DEBAPRIYA DUTTA MAJUMDAR
#বীরভূম: ইউটিউবে কদিন ধরেই ট্রেন্ডিং ' গেন্দা ফুল '। বাদশাহের এই নতুন মিউজিক ভিডিও ঘিরে সোশ্যাল মিডিয়ায় বিতর্ক এখন ভাইরাল। গীতিকার রতন কাহারকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি । তা নিয়ে হইচই পড়ে গিয়েছে। গানের ক্রেডিটে অরিজিনাল সং, বেঙ্গলি ফোক সং দেওয়া হলেও সিউড়ির লোক শিল্পী রতন কাহারের নাম নেই । নিউজ 18 বাংলার প্রতিনিধি দেবপ্রিয় দত্ত মজুমদারের সঙ্গেই ফোনে একান্ত আলাপচারিতায় ক্ষোভ, অভিমান, দুঃখ উগরে দিলেন শিল্পী। গান গেয়ে পাঠালেন বার্তাও।
প্রশ্ন: প্রথম কখন জানলেন আপনার গান নিয়ে সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে গান তৈরি হয়েছে?
উত্তর: সিউড়ি গণনাট্যর অঞ্জনদা প্রথম জানান যে, এই গানটা গাওয়া হয়েছে। দেখে প্রথমে মনে হলো ভদ্রমহিলা গানটা গাইছিলেন ভালই। তারপর দেখলাম আর কোনও কথা নেই , শুধুই ইংরেজি আর হিন্দিতে কথা বলছে। খারাপ লেগেছে খুব। আমার বরদাস্ত হচ্ছে না । আমি বেঁচে আছি, আমি গানটা সৃষ্টি করেছি, আমার সামনেই কেউ যদি এ রকম করে, আমার কি ভালো লাগতে পারে? আমার উপায় নেই । সিউড়ির মত শহরে বাস করি, তাই প্রথম থেকেই আমাকে বঞ্চিত করে রেখেছে। ভাল ভাল সাহিত্যিক, লেখক, যাঁরা আমাকে চেনেন, তাঁরা জানেন সবাই আমাকে বঞ্চিত করেছে। আমি স্বীকৃতি পাইনি।
প্রশ্ন: গানটা আপনি প্রথম কবে তৈরি করেন ?
উত্তর: এই গানটি আমার বটে। ৭২ সালে সৃষ্টি করেছিলাম। মলয় পাহাড়ি গানটা নিয়ে গিয়েছিলেন আকাশবাণীতে। বীরভূমের ভাষা, মাটির সুর। তাই জনপ্রিয় হয়েছিল। ৭৬ সালে স্বপ্না চক্রবর্তী আমার কাছ থেকে গানটা নিয়ে গিয়েছিল। নিজের বলে চালিয়ে দিয়েছিল স্বপ্না চক্রবর্তী। রেকর্ড কোম্পানির কাছে আমি গিয়েছিলাম কথা বলতে । আমাকে ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। আমার সঙ্গে আবার এরকম হল। আমি খুবই মর্মাহত, দুঃখিত। আমি খুবই পীড়িত মানুষ। আমার আর ভাল লাগে না ।
প্রশ্ন: আপনার গানে আসা কীভাবে?
উত্তর: ছোটবেলা থেকে গান শিখেছি। যাত্রাদলে নেচেছি। আলকাপ করেছি, লোটো করেছি। নগুরিতে মামাদের একটা দল ছিল সেখানে আমি গান গাইতাম। ওখানেই আমি মানুষ হয়েছি। আমার আসল বাড়ি কেন্দুলিতে।
প্রশ্ন: বড় লোকের বিটি লো গানটা তো একটা সত্যি ঘটনা থেকে অনুপ্রাণিত ?
উত্তর: আমি যখন গান গাইতে আসি তখন সিউড়িতে একটা পতিতালয় ছিল। সেখানকার মেয়েরা আমার গান শুনতে পছন্দ করতেন। তাঁদের একজন লিডার হরিদাসী আমাকে ডেকে পাঠিয়েছিলেন। ওখানে খ্যামটা, ঝুমুর গানের আসর বসত। সেখানেই গান শোনাতে গিয়ে ওঁর কাছে একজন মেয়ের গল্প শুনেছিলাম । তারপর আমি গান বাঁধি।
প্রশ্ন: এখন কীভাবে কাটে আপনার ?
উত্তর: গান ছাড়া কোনও কাজ শিখিনি আমি । গান বাজনা নিয়েই ছিলাম, এখনও আছি। গাইতে গাইতে গায়ক আমি। আমি স্বভাব শিল্পী, আমি গান বাঁধতে পারি, গান ছানতে পারি। মা সরস্বতীর আশীর্বাদ আছে আমার সঙ্গে। ছন্দর সঙ্গে ছন্দ মিলিয়ে দিয়ে আমি গান রচনা করি। সুরগুলো আমি দিয়ে দি । মাটির সুর। লোকসঙ্গীত গানে তো আর স্বরলিপি করতে হয় না। বিড়ি বাঁধতাম, এখন আর পারি না। গান লিখে, অনুষ্ঠান করে চলে। আর ছেলে মেয়েরা যা রোজগার করে তাতেই কাজ চালাই। গান যাঁরা নিয়েছেন, তাঁরা ভালবাসেন, সমাদর করেন। সম্মানও দিয়েছেন। সংবর্ধনাও দিয়েছেন কিছু কিছু লোক। ওই ভালবাসা নিয়েই বেঁচে আছি।
প্রশ্ন: আপনার কাছ থেকে তো অনেকেই গান নিয়েছেন ?
উত্তর: হ্যাঁ অনেক নামী শিল্পীরা এখনও আসেন। পূর্ণচন্দ্র দাস বাউল, শিলাজিৎদের গান দিয়েছি । এঁরা আমাকে যোগ্য সম্মান দিয়েছেন। স্বীকৃতি দিয়েছেন। এঁদের প্রতি কোনও ক্ষোভ নেই, দুঃখ নেই। কিন্তু স্বপ্না চক্রবর্তীর প্রতি আছে। উনি অন্যায় করেছেন আমার সঙ্গে। তাঁর স্বামী যদিও আমায় খুব ভালবাসেন, সম্মান করেন।
প্রশ্ন: আপনি এখন কী চান ?
উত্তর: জনগণের ভালবাসাই আমার কাছে সব। আমি ত্যাগী। আমার টাকা পয়সার প্রতি লালসা নেই। খাওয়াদাওয়ার প্রতিও নেই। দুঃখ আছে। আমার লেখা গান অনেকেই গান, কিন্তু জানবে না কীভাবে গাইবে , কেন গানটা তৈরি হয়েছে, সেটায় দুঃখ পাই। আমি চাই বাদশাহ বলে যিনি গেয়েছেন তিনি আমাকে স্বীকৃতি দিন। তাতে জীবনে তাঁর ভালই হবে ।
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।
Tags: Badshah, Genda Phool, Jacqueline Fernandez, Ratan Kahar