#নয়াদিল্লি: সিঙ্গুরে ২০০৬-এর জমি অধিগ্রহণ অবৈধ বলে রায় দিল সুপ্রিম কোর্ট ৷ বিচারপতি অরুণ মিশ্রা ও গোপাল গৌড়ার ডিভিশন বেঞ্চে এদিন ঘোষিত হল সিঙ্গুর মামলার রায় ৷ রাজ্য সরকারকে অবিলম্বে জমির দখল নিতে নির্দেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট ৷ দীর্ঘ আন্দোলন শেষে অবশেষে সিঙ্গুরের অনিচ্ছুক কৃষকদের মুখে হাসি ফুটল ৷
সিঙ্গুরের জমি অধিগ্রহণ নিয়ে ঐতিহাসিক রায় সুপ্রিম কোর্টের। অনিচ্ছুক কৃষকদের দাবিকে স্বীকৃতি দিয়ে বুধবার বাম আমলে সিঙ্গুরের জমি অধিগ্রহণকে অবৈধ বলে রায় দিল সুপ্রিম কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ।
তৎকালীন বাম সরকারকেও বেঁধেন বিচারপতিরা। বুধবার বিচারপতি অরুণ কুমার মিশ্র ও গোপাল গৌড়ার ডিভিশন বেঞ্চ জানায়, সিঙ্গুরে জমি অধিগ্রহণ জনস্বার্থে হয়নি। তা কেবল বেসরকারি সংস্থার জন্যই হয়েছিল। রাজ্য সরকার এভাবে বেসরকারি সংস্থার জন্য জমি অধিগ্রহণ করতে পারে না বলেও জানিয়েছেন বিচারপতিরা। সেকারণেই জমি অধিগ্রহণ অবৈধ বলেই রায় দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। যাদের জমি চাষের অযোগ্য হয়ে গিয়েছে, তাদের পাশের মৌজা থেকে জমি দেওয়া কিনা তা দেখার জন্যও রাজ্যকে বলেছে সুপ্রিম কোর্ট। রাজ্যকে জমির দখল নিয়ে আগামী ১২ সপ্তাহের মধ্যে জমি কৃষকদের ফেরানোর নির্দেশ দেওয়া হল রাজ্য সরকারকে ৷
একটা বৃত্ত সম্পূর্ণ হল ৷ বাম সরকার যে নীতিতে সিঙ্গুরে কৃষকের জমি অধিগ্রহণ করেছিল তা সম্পূর্ণ অবৈধ বলে ঘোষণা করল সুপ্রিম কোর্ট ৷ বাম আমলে সিঙ্গুরে জমি অধিগ্রহণ অধিগ্রহণ আইন মেনে টাটাকে জমি দেওয়া হয়নি বলে পর্যবেক্ষণ দিল আদালত ৷
একইসঙ্গে এই ঐতিহাসিক রায়ে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, যে সব চাষীরা ক্ষতিপূরণ গ্রহণ করেছে ৷ তাদের কোনও টাকা ফেরত দিতে হবে না ৷ রায় ঘোষণার সময় অরুণ মিশ্র ও গোপাল গৌড়ার ডিভিশন বেঞ্চ বলে, ‘যাঁরা ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন তাঁদের ফেরাতে হবে না ৷’ ১০ বছর কৃষকরা জীবিকা নির্বাহ করতে পারেননি, তাই ওই টাকা ফেরত দেওয়ার কোনও মানে নেই বলে জানিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট ৷
শুধু সিঙ্গুরের ওই ৪০০ একর জমির ক্ষেত্রেই নয় ৷ ভবিষ্যতে কোনও বেসরকারি সংস্থার জন্য জমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রেও এই রায় যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ৷
২০০৬ সালে সিঙ্গুরে টাটাদের গাড়ি কারখানা তৈরির জন্য ৯৯৭ একর জমির মধ্যে ৬০ শতাংশ জমির মালিক সরকারের প্যাকেজ মেনে নিয়েছিলেন। চেকও নেন তাঁরা। ৪০০ একরের অনিচ্ছুক কৃষকেরা টাকা নেননি। তাঁদের অভিযোগ ছিল, টাটার কারখানার জন্য কেন রাজ্য সরকার বহুফসলি জমি নেবে। কেন অনিচ্ছুকদের জমিও কাড়া হবে। তারপর দীর্ঘ আন্দোলনের ইতিহাস।
কোন পথে মামলা- রাজ্য মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকেই জমি ফেরতের সিদ্ধান্ত হয়- প্রথমে অর্ডিন্যান্স এবং পরে আইন তৈরি করেন মুখ্যমন্ত্রী- পোশাকি নাম 'সিঙ্গুর জমি পুনর্বাসন ও উন্নয়ন আইন ২০১১'- আইনের মাধ্যমে পুরো জমিই ফেরত নেয় রাজ্য সরকার- রাজ্যের আইনকে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে যায় টাটা- আইনকে 'সাংবিধানিক ও বৈধ' বলে রায় দেয় হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চ- সিঙ্গল বেঞ্চের রায় খারিজ হয়ে যায় ডিভিশন বেঞ্চে- ২০১২-য় হাইকোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয় রাজ্যতবে এবার আশায় বুক বাঁধছেন সিঙ্গুরের মানুষ। তারপর মামলা চলাকালীনই সর্বোচ্চ আদালত এমন কিছু প্রশ্ন তোলে, যার উত্তর দিতে পারেননি টাটার আইনজীবী।
প্রশ্নের মুখে পড়ে তৎকালীন বাম সরকারের অধিগ্রহণ- বামফ্রন্ট মন্ত্রিসভা ৬০০ একর জমি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়- পরে সিঙ্গুরে ১০০০ একর জমি অধিগ্রহণের সিদ্ধান্ত কীভাবে হল?- কেন বাড়তি ৪০০ একর জমি অধিগ্রহণের প্রয়োজন পড়ল?- জনস্বার্থে জমি অধিগ্রহণের বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হলেও সেই শর্ত কেন মানা হয়নি?- জমি অধিগ্রহণের জনমত যাচাই হয়নি- হয়নি সয়েল ও ফিজিবিলিটি টেষ্ট- অনূর্বর জমির পরিবর্তে ঘনবসতিপূর্ণ এবং তিন ফসলি জমি নেওয়া হয়েছিল
সুপ্রিম কোর্টের রায়ে অনিচ্ছুক কৃষকরা জমি ফেরত পেলে তা হবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তৃণমূল সরকারের সবথেকে বড় বিজ্ঞাপন। যে জমি আন্দোলনকে কেন্দ্র করে রাজ্যে পরিবর্তনের শুরু, তার বৃত্তও সম্পূর্ণ হতে চলেছে ।
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।
Tags: Singur Case, Singur Land Case Verdict, Singur TATA Nano Factory, Singur Verdict, Supreme Court, Supreme Court Verdict, TATA, সিঙ্গুর জমি মামলা, সিঙ্গুর মামলা