#কলকাতা: বর্ণময় ও সফল রাজনৈতিক জীবন ৷ আইনজীবী থেকে বাম রাজনীতিতে যোগ দিয়েছিলেন সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়। দশ বারের সাংসদ এবং প্রথম বাঙালি হিসেবে লোকসভার অধ্যক্ষ হওয়ার সম্মান রয়েছে তাঁরই ঝুলিতে। সংবিধানকে অগ্রাধিকার দিতে গিয়েই দল থেকে বহিষ্কারও হতে হয়েছে তাঁকে। বিতর্ক থেকে দলমত নির্বিশেষে গুরু-স্নেহ সম্পর্ক। রেখে গেলেন বর্ণময় চল্লিশ বছরের রাজনৈতিক জীবন বৃত্ত।
বার্ধক্যজনিত সমস্যায় আগেও বারবার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। কিন্তু এবার আর ফেরা হল না। চলে গেলেন বাম রাজনীতির প্রবীণ সদস্য সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়।
১৯২৯-এর ২৫ জুলাই অসমের তেজপুরে জন্ম সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ের ৷ প্রেসিডেন্সি কলেজ ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার শেষে উচ্চশিক্ষার জন্য লন্ডনে পাড়ি দেন এই বাঙালি মেধবী ছাত্র ৷ সেখান থেকে আইন নিয়ে পাশ করেন সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় ৷ দেশে ফিরে কলকাতা হাইকোর্টে আইনজীবী হিসেবে শুরু করেন কেরিয়ার ৷ কিন্তু বিধাতা বোধহয় তার জন্যে অন্য কিছু ভেবে রেখেছিলেন ৷
IN PICS: স্মৃতিমেদুর রাজা বসন্ত রায় রোড, শেষবারের মতো এই বাড়িতে ফিরছেন সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়
১৯৬৮ সাল, বাবা নির্মলচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের পথেই হাঁটা শুরু করেন সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় ৷ আইনের মারপ্যাঁচ ছেড়ে বাম রাজনীতিতে হাতেখড়ি হয় তাঁর। এরপরই জন্ম হয় এক দাপুটে বাম নেতার জীবন ৷ সিপিআইএম-এর হয়ে দশবার সাংসদ পদে নির্বাচিত হন তিনি ৷
- প্রথমবার ১৯৭১ সালে বর্ধমান লোকসভা কেন্দ্রে জয়লাভ- ১৯৮৯ থেকে ২০০৪ সাল, ১০ বার সাংসদ নির্বাচিত হন তিনি- মাঝে ১৯৮৪ সালে অঘটন, যাদবপুর কেন্দ্রে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে হেরে যান সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়
বামেদের শক্তঘাঁটি বোলপুর থেকে যাদবপুর, বারবার জনসমর্থন পেয়েছেন সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়। সুবক্তা, যুক্তি-তর্কে বিরোধীদের কোণঠাসা করার সহজাত ক্ষমতাই তাঁকে দলের অন্যতম মুখ করে তুলেছিল। নজর কেড়েছিলেন বিরোধীদেরও।
এরপর ২০০৪ সাল, সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ বছর ৷ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় লোকসভার অধ্যক্ষ নির্বাচিত হন তিনি ৷ দলমত নির্বিশেষে, সংবিধানকে মান্যতা দিয়েই সংসদ পরিচালনা করে গেছেন তিনি। অবশ্য তার জন্য অনেক বড় খেসারতও দিতে হয়েছে এই বর্ষীয়ান বাম নেতাকে।
২০০৮-এ পরমাণু চুক্তি নিয়ে দ্বন্দ্ব ৷ এর জেরে ইউপিএ সরকারের থেকে সমর্থন তুলে নেয় বামেরা ৷ স্পিকার পদ ছাড়তে সোমনাথকে নির্দেশ দেয় দল, কিন্তু নিরপেক্ষ সাংবিধানিক পদ ছাড়তে চাননি তিনি ৷ শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে ওই বছরের ২৩ জুলাই তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করে সিপিআইএম। মনে প্রাণে বাম রাজনীতিতে বিশ্বাসী সোমনাথবাবু সেই দিনটিকে বলেছিলেন স্যাডেস্ট ডে অব মাই লাইফ।
১৯৬৮ সালে সিপিআইএমের সদস্য হয়েছিলেন। চল্লিশ বছর পর সেই দল থেকে বিচ্ছেদ। আর রাজনীতিতে ফিরে যাননি সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়। তবে রাজনীতি থেকে দূরে থেকেও, সমাজ সংস্কারে বারবার গণতান্ত্রিক ক্ষমতা বৃদ্ধিতেই জোর দিয়েছেন। প্রয়োজনে দলমত নির্বিশেষে সমালোচনাও করতে পিছুপা হননি প্রাক্তন স্পিকার। রেখে গেলেন সেই বিতর্ক থেকে বর্ণময় রাজনৈতিক জীবনের পাঠ।
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।
Tags: Cpim, Demise of Somnath Chatterjee, Left Front, Left leader Somnath Chatterjee, Sad demise of Somnath Chatterjee, Somnath Chatterjee