‘ঐতিহ্য তো রয়েছে, ভবিষ্যত কী ?’ আতঙ্কের সুর জয়নগরের মোয়া নির্মাতার কাঁপা গলায়

Last Updated:
#জয়নগর: জয়নগরের মোয়া ৷ শীত আসলেই বাঙালির পাতে চাই-ই চাই এই মিষ্টি ৷ তবে, ভেজালের ঠেলায় আসল মোয়া তো পাওয়াই যায় না ৷ কারণ ক্যালেন্ডারের পাতায় অক্টোবর পেরোতে না পেরোতেই শহরের রাস্তায় ব্যাঙের ছাতার মত গজিয়ে ওঠে মিষ্টির দোকান ৷ যার প্ল্যাকার্ডে লেখা থাকে ‘জয়নগরের মোয়া’ ৷ এই মোড়কের আড়ালেই বিক্রি হয় ‘ভেজাল মোয়া’ ৷
তবে, সে যাই-ই হোক না কেন ৷ জয়নগর আজও সেই ঐতিহ্য বজায় রেখে চলেছে ৷ নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি ৷ এই তিন মাস ধরে নিয়ম মেনেই তৈরি হয় মোয়া ৷ কনকচূড় ধানের খই, নলেন গুড় দিয়ে তৈরি হয় এই মোয়া ৷ এই সময়টাতে রীতিমত উৎসব উৎসব রব পড়ে যায় গোটা এলাকায় ৷ স্থানীয় মানুষজন তো রয়েছেই ৷ দূর দূরান্ত থেকেও এই এলাকায় আসেন সাধারণ মানুষ ৷ এই মিষ্টির টানেই ৷ কিন্তু সমস্যাটা অন্য জায়গায় ৷ এই জয়নগরের মোয়া পুরোপুরিই একটি মরশুমি মিষ্টি ৷ যার জেরে বছরের ন’মাস কর্মহীন হয়ে পড়েন তাঁরা ৷ কীভাবে চলে তাঁদের সংসার ৷ সেটা জানতেই News18Bangla পৌঁছে গিয়েছিল জয়নগরে ৷
advertisement
অল্পবিস্তর খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেল, জয়নগরের সবচেয়ে পুরোনো বুঁচকিবাবুর মিষ্টির দোকান ৷ জয়নগর পৌঁছে দোকানটি খুঁজে পেতে খুব একটা বেগ পেতে হল না ৷ ‘দাদা বুঁচকিবাবুর মিষ্টির দোকানটা কোথায় ?’ প্রশ্ন করতে না করতেই তাঁরা জানিয়ে দিলেন, ‘দিদি একদম স্টেশনের সামনে চলে যান ৷ ডানদিকে পড়বে ৷’ দোকানে পৌঁছেই দেখলাম ৷ বয়সের ছাপ পড়েছে দোকানের পরতে পরতে ৷ আর কাঁচের শো-কেসের আড়ালে সারি সারি দিয়ে রাখা রসগোল্লা, দানাদার, ক্ষীরকদম্ব... কিন্তু জয়নগরের মোয়া কই ? একটাও পাওয়া যাবে না ? প্রশ্ন শুনে হেসে উঠলেন দোকানের প্রবীণ বিক্রেতা প্রফুল্লবাবু ৷ তাঁর উত্তর, ‘এখন কীভাবে পাবেন ম্যাডাম ? ওটা তো নভেম্বরের আগে কোনওভাবেই বানানো সম্ভব নয় ৷ নলেন গুড় না হলে মোয়া বানানোই যায় না ৷’ ফের প্রশ্ন রাখলাম, ‘তোমরাই বানাও ?’ উত্তর এল, ‘না না ৷ ওটার জন্য আলাদা কারিগর আসেন বাইরে থেকে ৷’ আর গুড় ? জানা গেল, মোয়া তৈরির সময় কিছু দিনের জন্য অনেককে দোকানে কাজে নিয়োগ করা হয় ৷ নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তাঁরা কাজ করেন ৷ খেঁজুর গাছ থেকে মোয়া তৈরি ৷ সবক্ষেত্রেই নতুন লোক নিয়োগ করা হয় ওই নির্দিষ্ট সময়টায় ৷ তাহলে বাকি সময়টায় কী করেন তাঁরা ? সেই প্রশ্নের উত্তর প্রফুল্লবাবুর কাছে ছিল না ৷ তিনি পরামর্শ দিলেন, ‘আপনি বাবু (অশোক ঘোষ)-র কাছে যান ৷ উনিই এই দোকানের পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছেন এই মুহূর্তে ৷’ নাম-ঠিকানা জেনে অশোক ঘোষের বাড়ির উদ্দেশে ফের রওনা দিলাম ৷
advertisement
advertisement
শ্রীকৃষ্ণ মিষ্টান্ন ভাণ্ডার থুড়ি বুঁচকিবাবুর মিষ্টির দোকান থেকে ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে বাড়ি তাঁর ৷ অশোক বাবুর বাড়ি পৌঁছে জানা গেল, বয়স ৭০-র কোঠা পেরিয়ে গিয়েছে ৷ তাই মাঝেমধ্যেই অসুস্থ হয়ে যাওয়ার জেরে দোকান ছেড়ে আপাতত বাড়িতেই বিশ্রামে রয়েছেন তিনি ৷ কথায় কথায় জানলাম এই দোকানের ইতিহাস ৷ ১৯২৯ সালে দুই বন্ধুর হাত ধরে তৈরি হয়েছিল এই দোকানটি ৷ এই দোকানটিই জয়নগরের প্রথম প্রথাগত এবং বাণিজ্যিক মোয়ার দোকান ৷ চিরাচরিত মিষ্টি তৈরির প্রথা থেকে বেরিয়ে গিয়ে সামান্য কারিকুরি করে তাঁরা এই মিষ্টিটা তৈরি করেছিলেন নিছকই সময় কাটানোর জন্য ৷
advertisement
জয়নগরের মোয়া তৈরির নেপথ্যে যারা রয়েছেন তাদের মধ্যে একজন ছিলেন নিত্যগোপাল সরকার ৷ যিনি বাংলাদেশ থেকে এপারে মামাবাড়িতে এসে থাকতে শুরু করেন ৷ এখানে এসে থাকতে গিয়ে পাড়ার ফুটবল খেলার মাঠে আলাপ হয় পূর্ণচন্দ্র ঘোষের সঙ্গে ৷ দু’জনে একসঙ্গে বড় হয়ে উঠতে থাকেন ৷ তাঁদের আলাপ-আলোচনা, পছন্দ-অপছন্দ সবেতেই ছিল বেশ মিল ৷ সবমিলিয়ে বেশ ভালই কাটছিল দু’জনের ৷ কিন্তু বয়স বাড়তেই রোজগারের চিন্তা মাথায় চেপে বসে ৷ সেই সময়ই স্থানীয় এক মিষ্টিকে ‘কারিকুরি’ করে তৈরি করলেন এক বিশেষ মোয়া ৷ কয়েকদিনের মধ্যেই তা স্থানীয় এলাকা ছাড়িয়ে বিভিন্ন প্রান্তে দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে থাকল ৷ এরপর সেটিই আসতে আসতে নাম পরিবর্তন হয়ে হল জয়নগরের মোয়া ৷ অবশ্য, এর আগে এই এলাকায় এমন মিষ্টি তৈরি হত ৷ কিন্তু স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, বুঁচকিবাবুর হাত ধরেই এই মোয়ার আসল উত্থান হয়েছে ৷ বলে রাখা ভাল, এই বুঁচকি হল নিত্যগোপাল সরকারের ডাক নাম ৷
advertisement
সবমিলিয়ে দেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও আজ এই মোয়ার চাহিদা তুঙ্গে ৷ জয়নগরে পৌঁছে সকলেই পৌঁছে যান এই মোয়ার দোকানেই ৷ কিন্তু আজ আর সেই আগের মত স্বাদ ধরে রাখা সম্ভব হয়না ৷ কারণ সবেতেই মেশানো হয় ভেজাল ৷ খারাপ লাগে মাঝেমধ্যে ৷ কিন্তু কিছু করার নেই ৷ কথাগুলো বলতে বলতে আফসোস করছিলেন পূর্ণচন্দ্রের ছেলে অশোক ঘোষ ৷ কারণ এই দোকান পরিচালনার দায়িত্বে আপাতত রয়েছেন তিনিই ৷ তিনিই জানালেন, ‘এই তিনটে মাস মোয়া তৈরি করার জন্য বাইরে থেকে লোক আসেন ৷ তাঁরাই তৈরি করেন মোয়া ৷ এছাড়াও গুড় নিয়ে আসা-সহ আরও প্রয়োজনীয় অন্যান্য কাজ করার জন্য চুক্তিভিক্তিক অনেক লোক নেওয়া হয় মোটা টাকায় ৷’ তাহলে বাকি সময়টাই কী করেন তাঁরা ? অশোকবাবু জানালেন, ‘কেউ চাষবাসের কাজ করেন কিংবা কেউ গাড়ি চালান ৷’ তবে, বেশিরভাগ জনেরই খোঁজ-খবর জানা নেই ৷ স্পষ্ট জানালেন অশোকবাবু ৷
advertisement
তবে, এ তো গেল মোয়া তৈরি এবং তার ইতিহাস ৷ কিন্তু ২০১৫ সালে জয়নগরের মোয়া জিআই(জিওগ্রাফিকাল ইন্ডিকেশন)-র তকমা পেয়েছিল ৷ সেটার জন্য কি কোনওরকম সুবিধা পান ? প্রশ্নের উত্তরে আফসোসের সুরে অশোকবাবু জানালেন, ‘জিআই দেওয়া হয়েছে ৷ নম্বরও পেয়েছি ৷ কিন্তু আলাদা কোনও সার্টিফিকেট পাইনি ৷ কোনও কাগজপত্রও পাইনি ৷ কোথাও কোনও সদুত্তর মেলেনি ৷’ পাশাপাশি জয়নগরের মোয়া নিয়েও আশঙ্কা প্রকাশ করলেন অশোকবাবু ৷ তিনি বললেন, ‘খেঁজুরের গাছই তো নেই ৷ বিলুপ্তির পথে খেঁজুর গাছ ৷ সরকার হয়তো ভিতর ভিতর খেঁজুর গাছ রোপণ করছেন ৷ কিন্তু আমাদের কাছে কোনও খবর নেই ৷ সরকারের কোনওরকম সাহায্য পাইনি এখনও পর্যন্ত ৷’ আগামী ১৯মে-র ভোটে তাই সরকারের কাছে একটাই অনুরোধ অশোকবাবুর, ‘এই শিল্পটা চাই বাঁচুক ৷ তাই সামান্য যদি সাহায্য করেন ৷’
view comments
বাংলা খবর/ খবর/দক্ষিণবঙ্গ/
‘ঐতিহ্য তো রয়েছে, ভবিষ্যত কী ?’ আতঙ্কের সুর জয়নগরের মোয়া নির্মাতার কাঁপা গলায়
Next Article
advertisement
‘লোকের দু’টো বউ থাকতে পারে, আমার বান্ধবী থাকতে পারে না...? অর্পিতাকে নিয়ে এবার মুখ খুললেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়
‘লোকের দু’টো বউ থাকতে পারে, আমার বান্ধবী থাকতে পারে না..? অর্পিতা ইস্যুতে মুখ খুললেন পার্থ
  • ‘অর্পিতা আমার বান্ধবী, তাতে অসুবিধার কী আছে...?’

  • অর্পিতা নিয়ে এবার মুখ খুললেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়

  • অর্পিতাকে নিয়ে ‘রং চড়িয়ে’ সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে বলে দাবি

VIEW MORE
advertisement
advertisement