রথযাত্রা শুধু এ দেশের নয়, বিশ্বের বহু জায়গায় এখনও হয় রথযাত্রার অনুষ্ঠান!
- Published by:Simli Raha
- news18 bangla
Last Updated:
এমন বেশ কিছু রথযাত্রা রয়েছে, যা এখনও প্রচলিত। বাকিরা হারিয়ে গিয়েছে চিরতরে। পুরোনো পুঁথিপত্রে মাত্র তাদের উল্লেখ পাওয়া যায়।
ভারতে তথা বঙ্গ ও ওড়িশায় জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা এতটাই জনপ্রিয় যে তার অনেক আগে থেকেই বাংলা, ভারত আর বিশ্বে যে আরও কিছু রথযাত্রা আছে, তা আমরা ভুলেই গেছি। তাদের বেশ কিছু এখনও প্রচলিত। বাকিরা হারিয়ে গিয়েছে চিরতরে। পুরোনো পুঁথিপত্রে মাত্র তাদের উল্লেখ পাওয়া যায়।
১। সূর্যের রথযাত্রা- ভবিষ্যপুরাণে এর কথা আছে। মাঘ মাসের শুক্লা সপ্তমী তিথিতে এই রথযাত্রা হত। তার আগের রাতে রথের সামনে যজ্ঞ করতে হত। এখানে রথে চাপতেন সূর্য সহ ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও অন্য দেবতারা।
২। বিষ্ণুর রথযাত্রা- পদ্মপুরাণে এর উল্লেখ পাওয়া যায়। কার্তিকের শুক্লা দ্বাদশীতে রাত্রে রথ স্থাপন করে পরদিন তাঁকে পুরভ্রমণ করাতে হয়। প্রলহাদ প্রথম এই রথ টানেন।
advertisement
advertisement
৩। শিবের রথযাত্রা- একাম্রপুরাণ মতে, এর নাম অশোকা মহাযাত্রা। চৈত্র মাসের শুক্লাষ্টমীতে এই রথ টানা হয়। রথের সারথি হন ব্রহ্মা।
৪। দেবীর রথযাত্রা- দেবীপুরাণে এর উল্লেখ আছে। এতে কার্তিকের শুক্লা তৃতীয়াতে রথ স্থাপন করে রথের সামনে বলি দিতে হয়। পুরভ্রমণ অন্য রথের মতই।
৫। মেরীর রথযাত্রা- ইউরোপে সিসিলিতে মেরিকে দেবী রূপে পুজা করে এই রথযাত্রা হয়। আগে ধারণা ছিল এই রথের চাকার নিচে সন্তানকে বলি দিলে সেই সন্তান ও তাঁর পিতামাতা স্বর্গে যায়। ফলে এককালে অনেক শিশু এই উপায়ে প্রাণ হারাত। ফেলিনির সিনেমায় এই রথ টানার দৃশ্য আছে ।
advertisement
৬। নেপালের রথযাত্রা- একে কুমারী যাত্রাও বলে। রাজা জয়প্রকাশ মল্ল এক কুমারীর অবমাননা করেন। পরে তাঁর শাপে রাণি অসুস্থ হয়ে পড়লে ভয়ে তিনি কুমারীকে রথে করে নিয়ে এসে পূজা করেন। এখনও কুমারী পূজায় সাত বছরের এক কুমারী মেয়েকে একা একটা অন্ধকার ঘরে ছেড়ে দেওয়া হয়। সে ভয় না পেলে তাঁকে সবাই দেবী মেনে পূজা করে ও রথে পুরভ্রমণ করায়।
advertisement
৭। সেরিঙ্গোপত্তনের রথযাত্রা- এখানে রথে থাকে সিংহ মুর্তি। পুরভ্রমণ সময়কালে মন্দির থেকে বিষ্ণুকে এনে রথে স্থাপন করা হত। ১৪শ শতাব্দীতে এই রথযাত্রা হত ।
৮।মাদ্রাজের রথযাত্রা- খ্রিষ্টীয় সপ্তম শতকের আগে থেকে প্রচলিত। এখানেও দেবতা বিষ্ণু।
৯। কুম্ভোকনমের রথযাত্রা- এখানে কোনও দেবতা থাকেন না। মন্দিরের প্রধান পুরোহিতকে সাজিয়ে গুজিয়ে রথে বসিয়ে টানা হয়। এ প্রথা প্রায় ৭০০ বছরের পুরোনো ।
advertisement
১০। জাপানের রথযাত্রা- জাপানে বুদ্ধপূর্ণিমায় বুদ্ধকে রথে বসিয়ে বাচ্চারা টেনে নিয়ে যায়। এ প্রথাও প্রায় ১০০০ বছরের পুরাতন।
অর্থাৎ কিনা রথযাত্রা আমাদের নিজস্ব উৎসব নয়। এ উৎসব বিশ্বব্যাপী।

দেশের দ্বিতীয় প্রাচীনতম মাহেশের রথ ।
এই প্রসঙ্গে আমাদের বাংলার মাহেশের রথ নিয়ে কিছু না বললেই নয়। "রাধারাণি নামে এক বালিকা মাহেশে রথ দেখিতে গিয়াছিল।। ....... রথের টান অর্দ্ধেক হইতে না হইতে বড় বৃষ্টি আরম্ভ হইল। সন্ধ্যা হইল রাত হইল- বড় অন্ধকার হইল- রাধারানী কাঁদিতে কাঁদিতে ফিরিল।"
advertisement
যতই পুরীকে জগন্নাথদেবের ধাম বলুক না কেন, আপামর বাঙালির পঞ্জিকায় সেই প্রথম থেকেই কিন্তু পুরীর রথ ঠাঁই পায় নি। পেয়েছে মাহেশের রথ।
চতুর্দশ শতকে ধ্রুবানন্দ ব্রহ্মচারী নামে এক বাঙালি সাধু পুরীতে তীর্থ করতে গিয়েছিলেন। তাঁর ইচ্ছা হয়েছিল যে, তিনি জগন্নাথদেবকে নিজের হাতে ভোগ রেঁধে খাওয়াবেন। কিন্তু পুরীর মন্দিরের পাণ্ডারা বাধ সাধায় তিনি তা করতে পারলেন না। তখন দুঃখিত হয়ে তিনি আমরণ অনশনে বসলেন। তিন দিন পরে জগন্নাথদেব তাঁকে দেখা দিয়ে বললেন, "ধ্রুবানন্দ, বঙ্গদেশে ফিরে যাও। সেখানে ভাগীরথী নদীর তীরে মাহেশ নামেতে এক গ্রাম আছে। সেখানে যাও। আমি সেখানে একটি বিরাট দারুব্রহ্ম (নিম গাছের কাণ্ড) পাঠিয়ে দেবো। সেই কাঠে বলরাম, সুভদ্রা আর আমার মূর্তি গড়ে পূজা করো। আমি তোমার হাতে ভোগ খাওয়ার জন্য উদগ্রীব।" এই স্বপ্ন দেখে ধ্রুবানন্দ মাহেশে এসে সাধনা শুরু করলেন। তারপর এক বর্ষার দিনে মাহেশ ঘাটে একটি নিমকাঠ ভেসে এল। তিনি জল থেকে সেই কাঠ তুলে তিন দেবতার মূর্তি বানিয়ে মন্দির প্রতিষ্ঠা করলেন।
advertisement
মাহেশের রথযাত্রা ভারতের দ্বিতীয় প্রাচীনতম (পুরীর রথযাত্রার পরেই) এবং বাংলার প্রাচীনতম রথযাত্রা উৎসব। এই উৎসব ১৩৯৭ খ্রিস্টাব্দ থেকে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। এটি শ্রীরামপুর শহরের মাহেশে হয়। রথযাত্রার সময় মাহেশে এক মাস ধরে মেলা চলে। শ্রীরামপুরের মাহেশ জগন্নাথ মন্দির থেকে শ্রীরামপুরের গুন্ডিচা মন্দির (মাসীরবাড়ী) অবধি জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রার বিশাল রথটি টেনে নিয়ে যাওয়া হয়। উল্টোরথের দিন আবার রথটিকে জগন্নাথ মন্দিরে ফিরিয়ে আনা হয়।
Location :
First Published :
June 23, 2020 2:58 PM IST