হোম /খবর /দেশ /
রাস্তা চওড়া করার অনুমতি সুপ্রিম কোর্টের, চারধাম প্রকল্প সম্পর্কে বিশদে জানুন

Explained: রাস্তা চওড়া করার অনুমতি সুপ্রিম কোর্টের, চারধাম প্রকল্প সম্পর্কে বিশদে জানুন

সমস্যা তৈরি হয় উত্তরাখণ্ডের দেহরাদুনে রাস্তা চওড়াকে কেন্দ্র করে।

  • Last Updated :
  • Share this:

#নয়াদিল্লি: সুপ্রিম কোর্ট (Supreme Court) চারধাম সড়ক প্রকল্পের (Char Dham Roads Project) অংশ হিসেবে তিনটি জাতীয় সড়ক ১০ মিটার চওড়া করার অনুমতি দিয়েছে। শীর্ষ আদালত মনে করেছে, এই রাস্তাগুলির কৌশলগত গুরুত্ব আছে, এগুলি চিন সীমান্তে (China Border) ভারতীয় সেনাবাহিনীর (Indian Army) জন্য ফিডার হিসাবে কাজ করে। পরিবেশের কথা মাথায় রেখে রাস্তার কাজগুলি হচ্ছে, তা নিশ্চিত করার জন্য শীর্ষ আদালত একটি কমিটিও গঠন করেছে। উত্তরাখণ্ডের চারধাম সার্কিটে যমুনোত্রী, গঙ্গোত্রী, কেদারনাথ এবং বদ্রীনাথ হল চারটি প্রাচীন তীর্থস্থান।

সুপ্রিম কোর্ট কী বলেছে?

বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় (Justice DY Chandrachud), বিচারপতি সূর্য কান্ত (Justice Surya Kant) এবং বিচারপতি বিক্রম নাথের (Justice Vikram Nath) সমন্বয়ে গঠিত তিন বিচারপতির সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চ গত বছরের সেপ্টেম্বরে দেওয়া অন্য তিন বিচারপতির বেঞ্চের একটি আদেশ সংশোধন করেছে। আগে নির্দেশ দেওয়া হয় যে উত্তরাখণ্ডে (Uttrakhand) ৮৯৯ কিলোমিটার চারধাম সড়ক নেটওয়ার্কের অংশ হিসাবে তিনটি জাতীয় সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে, তা ৫.৫ মিটার চওড়া করতে হবে। ঋষিকেশ থেকে মানা ২৮১ কিমি রাস্তা, ঋষিকেশ থেকে গঙ্গোত্রী ২৩১ কিমি রাস্তা, টনকপুর থেকে পিথোরাগড় পর্যন্ত ১৬২ কিমি রাস্তা চারধাম প্রকল্পের আওতায় রয়েছে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের (Defence Ministry) আবেদনের পরে সুপ্রিম কোর্ট এখন আদেশ দিয়েছে যে রাস্তাগুলি ১০ মিটার চওড়া করা যেতে পারে। যার ফলে রাস্তাগুলি ডবল লেন করার পথ প্রশস্ত হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের তরফে বলা হয়েছে, প্রতিরক্ষা প্রয়োজনীয়তা সর্বাগ্রে, তা রক্ষা করে যা করার করতে হবে।

মোট তিনটি জাতীয় সড়ক নির্মাণ চলছে। সেগুলি হল- ঋষিকেশ থেকে মানা (Rishikesh to Mana), ঋষিকেশ থেকে গঙ্গোত্রী (Rishikesh to Gangotri), এবং টনকপুর থেকে পিথোরাগড় (Tanakpur to Pithoragarh)। এই তিনটি রাস্তা উত্তরাখণ্ডের কেদারনাথ (Kedarnath), বদ্রীনাথ (Badrinath), যমুনোত্রী (Yamunotri) এবং গঙ্গোত্রী (Gangotri), এই চারটি তীর্থস্থানকে সংযুক্ত করবে। এই প্রকল্পের মোট খরচ ধরা হয়েছে ১২ হাজার কোটি টাকা। তিনটি জাতীয় সড়কের কৌশলগত গুরুত্বের (Strategic Importance) বিষয়টি স্বীকার করে শীর্ষ আদালত পরিবেশগত উদ্বেগের সঙ্গে জাতীয় সুরক্ষার প্রয়োজনীয়তার কথাও উল্লেখ করেছে। আদালত বলেছে যে প্রতিরক্ষা প্রয়োজনীয়তাগুলির উপর বিচারবিভাগের পর্যালোচনার বিষয় হতে পারে না। তবে, পরিবেশগত কাজগুলি সম্পাদন করা হয়েছে, তা নিশ্চিত করার জন্য প্রাক্তন বিচারপতি এ কে সিক্রির (AK Sikri) নেতৃত্বে একটি তদারকি কমিটি গঠনেরও নির্দেশ দিয়েছে শীর্ষ আদালত।

কেন কেন্দ্র সুপ্রিম কোর্টের আগের আদেশে পরিবর্তন চেয়েছিল?

চারধাম সড়ক প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর ২০১৬ সালে করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (Narendra Modi)। এই প্রকল্পের মধ্যে উত্তরাখণ্ডে প্রায় ১২,০০০ কোটি টাকা ব্যয়ে জাতীয় সড়কগুলি চওড়া করা এবং তার উন্নতি জড়িত। কিন্তু, সমস্যা তৈরি হয় উত্তরাখণ্ডের দেহরাদুনে রাস্তা চওড়াকে কেন্দ্র করে। পরিবেশের উপর প্রভাবের বিষয়টি তুলে ধরে এই প্রকল্পের বিরোধিতা করে সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের করে এনজিও সিটিজেনস ফর গ্রিন ডুন (Citizens for Green Doon) সহ অন্যরা। এই প্রকল্পের জন্য পরিবেশগত অনুমোদনের ক্ষেত্রে অনিয়ম এবং নিয়ম লঙ্ঘন করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করে তারা। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইব্যুনাল (NGT) এই প্রকল্পটিকে ছাড়পত্র দিয়েছিল। কিন্তু, আপত্তি ওঠে অন্য জায়গায়। মামলা যে বেঞ্চ শুনেছিল, সেই বেঞ্চ রায় না দিয়ে অন্য বেঞ্চ রায় দিয়েছিল। এটা নিয়েই আপত্তি তুলে রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে মামলাকারীরা। সুপ্রিম কোর্ট ২০১৮ সালের অক্টোবরে এনজিটি-র আদেশে স্থগিতাদেশ দেয়। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে সুপ্রিম কোর্ট আদেশ দিয়েছিল যে চারধাম প্রকল্পের জন্য জাতীয় সড়কগুলি ৫.৫ মিটারের বেশি হওয়া চওড়া করা যাবে না। কিন্তু প্রতিরক্ষা মন্ত্রক সেই বছরের ডিসেম্বরে রাস্তা ১০ মিটার চওড়া করার অনুমতি দেওয়ার জন্য আবেদন জানায়। শীর্ষ আদালত তখন একটি উচ্চ-ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি (High-Powered Committee) গঠন করে এই বিষয়টি নিয়ে দেখার জন্য।

এই কমিটির সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্য বলে যে কৌশলগত গুরুত্বের পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয় সড়ক ১০ মিটার চওড়া করতে দেওয়া উচিত। সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্য আরও উল্লেখ করেছে যে যে জায়গায় রাস্তা ১০ মিটার চওড়া করা হয়ে গিয়েছে সেখানে তা কমানো সম্ভব নয়। আর করলেও সেই জায়গায় গাছ লাগানো যাবে না। অন্য দিকে, বিশিষ্ট পরিবেশবিদ এবং এইচপিসি-র চেয়ারম্যান রবি চোপড়ার (Ravi Chopra) নেতৃত্বে সংখ্যালঘু সদস্য জানিয়েছিল যে ভূমিধস এবং পরিবেশগত বিপদের পরিপ্রেক্ষিতে রাস্তা ৫.৫ মিটারের বেশি চওড়া হওয়া উচিত নয়। কেন্দ্র আদালতকে সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যদের মতামত মেনে নিতে বলে।

রাস্তা ১০ মিটার চওড়া করতে সরকারের কী বক্তব্য ছিল?

মামলার শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল কে কে বেণুগোপাল সুপ্রিম কোর্টকে বলেছিলেন যে পাহাড়ি রাস্তা চওড়া করার বিষয়ে সড়ক পরিবহন মন্ত্রকের নির্দেশিকা ডিসেম্বরে সংশোধন করা হয়েছিল। বেণুগোপাল বলেন, ওই রাস্তা দিয়ে সেনাবাহিনীকে ভারী যানবাহন, যন্ত্রপাতি, অস্ত্র, ক্ষেপণাস্ত্র, ট্যাঙ্ক, সেনা এবং খাদ্য সরবরাহ করতে হবে। ব্রহ্মস ক্ষেপণাস্ত্র ৪২ ফুট লম্বা এবং এর লঞ্চার বহন করার জন্য বড় যানবাহন প্রয়োজন। সেনাবাহিনী যদি ক্ষেপণাস্ত্র লঞ্চার এবং মেশিনারিগুলিকে উত্তর চিন সীমান্ত পর্যন্ত না নিয়ে যেতে পারে, তাহলে যুদ্ধ শুরু হলে সেনা কী নিয়ে যুদ্ধ করবে! ২০২১ সালের নভেম্বরে শীর্ষ আদালত এই মামলায় রায় সংরক্ষিত রাখে। বেঞ্চ বলেছিল যে প্রতিরক্ষা এবং পরিবেশের প্রয়োজনের ভারসাম্য বজায় রেখে সমস্যাটির সমাধান করতে হবে। বিচারপতি চন্দ্রচূড় বলেছিলেন, "বিশেষ করে সাম্প্রতিক অতীতে সীমান্তের ঘটনাগুলির প্রেক্ষিতে প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত উদ্বেগকে এড়িয়ে যাওয়া যাবে না। ভারত সরকারের সংস্থা হিসাবে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক সশস্ত্র বাহিনীর অপারেশনাল প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকারী। প্রয়োজনীয়তাগুলির মধ্যে রয়েছে সেনা, সরঞ্জাম এবং মেশিন নিয়ে যাওয়ার পরিকাঠামোগত সহায়তা।"

পরিবেশগত উদ্বেগগুলি কী কী?

পরিবেশবিদরা মনে করেন যে পাহাড়ি ভূখণ্ডে বড় আকারের নির্মাণ কাজগুলি দুর্যোগের কারণ হয়ে দাঁড়াবে। গাছ কাটার ফলে শিলাগুলি আলগা হয়ে যাবে, তাতে ভূমিধসের ঝুঁকি বাড়বে। সাউথ এশিয়া নেটওয়ার্ক অন ড্যামস, রিভারস অ্যান্ড পিপল (SANDRP) বলেছে যে গ্রিন ডুনের সদস্য ও রাস্তার পাশে থাকা বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দারা অভিযোগ করেছিলেন যে প্রকল্পটিতে পরিবেশ ছাড়পত্র ও পরিবেশ প্রভাব মূল্যায়ন না করেই হাত দেওয়া হয়েছে। পরিবেশ আন্দোলন কর্মীরা ২৫ হাজারেরও বেশি গাছ কাটার দিকে ইঙ্গিত করেছেন। তাঁরা এটাও উল্লেখ করছেন যে যেহেতু রাস্তা চওড়া করতে আরও খনন এবং ব্লাস্টিংয়ের প্রয়োজন হবে, তাই এলাকাটি আরও ধসপ্রবণ হয়ে উঠবে।

Published by:Rukmini Mazumder
First published:

Tags: Char Dham Roads Project