#বর্ধমান: দক্ষিণবঙ্গের প্রসিদ্ধ কালী মন্দিরগুলির মধ্যে অন্যতম বর্ধমানের বোরহাটের সাধক কমলাকান্ত কালীবাড়ি। বর্ধমানের মহারাজ তেজচাঁদ কমলাকান্তকে এই কালীমন্দির গড়ে দেন। এখানেই সাধনা করে সিদ্ধিলাভ করেন সাধক কমলাকান্ত। মৃত্যুর পর তাঁর সমাধির ওপরেই মা কালীকে প্রতিষ্ঠা করা হয়। সেই আমল থেকেই মন্দিরে নিত্যপুজো হয়ে আসছে। এখানে কমলাকান্ত প্রতিষ্ঠিত কাল ভৈরব ও পঞ্চমুন্ডির আসন রয়েছে। দীপান্বিতা কালীপুজোয় এখানে অগণিত ভক্তের সমাগম ঘটে।
বর্ধমানের মহারাজ তেজ চাঁদ কমলাকান্তের গানে মুগ্ধ হয়ে তাঁকে সভা পণ্ডিত করে বর্ধমান রাজবাড়িতে নিয়ে যান। সেখানেই রাজা তেজ চাঁদ কমলাকান্তের তন্ত্রসাধনার কথা জানতে পারেন। রাজার উদ্যোগেই কমলাকান্তের সাধনার জন্য তৈরি হয় এই কালী মন্দির। বাঁকা নদীর ধারে পঞ্চমুন্ডির আসনে বসে তন্ত্র সাধনা করতেন সাধক কবি কমলাকান্ত।
কমলাকান্তের তন্ত্র-সাধনাকে কেন্দ্র করে নানা লোক কথা ছড়িয়ে রয়েছে। অমাবস্যার রাতে রাজা তেজচাঁদকে পূর্ণিমার চাঁদ দেখিয়েছিলেন সাধক কমলাকান্ত। একদিন রাজা জানতে পারেন কাজকর্ম ভুলে মদ্যপান করছেন কমলাকান্ত। রাজা সেখানে পৌঁছে ক্ষোভ প্রকাশ করলে কমলাকান্ত কমণ্ডলু থেকে রাজার হাতে ঢেলে দেন সুরা। কমলাকান্তের অলৌকিক ক্ষমতায় সেই সুরা পরিণত হয় দুধে।
মা কালীর মূর্তির প্রাণ রয়েছে দাবি করেছিলেন কমলাকান্ত। রাজা প্রমাণ চাইলে প্রতিমার পায়ে বেল কাঁটা ফুটিয়ে দেন কমলাকান্ত। রাজা দেখেন সেই ক্ষতস্থান থেকে রক্ত ঝরছে।
দেহত্যাগের সময় কমলাকান্তকে গঙ্গায় নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন রাজা। কমলাকান্ত যেতে চাননি। তারপরই দেখা যায় মাটি ভেদ করে উঠে জলের ধারা পড়ছে কমলাকান্তের মুখে। কমলাকান্ত নিজে যেতে না চাওয়ায় মা গঙ্গা এসেছিলেন তাঁর কাছে। যে জায়গা থেকে এই জলধারা উঠেছিল সেই স্থান বাঁধিয়ে কুয়ো তৈরি করা হয়। সেই কুয়োর জল আজও গঙ্গাজল হিসেবে কাজে লাগানো হয়। সেই জল ব্যবহার করা হয় পুজো, ভোগ রান্নার কাজে।
মৃত্যুর পর মন্দিরে সমাধিস্থ করা হয় কমলাকান্তকে। তাঁর সমাধির ওপরই মায়ের বেদি। সারা বছর কষ্টি পাথরের প্রতিমার পুজো হয়। দীপান্বিতা কালীপুজোয় তিনদিন ধরে উৎসব চলে এখানে। এবার স্বাস্থ্য বিধি মেনে মাস্ক পরে, সামাজিক দূরত্ব মেনে পুজো দেওয়ার জন্য দর্শনার্থীদের কাছে আবেদন জানিয়েছে মন্দির কর্তৃপক্ষ।
শরদিন্দু ঘোষ