#টোকিও: যে দেশে মহিলাদের সাইকেল চালানো, শরীরের সঙ্গে চাপা জামা পড়াকে অপরাধের চোখে দেখে মানুষ, সেরকম দেশ আফগানিস্তান থেকে ২০২১ অলিম্পিকে নিজের নাম তুললেন মহিলা সাইক্লিস্ট মাসামো আলি জাদা। এই ২৪ বছরের তরুণী যখন তার দেশের রাস্তায় সাইকেল চালাতেন, পাথর ছুড়ে মারত পথচলা মানুষ। অন্ধকারের যুগে পড়ে থাকা মানসিকতার শিকার প্রতিটা মহিলার সংগ্রামের প্রতীক হয়ে তিনি তার স্বপ্নপূরণ করতে চলেছে টোকিওতে।
শুধু মহিলারা নন, তিনি এক জ্বলন্ত উদাহরণ বিশ্বের সব উদ্বাস্তু মানুষদের সংগ্রামের। তিনি অলিম্পিক ২০২০- র উদ্বাস্তু দলের হয়ে নামছেন অলিম্পিকে এবং তিনি এক কর্তব্য অনুভব করছেন তার মত বিশ্বের প্রায় ৮ কোটি মানুষের প্রতি, যারা নিজের দেশ - ভিটে ছেড়ে অন্য দেশের মাটিতে প্রতি মুহূর্তে লড়ছেন বাসস্থান, খাদ্য এবং পরিচয়ের জন্য। এএফপি সংবামাধ্যমকে তিনি বলেছেন 'আমি মনুষ্যত্বের প্রতিনিধি।'
শুধু তাই নয়, তিনি প্রতিনিধিত্ব করছেন সেই সব নারীদেরও যাদের হিজাব পড়তে বাধ্য করা হয়। কিন্ত মাসামো আলি জেদা এই হিজাব পড়ার দায়টিকে স্বেচ্ছায়, গর্বের সঙ্গেই তুলে নিয়েছেন। 'এটি শুধু আমার সাফল্য নয়, প্রতিটা আফগান মহিলার এবং বিশ্বের সকল দেশের মহিলার সাফল্য যাদের সাইকেল চালানোর অধিকার নেই - বলছেন এই মেয়ে। আফগানিস্তান যখন আবার তালিবানি কবলে, সেই পরিস্থিতিতে দাড়িয়ে জাদা সংবাদমাধ্যমকে বললেন। 'সমস্ত উদ্বাস্তুদের জন্য যাদের নিজের দেশ ছাড়তে হয়েছে। সেই সব উদ্বাস্তু মানুষের জন্য আমার দরজা উন্মুক্ত যারা আমায় অনুসরন করতে চায়।'
অলিম্পিক সংস্থা থেকে ৫৬ জন উদ্বাস্তু অ্যাথলিট সংহতি ভাতা পেয়েছিল যার মধ্যে ২৯ জন যাবে টোকিও অলিম্পিকে। প্রতিযোগিতায় আলি জাদা ২৫ জন প্রতিযোগীর বিরুদ্ধে টাইম ট্রায়ালে অংশগ্রহণ করবে। ইউসিআই থেকে বিশ্ব সাইক্লিং সেন্টারে তাঁকে এক মাসের ফটো ট্রেনিং দেওয়া হয়েছিল অলিম্পিকের আগে। কোচ জন জাক অরি মনে করেন এই মেয়েটি আফগানিস্তান থেকে আসা শ্রেষ্ঠ সাইক্লিস্ট এবং অত্যন্ত দ্রুত উন্নতি করেছে বুদ্ধি করে।
আলি ইরানের সংখ্যালঘু হাজারা সম্প্রদায়ের মানুষ, যিনি ইরান থেকে পালিয়ে পরিবার নিয়ে কাবুল চলে এসে ১৬ বছর বয়সে জাতীয় দলে যোগ দেন। তিনি জানিয়েছেন যে তার কোনও ধারণা ছিল না আফগানিস্তানে এসে সাইকেল চালানোর জন্য তাকে শারীরিক আক্রমনের শিকার হতে হবে।
'আমি জানতাম এটা কঠিন কিন্ত কখনও ভাবিনি মানুষ আমাদের মারবে... প্রথম বছর যখন আমি সাইক্লিং শুরু করি, একজন আমায় আঘাত করে। সে তার গাড়িতে ছিল। গাড়ি থেকে পিছনে আমায় মারে সে। প্রায় সমস্ত নারী যারা সাইকেল চালাত তারা সবাই এরকম অভিজ্ঞতার শিকার। মানুষ অপমান করত আমাদের"। নিজের নির্মম অভিজ্ঞতার কথা জানালেন আলি জেদা।
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।
Tags: Tokyo Olympics 2020