রকি চৌধুরী, বানারহাট : চাকরি থেকে অবসর নিয়েছেন, তবে কাজ থেকে নয়। তাই অবসর নিলেও নিয়মিত স্কুলে আসেন শিক্ষক। যখন গোটা রাজ্যে শিক্ষা ব্যবস্থা প্রশ্নের মুখে, এমনকি শিক্ষকদের ভূমিকা নিয়েও মাঝে মধ্যে ক্ষোভ বিক্ষোভ দেখা যায় বিভিন্ন জায়গায়। সেই সময় দাঁড়িয়ে বানারহাট কলোনি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকের ভূমিকা প্রশংসার দাবিদার। ডুয়ার্সের ছোট্ট বানারহাট শহরের মধ্যে একাধিক প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। তার মধ্যে একটি হল বানারহাট কলোনি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
সেই বিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে ২০০৩ সালে যোগদান করেন শিক্ষক স্বপন কুমার সরকার । এরপর চাকরি জীবনের প্রায় ১৫ বছর কাটিয়ে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসে চাকরি থেকে অবসর নেন তিনি । বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে ছোট্ট অনুষ্ঠানের আয়োজন করে তাঁকে বিদায় সংবর্ধনা জানানো হয়। তবে অবসর নিলেও কিন্তু তিনি নিয়মিত স্কুলে আসেন৷ বিনা পারিশ্রমিকে পড়ান এবং স্কুলের যাবতীয় কাজ করে চলেছেন।
বানারহাট কলোনি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বর্তমান ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা ১০২ জন। সরকারিভাবে স্কুলে শিক্ষক সংখ্যা ৪ জন, তবে একজন পেপার ট্রান্সফারের মাধ্যমে অন্যত্র চলে গিয়েছেন। বর্তমানে তিনজন শিক্ষক রয়েছেন। তাই প্রয়োজনের তুলনায় শিক্ষক কম থাকায় কিছুটা হলেও সমস্যা হচ্ছিল।
আরও পড়ুন : ইঞ্জিনিয়ারিং ছেড়ে ছাদবাগান, শুক্রাণু বর্ধক কালো টমেটো টবে ফলিয়ে বাজিমাত যুবকের
অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকের ভূমিকায় খুশি বর্তমান শিক্ষকরাও। যেখানে বিভিন্ন স্কুল শিক্ষকের অভাবে ধুঁকছে সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে একজন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক স্কুলের টানে ছাত্র-ছাত্রীদের ভালোবাসার টানে পড়ানো বজায় রেখেছেন।
প্রথমে তিনি ভেবেছিলেন হয়তো স্কুল কর্তৃপক্ষ তাঁকে অনুমতি না-ও দিতে পারেন, তবে বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা অনুরোধ করেন তাঁকে নিয়মিত বিদ্যালয়ে আসার জন্য। আর সেই অনুরোধে সাড়া দিয়ে তার পর দিন থেকেই ফের আগের মতোই বিদ্যালয়ে আসেন তিনি। বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের তিনি এতটাই ভালবাসেন যে ক্লাসে যাওয়া মাত্রই ছাত্রছাত্রীরা শিক্ষককে জড়িয়ে ধরে। তাই চাকরি থেকে অবসর নিলেও কাজ থেকে অবসর নেননি তিনি।
আরও পড়ুন : কবরস্থানের বিবিপুকুর খনন করিয়েছিলেন রানি ভিক্টোরিয়া, জানেন না শহরের বাসিন্দারাই
এখনও আগের মতোই বিদ্যালয়ের গেট খোলা থেকে শুরু করে মিডডে মিলের দেখভাল তিনিই করেন। স্বপন বাবুর কথায়," অবসর নেওয়ার পরও বিদ্যালয় পরিদর্শক ও শিক্ষকরা বিদ্যালয়ে আসার কথা বলেছিলেন। তাছাড়া আমি শিশুদের ভালবাসি। তাই এখনও নিয়মিত বিদ্যালয়ে আসি।"
বর্তমানে যখন শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে উত্তাল রাজ্য, ঠিক তখন স্বপন বাবুর মতো শিক্ষককেও পাওয়া যায়। যাঁরা শিক্ষাব্যবস্থার হাল ফেরাতে তাঁদের সর্বস্ব দিতে চান।
স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নির্মল বসাক বলেন, "২০১৮ সালে অবসর নিয়েছিলেন কিন্তু তারপরেও লকডাউনের মতো কঠিন সময় পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন মিড ডে মিল সচল রাখতে পাশে ছিলেন। লকডাউনের কারণে সেই সময় অনেক শিক্ষকরা বাইরে থেকে আসতে পারতেন না। তখনও তিনি আমাদের সঙ্গে ছিলেন অবসর নেওয়ার পরেও। এবং এখনও তিনি প্রতিদিন নিয়মিত স্কুলে আসেন নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে। উনি আমাদের পাশে দাঁড়ানোয় আমরা খুবই খুশি এবং আমাদের দারুণ সাহায্য হয়। ওনার যে ভূমিকা, সেটা ব্যতিক্রমী বলাই যায়।"
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।
Tags: Jalpaiguri, School Teacher