট মেয়ে 'গোধূলি লগ্নের সিঁদুরি রঙে'-রাঙা চেলি পরে প্রবেশ করলেন ঠাকুরবাড়িতে। তাঁর কাঁচা শ্যামলা হাতে সরু সোনার চুড়ি, 'গলায় মোতির মালা সোনার চরণচক্র পায়ে।'
বাড়ির ছোট্ট ছেলেটির হঠাৎ মনে হল, এতদিন যে রাজার বাড়ি খুঁজে খুঁজে সে হয়রাণ হয়েছে, খুঁজে পায়নি, সেই বাড়িটিরই বুঝি খবর নিয়ে এল এই রূপকথার রাজকন্যে, মাত্র আটবছরের তাঁর নতুন বৌঠান, কাদম্বরী। জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্ত্রী।
কাদম্বরী দেবী কলকাতার মেয়ে। তাঁর বাবা শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে ঠাকুরবাড়ির যোগাযোগ ছিল অনেকদিন থেকেই। ধীরে ধীরে ছোট্ট কাদম্বরীই হয়ে উঠলেন ঠাকুরবাড়ির যোগ্যতমা বৌমা। তিন তলার ছাদের ওপর গড়ে তুললেন 'নন্দন কানন'। পিল্পের ওপর সারি দিয়ে বসানো হল লম্বা পামগাছ, গন্ধরাজ, রজনীগন্ধা, করবী, দোলনচাঁপা। এল নানারকম পাখি। দেখতে দেখতে বাড়ির চেহাড়াই বদলে গেল।
advertisement
advertisement
কিশোর রবীন্দ্রনাথের মনোগঠনে কাদম্বরীর ভূমিকা অসামান্য । তাঁর অকালমৃত্যু কবির জীবনে এক বিশাল ক্ষত রেখে যায়। এ'কথা কবি নিজেই অসংখ্য কবিতা ও গানের মধ্যে দিয়ে ব্যক্ত করেছেন। সুতরাং যাঁরা তাঁদের নিয়ে অনেক কল্পনা এবং কষ্ট-কল্পনা করেন, তাঁদের সুযোগ করে দিয়েছেন কবি নিজেই, এ'কথা বললে খুব ভুল বলা হবে না। তিনি নিজেও বোধহয় জানতেন সে-কথা। তাই কৌতুক করে শেষ বয়সে বলতেন,
ভাগ্যিস নতুন বৌমা মারা গিয়েছিলেন, তাই আজও তাঁকে নিয়ে কবিতা লিখছি-- বেঁচে থাকলে হয়তো বিষয় নিয়ে মামলা হত!
advertisement
কাদম্বরী অসাধারণ সাহিত্যপ্রেমী ছিলেন। তিনি শুধু সময় কাটানোর জন্যই বই পড়তেন না, উপভোগও করতেন। দুপুরবেলা রবি ঠাকুর তাঁকে নিজের লেখা পড়ে শোনাতেন। হাতপাখা নিয়ে হাওয়া করতেন বৌঠান। 'ভারতী' পত্রিকায় ছাপার অক্ষরে তাঁর নাম ছিল না ঠিকই, কিন্তু তিনিই ছিলেন এই কবিতার প্রাণ! সেটা প্রকোট হয় তাঁর মৃত্যুর পর।
'নন্দন কানন'-এ সন্ধেবেলায় বসত গান ও সাহিত্যপাঠের পরিপাটি আসর। মাদুরের ওপর তাকিয়া, রূপোর রেকাবে ভিজে রুমালের ওপর বেলফুলের গোড়ের মালা, এক গ্লাস বরফজল, বাটা ভর্তি ছাঁচি পান সাজানো থাকত। কাদম্বরী গা ধুয়ে, চুল বেঁধে তৈরি হয়ে বসতেন সেখানে। জ্যোতিরিন্দ্র বাজাতেন বেহালা, রবীন্দ্র ধরতেন চড়া সুরের গান। বাড়ির অনেকে যোগ দিতেন সে আসরে। বাইরে থেকে আসতেন অক্ষয় চৌধুরী ও তাঁর স্ত্রী শরৎকুমারী, জানকীনাথ, মাঝে মাঝে আসতেন কবি বিহারীলাল।
advertisement
পরবর্তীকালে রবীন্দ্রনাথ এবং তাঁর নতুন বৌঠানকে নিয়ে বহু আলোচনা হয়েছে। অনুচিত সন্দেহ দানা বেঁধেছে। বিশেষ করে কবির বিয়ের কয়েক মাসের মধ্যেই কাদম্বরীর মৃত্যু নানা সংশয় তৈরি করেছিল। কিন্তু রবীন্দ্রমানস গঠনে এই নারীর ভূমিকা ছিল সবথেকে বেশি।
বৌদিদির চোখে নিজেকে যত দামী করে তোলার চেষ্টা চলছিল, কাদম্বরী মুখ টিপে হেসে ততই অগ্রাহ্য করে গিয়েছেন দেবরটিকে: '' রবি সবচেয়ে কালো, দেখতে একেবারেই ভালো নয়, গলা যেন কী রকম। ও কোনওদিন গান গাইতে পারবে না, ওর চেয়ে সত্য ভালো গায়।''
advertisement
আরও বলতেন, '' কোনওকালে বিহারী চক্রবর্তীর মতো লিখতে পারবে না।'' রবির দিনরাত তখন শুধুই মনে হত, কী করলে বৌঠানের চোখে তার আর কোনও দোষ ধরা পড়বে না। বাচ্চা রবি বুঝতেন না, রবিকে একেবারে নিখুঁত করে তোলার সাধনাই করছেন বৌঠান। যাতে কেউ কোনওদিন তাঁর কোনও খুঁত খুঁজে না পায়। যখন রবি একথাটা বোঝার মতো করে বুঝলেন, তখন তাঁর বৌঠান হারিয়ে গিয়েছে অন্ধকারে। কিন্তু কবির কথায় বারবার ফিরে এসেছেন তিনি, ''বড় ভালবাসতুম তাঁকে। তিনিও আমায় খুব ভালবাসতেন। এই ভালবাসায় নতুন বৌঠান বাঙালি মেয়েদের সঙ্গে আমার প্রাণের তার বেঁধে দিয়ে গেছেন। তাই তো সারাজীবন চলে তাঁর অনুসন্ধান: ''নয়ন সম্মুখে তুমি নাই/ নয়নের মাঝখানে নিয়েছ যে ঠাঁই।''
advertisement
কবি নারীকে বলেছেন, 'অর্ধেক মানবী তুমি অর্ধেক কল্পনা''-- কাদম্বরীও তাই। রোম্যান্টিক স্বপ্ন-সঞ্চারিণী নতুন বৌঠানের মধ্যে হারিয়ে গিয়েছেন মানবী কাদম্বরী।
বাংলা খবর/ খবর/ফিচার/
রবি ঠাকুরের নতুন বৌঠান
Next Article
advertisement
পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় ক্লাব এর সদস্যর এক আত্মীয়র! তারপরেই, এই এলাকার পুজোর থিম দেখলে অবাক হবেন!
পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় ক্লাব এর সদস্যর এক আত্মীয়র! অন্যরকম থিম এই এলাকায়
VIEW MORE
advertisement
advertisement