করোনার জেরে ভোট উৎসব এবার ডিজিট্যালে, পথ দেখাতে চলেছে বিহার নির্বাচন, এভাবে হবে ভোট প্রক্রিয়া

Last Updated:

ফিল্মি ভিলেন গব্বরের মতো উৎসব ভঙ্গ করতে হাজির করোনা মহামারি ৷ এর জেরে নির্বাচনের সময় জনতার মুখোমুখি হওয়া বা নির্বাচনী প্রচারের এই জাঁকজমকই এখন সব থেকে বড় শত্রু হয়ে দাঁড়িয়েছে ৷

#পটনা: করোনা ভাইরাসের মারণ দাপটে নাজেহাল গোটা দেশ ৷ এর মাঝেই ভোট দামামা বিহারে ৷ এরই জেরে ব্যালট, ইভিএম-এর পর আরও একধাপ এগোতে চলেছে ভোট প্রক্রিয়া ৷ কোভিড ১৯ প্রোটোকল মেনে ভোটপ্রক্রিয়ায় আসতে চলেছে আমূল পরিবর্তন ৷ ছোঁয়াচ বাঁচাতে ভোটের প্রচার থেকে নির্বাচনী সভা পুরোটাই হতে চলেছে ডিজিট্যালি ৷
সালটা ১৯৯৫, তখন বিহারে চলছে লালুরাজ ৷ অবিভক্ত বিহারে ওটাই ছিল শেষ নির্বাচন ৷ সেবার রাজনীতির ময়দানে তখন নতুন, সমতা পার্টি প্রথম থেকেই নীতীশ কুমারকে পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে সামনে রেখে প্রচার চালাচ্ছিল ৷ যতসময় এগোচ্ছিল নির্বাচন ঘিরে শুরু হয়ে যেত উৎসব ৷ নির্বাচনী প্রচার মানে মোটামুটি মেলা বসে যেত ৷ সেখানে বেলুনওয়ালা, জিলিপির দোকান বাদামওয়ালা.. কীনা ছিল ৷ আর ছিল আকাশে ঘনঘন প্রতিদ্বন্দ্বীদের হেলিকপ্টারের ওড়াওড়ি ৷ না আমি তখন এদেশের স্বীকৃত ভোটার নই বরং ভদ্র, এক শান্তশিষ্ট বাচ্চা হয়ে থাকতাম, যাতে বাবা আমাকে হেলিকপ্টার দেখাতে নিয়ে যায় ৷
advertisement
ভারতে নির্বাচনটা কোনও যান্ত্রিক প্রক্রিয়া নয়, বরং এটাকে গণতন্ত্রের উৎসব বলা যেতে পারে ৷ গাড়ি, বাইক র‍্যালি, হেলিকপ্টার, লম্বা পদযাত্রা এবং লাখ লাখ লোকের জমায়েত, মিটিং মিছিল ৷ নির্বাচনকে ঘিরে গড়ে ওঠে অনেকের জীবন-জীবিকা ৷ ফেস্টুন, পোস্টার, দু-চাকার যোগান, নির্বাচনী প্রতীক দেওয়া জিনিস, পতাকার চাহিদা এসময় তুঙ্গে ওঠে ৷ এমনকী ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিগুলোরও এসময় নিঃশ্বাস ফেলারও ফুরসত থাকে না ৷
advertisement
advertisement
আসন্ন নির্বাচনে চতুর্থবারের জন্য একই প্রতিশ্রুতি নিয়ে নির্বাচনী ময়দানে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন নীতীশ কুমার ৷ সেসময়ই ফিল্মি ভিলেন গব্বরের মতো উৎসব ভঙ্গ করতে হাজির করোনা মহামারি ৷ এর জেরে নির্বাচনের সময় জনতার মুখোমুখি হওয়া বা নির্বাচনী প্রচারের এই জাঁকজমকই এখন সব থেকে বড় শত্রু হয়ে দাঁড়িয়েছে ৷
নির্বাচন কমিশন ইতিমধ্যেই স্পষ্ট করে দিয়েছে করোনার জেরে নির্বাচন পিছোনোর কোনও পরিকল্পনা তাদের নেই ৷ এমতাবস্থায় সবথেকে বড় ভূমিকা হতে চলেছে টেকনোলজির ৷ ভারতে সম্ভবত প্রথমবার নির্বাচন হতে চলেছে ডিজিট্যাল ফার্স্ট ৷ নির্বাচন স্ট্র্যাটেজিস্ট ও ডিজাইনবক্সের প্রতিষ্ঠাতা নরেশ অরোরার মতে, টেকনোলজি নির্বাচনে বরাবরই বড়সড় ভূমিকা পালন করে এসেছে ৷ এই মহামারি পরিস্থিতি সেটার আরও গুরুত্ব বাড়িয়ে দিল ৷ তবে একদিকে যেমন উৎসবের মেজাজ হারিয়ে যেতে চলেছে নির্বাচনী প্রক্রিয়া থেকে অন্যদিকে, মানুষের জীবনযাত্রা কম ব্যাহত করবে ৷
advertisement
সবথেকে জনপ্রিয় প্রচার মাধ্যম হতে চলেছে-
ইন্টারন্যাশনাল ডেটা কর্পোরেশনের রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারতে ৪০০০ লক্ষেরও বেশি মানুষ স্মার্টফোন ব্যবহার করেন এবং ৪৫০০ লাখেরও বেশি মানুষের কাছে রয়েছে ফিচার ফোন ৷ গত তিন বছরে একলাফে ফিচার ফোন থেকে স্মার্টফোনের ব্যবহার বেড়েছে ৷ ফলে ডিজিট্যাল প্রচারের মাধ্যমেই বেশি সংখ্যক মানুষের কাছে পৌছনো সম্ভব ৷ গ্লোবাল ডিজিট্যাল মার্কেটিং এজেন্সি, আইসোবার ইন্ডিয়ার সিওও গোপা কুমার বলেন, ‘ মোবাইল ব্যবহারকারীরা দিনের বেশিরভাগ সময়টাই কাটান ফেসবুক, টিকটক, হ্যালো, শেয়ার চ্যাট এবং হোয়াটস অ্যাপ করে, তাই নির্বাচনে সমস্ত সোশ্যাল প্ল্যাটফর্ম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে ৷ ভোটার প্রার্থীদের মধ্যে সমস্ত যোগাযোগাদের দূরত্ব মিটিয়ে সেতুর কাজ করবে সোশ্যাল মিডিয়া ৷’ গোপা কুমারের মতে, তবে যেহেতু ফোন স্মার্ট হোক বা ফিচার সবেতেই হোয়াটস অ্যাপ ব্যবহার করা যায় সেহেতু এই সোশ্যাল মিডিয়াই যে সব থেকে বড় কমিউনিকেশন প্ল্যাটফর্ম হয়ে উঠবে তা বলাই বাহুল্য ৷
advertisement
ডিজিট্যাল মিডিয়ায় বিজ্ঞাপনেরও আকর্ষণ বাড়বে ৷ প্রচারের বড় অংশই এবার খরচ হতে চলেছে এই ডিজিট্যাল ক্যাম্পেনে ৷ নির্বাচন স্ট্র্যাটেজিস্ট অরোরার মতে, ‘যেহেতু নীতিগত ভাবে ট্যুইটার ও গুগল কোনও নির্বাচনী বিজ্ঞাপনের সুযোগ দেয় না , সেক্ষেত্রে ডিজিট্যাল মিডিয়ায় সবথেকে বেশি বিজ্ঞাপন দেওয়ার ঝোঁক বাড়বে ফেসবুকে ৷ ’
উদাহরণ হিসেবে বলা যায় আসন্ন ২০২১-এর নির্বাচনের জন্য পশ্চিমবঙ্গের ডিজিট্যাল প্রচার ৷ সম্ভবত পরের বছর এপ্রিল থেকে মে-এর মধ্যে বাংলায় হতে চলেছে নির্বাচন ৷ নির্বাচনী কৌশলবিদ প্রশান্ত কিশোরের সংস্থা Ipac তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তরফে সামলাচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রচার ৷ প্রথম থেকে ডিজিট্যাল মাধ্যমেই চলেছে ভোটের কাজ ও প্রচার ৷ ইতিমধ্যেই Ipac-এর ‘দিদিকে বলো’ ক্যাম্পেন যথেষ্ট সাড়া ফেলেছে ৷ এর মাধ্যমে সাধারণ মানুষ যখন খুশি তখন যেকোনও সমস্যায় সংশ্লিষ্ট দফতরে অভি়যোগ জানাতে ও কথা বলতে পারেন ৷ সম্প্রতি বাংলায় বিজেপিও বিরাট ডিজিট্যাল প্রচারের আয়োজন করে ৷ সেই ডিজিট্যাল সভায় ভোট প্রচারে বক্তব্য রাখেন স্বয়ং বিজেপি মন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ৷
advertisement
বাংলার জনসংখ্যা ৯.৭ কোটি ৷ তার মধ্যে হোয়াটস অ্যাপ, ফেসবুক ও ইউটিউব ব্যবহার করেন যথাক্রমে ৩ কোটি, ২.৫ কোটি ও ২.৬৫ কোটি উপভোক্তা ৷
অন্যদিকে বিহার সবসময়েই ট্র্যাডিশন মেনে চলে ৷ অনেক মানুষের কাছে ফোন থাকলেও নেই ইন্টারনেট ৷ তবে জিও আসার পর গোটা দেশের মতো এখানেও বেড়েছে ইন্টারনেটের ব্যবহার ৷ নেট ব্যবহার করতে ৩৫ শতাংশ মানুষ নতুন করে শুরু করেছেন ৷ গোপা কুমার বলেন, নির্বাচনের সময় এই ফ্যাক্ট ইমপ্যাক্ট ফেলবে ডিজিট্যাল প্রচারে ৷
advertisement
কোনও সন্দেহ নেই, এই কারণেই রাজনৈতিক দল গুলি ইতিমধ্যেই ডিজিট্যাল ক্যাম্পেন শুরু করে দিয়েছে ৷ বর্তমানে নীতিশ কুমারের জনতা দলের সঙ্গে বিজেপির জোট, তাই বিহারের জন্য নির্বাচনী প্রচারে দিল্লি থেকে ভার্চুয়াল সভায় বক্তব্য রাখেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ৷ বিজেপির ইনফর্মেশন ও টেকনোলজি ডিপার্টমেন্টের দায়িত্বে থাকা অমিক মালব্যের মতে, মুখোমুখি জনসভার আকর্ষণ কোনওভাবেই মেটাতে পারবে না ডিজিট্যাল প্রচার ৷
গার্ডিয়ানের প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী, করোনা মহামারি পরিস্থিতিতে প্রথম নির্বাচন হয় দক্ষিণ কোরিয়া ৷ ভোটপ্রক্রিয়া চলাকালীন বুথে মাস্ক মুখে, গ্লাভস হাতে অন্তত একমিটার দূরত্ব রেখে দাঁড়াতে দেখা যায় ভোটারদের ৷ এমনকী, ভোটপ্রক্রিয়ার আগে নিয়ম মেনে স্যানিটাইজেশন এবং তাপমাত্রা পরীক্ষা চলে ৷ সেল্ফ কোয়ারেন্টাইনে থাকা ১৩ হাজার লোককে ভোটপ্রক্রিয়া শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ব্যালটে ভোটদানের অনুমতি দেওয়া হয়েছে ৷ এতেই প্রমাণিত ডিজিট্যাল ক্যাম্পেনের মাধ্যমে প্রত্যেকের কাছে পার্সোনালি ভোট দেওয়ার জন্য অনুরোধ করা যায় ৷
বিজেপির মালব্য বলেন, ডিজিট্যাল ক্যাম্পেনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা অবশ্যই আছে ৷ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিভিন্ন সোশ্যাল হ্যান্ডেলে অ্যাকাউন্ট ও ফলোয়ার্সদের সঙ্গে কথা পার্টির ভাবমূর্তি তৈরিতে অনেকটায় সহায়তা করে ৷ লকডাউনের সময়ে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিটি ভাষণের প্রতিক্রিয়া ডিজিট্যাল মাধ্যমেই সরকারের কাছে পৌঁছেছে ৷
বিহারের প্রধান বিরোধী দল আরজেডি নেতা ও অধ্যাপক প্রফেসর মনোজ ঝাঁ-র মতে, ‘ক্যাম্পেন চলুক মোবাইলে৷ এর জন্য হোয়াটস অ্যাপ আর টিকটক হচ্ছে সেরা মাধ্যম ৷ ফেসবুক ও ইউটিউব ভিডিওকে ব্যবহার করে মানুষের কাছে নিজেদের বক্তব্য পৌঁছে দেওয়া যেতে পারে ৷ ’ যদিও ভোটারদের দরজায় দরজায় ঘুরে ভোটভিক্ষার সনাতনী প্রক্রিয়াতেই আস্থা রাখেন অধ্যাপক ঝাঁ ৷
এসবের শেষে যে কথা না বললেই নয়, এই ডিজিট্যাল ক্যাম্পেনে সবথেকে বড় ভয় হচ্ছে ফেক নিউজের ৷ গ্লোবাল টেক জায়েন্ট ও নির্বাচন কমিশন মিথ্যে খবর ছড়িয়ে পড়া আটকাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে ৷
view comments
বাংলা খবর/ খবর/দেশ/
করোনার জেরে ভোট উৎসব এবার ডিজিট্যালে, পথ দেখাতে চলেছে বিহার নির্বাচন, এভাবে হবে ভোট প্রক্রিয়া
Next Article
advertisement
Rhino rescue: বিপর্যয়ের সময় ভেসে গিয়েছিল তারা, অবশেষে ঘরে ফিরল ১০ গন্ডার! সফল 'অপারেশন রাইনো'
বিপর্যয়ের সময় ভেসে গিয়েছিল তারা, অবশেষে ঘরে ফিরল ১০ গন্ডার! সফল 'অপারেশন রাইনো'
  • ১৩ দিনের অপারেশন রাইনোতে ১০টি গন্ডার উদ্ধার করেছেন বনকর্মীরা

  • বিপর্যয়ের সময় জলদাপাড়া থেকে ভেসে গিয়েছিল বেশ কয়েকটি গন্ডার

  • অক্লান্ত পরিশ্রমের পর বনকর্মীরা গন্ডারগুলোকে জঙ্গলে ফেরাতে সক্ষম হন

VIEW MORE
advertisement
advertisement