শিলচরে হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের হেনস্থা কবি শ্রীজাতকে, হোটেলে ভাঙচুর
Last Updated:
দু’বছর আগের কথা। ফেসবুকে অভিশাপ নামে একটি কবিতা পোস্ট করেন কবি শ্রীজাত। কবিতার শেষ দু’লাইন নিয়ে বিতর্কের সূত্রপাত। ২০১৭-এর পর ফের।
#কলকাতা: 'অভিশাপ' কবিতা নিয়ে বিতর্ক পিছু ছাড়ছে না কবি শ্রীজাতর। শিলচরে একটি অনুষ্ঠানে গিয়ে হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের বিক্ষোভের মুখে পড়লেন তিনি।
সঞ্চালকের হাত থেকে মাইক কেড়ে নেওয়া হয়। বিক্ষোভকারীদের ঘটনাস্থল থেকে সরিয়ে দেওয়া হলেও তাঁরা ফের গিয়ে বিক্ষোভ দেখায়। ভাঙচুর করা হয় হোটেলের জানলার কাচও। বন্ধ হয়ে যায় অনুষ্ঠান। পুলিশ গিয়ে কবিকে উদ্ধার করে। ফোনে খবর নেন মুখ্যমন্ত্রী ও মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। রবিবার সকালে কলকাতায় ফেরেন তিনি। অনুষ্ঠানের আয়োজকরাও ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন। ২০১৭ সালে এই অভিশাপ কবিতা নিয়েই বিতর্কের মুখে পড়েছিলেন কবি শ্রীজাত।
advertisement
ঘটনার তীব্র নিন্দা করে শ্রীজাত বলেন, 'দেশে বাকস্বাধীনতা হারাচ্ছে৷ এটা কোনও বিক্ষিপ্ত ঘটনা নয়৷ সারা দেশে এ রকম ঘটছে৷ আগেও ওখানে গিয়েছি৷ এরকম হয়নি৷ সকলেই এর প্রতিবাদ জানিয়েছেন৷ এই সমর্থনই আমাদের জোর৷'
advertisement
দু’বছর আগের কথা। ফেসবুকে অভিশাপ নামে একটি কবিতা পোস্ট করেন কবি শ্রীজাত। কবিতার শেষ দু’লাইন নিয়ে বিতর্কের সূত্রপাত। ২০১৭-এর পর ফের। শনিবার শিলচরে একটি অনুষ্ঠানের উদ্বোধনে গিয়েছিলেন কবি শ্রীজাত। আচমকাই অনুষ্ঠানে ঢুকে পড়ে হিন্দুত্ববাদীরা। শ্রীজাত জানিয়েছেন, অনুষ্ঠান চলাকালীন হঠাতই এসে হাজির হন পাঁচ-ছ’জন হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের কর্মী। উদ্যোক্তাদের কাছে এসে তাঁরা জানিয়েছিলেন, তাঁদের কিছু কথা বলতে দিতে হবে। সেই সময় স্থানীয় শিল্পীদের সংবর্ধনা দেওয়া হচ্ছিল। উদ্যোক্তারা তাঁদের বলেন, কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার জন্য। সংবর্ধনা পর্ব শেষ হওয়ার আগেই ফের কথা বলার দাবি তোলেন ওই হিন্দুত্ববাদীরা। বাধ্য হয়ে তাঁদের কথা বলতে দেন আয়োজকরা।
advertisement
তখন, তাঁদের মধ্যে একজন মাইকে এসে বলেন, কবি শ্রীজাতর কাছে তাঁর একটা কবিতার লাইনের ব্যাখা চান তাঁরা। বলে, শ্রীজাতর সেই বিতর্কিত কবিতার পংক্তিটির মানে জানতে চান তাঁরা। ঘটনার আকস্মিকতায় প্রথমে হতভম্ব হয়ে যান সবাই। তারপর ওই অনুষ্ঠানে হাজির থাকা এই স্থানীয় সাংবাদিক তীব্র ভাষায় প্রতিবাদ করেন এই আচরণের। তিনি জানান, শ্রীজাতর কোনও কবিতার লাইনের অর্থ জানার থাকলে অন্য সময়ে তাঁরা সেটা জানতে চাইতে পারেন। কিন্তু এইভাবে একটা অনুষ্ঠান চলার সময়, বাধা দিয়ে এমন প্রশ্ন করতে পারেন না তাঁরা। হিন্দুত্ববাদীরা পালটা উত্তর দেন, অনুষ্ঠানে বাধা দিতে তাঁরা চান না। শুধু কবি শ্রীজাতর কাছ থেকে তাঁর ওই পংক্তিটির উত্তর শুনেই বেরিয়ে যাবেন তাঁরা।
advertisement
এই কথার প্রতিবাদ করেন ওই অনুষ্ঠানে আসা অন্যরাও। উদ্যোক্তা ও পুলিশের লোকেরা কার্যত জোর করেই বাইরে বের করে দেন অনুষ্ঠানে বাধা দেওয়া ওই পাঁচ ছয়জনকে। এরপরেই ক্রমশই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পরিস্থিতি। হোটেলের সামনে উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা জড়ো হয়ে স্লোগান দিতে শুরু করেন। কিছুক্ষণ পরে হোটেল লক্ষ্য করে ঢিল ছুঁড়তেও শুরু করে উত্তেজিত জনতা। ভাঙে হোটেলের কাচও।
advertisement
বিক্ষোভকারীদের ঘটনাস্থল থেকে সরিয়ে দেওয়া হলেও তাঁরা ফের গিয়ে বিক্ষোভ দেখায়। বন্ধ হয়ে যায় অনুষ্ঠান। পুলিশ গিয়ে শ্রীজাতকে উদ্ধার করে। ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত ও সোশাল সাইটে হিংসা ছড়ানোর অভিযোগে দু’টি জামিন-অযোগ্য ধারায় মামলা রুজু হয় শিলিগুড়ির সাইবার সেলে। এমনকী কবিকে ত্রিশূল-বিদ্ধ করলে পাঁচ লক্ষ টাকা পুরস্কার ঘোষণা হয় ফেসবুকে। সঙ্গে হুমকি ফোন।
view commentsLocation :
First Published :
January 13, 2019 12:57 PM IST