নামখানা: কাকদ্বীপ, নামখানার প্রত্যন্ত এলাকা থেকে একসময় ভিন রাজ্যে পাচার হয়ে গিয়েছিল ওরা তিন জন । পুলিশ ও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার মাধ্যমে বাড়ি ফিরেছে। কিন্তু এড়াতে পারেনি পরিজন ও পড়শিদের বক্রোক্তি ৷ যত অপমানিত হয়েছে, তিন কিশোরীর মনে অদম্য হয়েছে জেদ৷ অন্ধকার ভুলে আলোর পথে পা রেখেছে তিনজনই ৷ প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হয়েছে মাধ্যমিকে (Madhyamik 2021)৷
কিন্তু বিরতি নয় ৷ বরং চরৈবেতি মন্ত্রকে অবলম্বন করে তারা ভর্তি হতে চায় উচ্চমাধ্যমিকে ৷ নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে আগামী দিনে স্বাবলম্বী হতে চায় তিনজনই । কেউ হতে চায় নার্স ৷ কেউ বা সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে আগ্রহী । এই লড়াইয়ে পাশে পেয়েছে স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকাকে। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা কর্মীরা বার বার উদ্বুদ্ধ করেছেন এই ছাত্রীদের।
শিশু ও নারীপাচারকারীদের অন্যতম নিশানা সুন্দরবন। গত কয়েক বছর ধরে পুলিশের তৎপরতায় পাচার হয়ে যাওয়া মেয়েদের ফিরিয়ে আনা হয়েছে অনেক ক্ষেত্রেই । প্রথমে হোমে রাখা হয় উদ্ধার হওয়া মেয়েদের । তার পর বয়স অনুযায়ী স্কুলে ভর্তি করা হয়। এই রকম ১৮ জনকে স্কুলে ভর্তি করা হয়েছিল । কাকদ্বীপের জ্ঞানদাময়ী হাইস্কুলে অষ্টম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণিতে এরা পড়াশোনা করত। তাদের মধ্যে চলতি বছরে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী ছিল তিন জন।
ওই তিন জন এ বার মাধ্যমিক পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে পাশ করেছে। প্রত্যেকেই প্রায় ৬৫% থেকে ৭০% নম্বর পেয়েছে। তিন জনই আবার উচ্চ মাধ্যমিকে পড়ার জন ভর্তি হতে চাইছে। এদের মধ্যে এক ছাত্রীর কথায়, ‘‘ আমাকে ভুল বুঝিয়ে প্রেমের টোপ দিয়ে পাচার করা হয়েছিল। আমি যখন বুঝতে পারি, তখন ভিন রাজ্যে আমাকে আটকে রাখা হয়েছে। পরে পুলিশের সাহায্যে বাড়ি ফিরি।’’
ওই কিশোরীর অভিযোগ, সে বাড়ি ফেরার পর তাদের পরিবারকে কার্যত একঘরে করে রাখা হয়েছিল ৷ সেই সময় এগিয়ে আসেন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মীরা ৷ ব্যবস্থা করেন স্কুলে ভর্তির ৷ অষ্টম শ্রেণিতে ভর্তি হয়ে নতুন জীবন শুরু করে সে ৷ তার মাধ্যমিকের ফলে খুশি বাড়ির লোকও ৷ তার কণ্ঠে ফুটে ওঠে আর্তি, ‘‘আরও পড়াশোনা করব। আমি বড় হয়ে নার্স হতে চাই।’’
নামখানার শিবরামপুর এলাকার এক ছাত্রীর আক্ষেপ, ‘‘ আগে খুব খারাপ পরিস্থিতি ছিল ৷ আমাদের ভুল বুঝিয়ে নিয়ে চলে যাওয়া হয়েছিল ৷ সেখান থেকে ফিরে এসেছি, পড়াশোনা করে মাধ্যমিক পাশ করেছি । এখন শুধু সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চাই। সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়ে বা পুলিশ হয়ে নিজের পায়ে দাঁড়ানোই আমার চ্যালেঞ্জ।’’
জ্ঞানদাময়ী হাই স্কুলের শিক্ষক সুশীল প্রামাণিকের কথায়, ‘‘ আমাদের কাছে প্রত্যেক ছাত্রী স্নেহের। সকলকে আমরা সমানভাবে দেখি। একটি ভুল মানুষকে শেষ করে দেয় না। ওই তিন ছাত্রী চ্যালেঞ্জ নিয়েছিল । তিনজনই প্রথম বিভাগে পাশ করেছে। আজ আমরা খুব খুশি। আমরা ওদের জন্য গর্বিত।’’
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের পক্ষে সুব্রত পাণিগ্রাহী বলেন, ‘‘আমরা এই মেয়েদের কাউন্সেলিং শুরু করি। জীবনের মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনতে পরামর্শ দিই। আমরা বেশ কয়েকজনকে স্কুলে ভর্তি করেছিলাম। এর মধ্যে তিন জন এবার মাধ্যমিক পাশ করেছে। ওদের এই ফলে আমরা আনন্দিত। ভবিষ্যতেও ওদের পাশে আমরা থাকব।’’
প্রতিবেদন--বিশ্বজিৎ হালদারনিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।
Tags: Kakdwip, Madhyamik 2021, Namkhana, Sundarbans