#বহরমপুরঃ আজ শিবরাত্রি। কথিত আছে শিবের উপাসনা করলে ফল মেলে। তাই মহাদেবের উপাসনা করে পুজো চলছে গোটা রাজ্যজুড়ে। মুর্শিদাবাদ জেলার শতাব্দী প্রাচীন শিব মন্দির রূপপুর রুদ্রদেব মন্দির। মঙ্গলবার সকাল থেকেই এই মন্দিরে পুজো দিতে ভিড় করেছেন বহু ভক্ত ও সাধারণ মানুষ। নিজের মনস্কামনা নিয়ে ভক্তরা সকাল থেকেই দুধ, গঙ্গাজল ঢালছেন শিবের মাথায়। মুর্শিদাবাদ জেলার শতাব্দী প্রাচীন শহর কান্দি। কান্দি শহরের রূপপুরে অবস্থিত রুদ্রদেব মন্দির। একদা বৌদ্ধ মুর্তিকে শিব মুর্তি হিসেবে পূজিত করা হয় এই মন্দিরে। মুর্শিদাবাদ জেলার অধ্যাপক তথা ইতিহাসবিদ তাপস বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, দ্বাদশ শতাব্দীতে তীব্বত বা নেপাল হিমালয় এলাকা থেকে জৈনক বৌদ্ধ তান্ত্রিক, এই বঙ্গ দেশে আসেন। তারা ময়ুরাক্ষী নদীর ধারে আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি সঙ্গে করে নিয়ে আসেন একটি অক্ষর্ব বৌদ্ধ মুর্তি। সেখানে তন্ত্র সাধনা করতে থাকেন। কান্দি সিংহ বংশীয় জৈনক রুদ্রনাথ সিংহ তান্ত্রিক কামদেব ব্রহ্মচারী শিষ্যত্ব গ্রহণ করে তন্ত্র সাধনা লাভ করেন। পরবর্তীতে কামদেব ব্রহ্মচারীর মৃত্যুর পর রুদ্রদেব সিংহ অক্ষর্ব বুদ্ধ মুর্তি টিকে, রূপপুরে এই জঙ্গলাকৃত জায়গা ছিল সেখানে নিয়ে এসে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমানে যা মূল মন্দির হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
আসলে বৌদ্ধদেবের পাঁচ রকমের মূর্তি আছে। এই মুর্তি অক্ষর্ব মূর্তি হিসেবে পরিচিত। কামদেব ব্রহ্মচারীর সাথে আরও একটি মূর্তি ছিল যা কাল রুদ্র ভৈরব। কাল রুদ্র ভৈরব মুর্তি চুরি যায় ১৯৫০ সালের আগেই। তবে কেও বলে চুরি যায়। কেও বলে গঙ্গা স্মান করাতে গিয়ে পড়ে যায়। জলে পড়ে যাওয়ার পরে কাটোয়ার কাছে নৈহাটি গ্রামে থেকে উদ্ধার করা হয়। সেখানে গ্রামের সাধারণ মানুষ তা প্রতিষ্ঠা করেন। কালরুদ্র মুর্তিটি শিবের ভৈরব মুর্তি, যার বাহন কুকুর। কালরুদ্র ভৈরব নাম অনুসারে নাম করণ হয় রুদ্রদেব মন্দির। আবার কাল রুদ্র নাম অনুসারে এই রুদ্রদেব মন্দির এবং রুদ্র সিংহ নাম অনুসারে এই রুদ্রদেব বলা হত। এই দুটি মত চলিত আছে। বর্তমানে এই বৌদ্ধ মুর্তিটি হরিদ্বার থেকে নিয়ে আসা হয়। তারপর আজও পুজো হয় বিভিন্ন সময়ে। বাঘডাঙ্গা রাজ পরিবার ও জেমো রাজ পরিবার এই বর্তমান মন্দির টি তৈরি করে ১৩০৯ সালে।
পূর্ব দিকে ও পশ্চিম দিকে যে শিব মন্দির আছে দুটি বাঘডাঙ্গা রাজ পরিবারের ও দুটি জেমো রাজ পরিবারের। এই শিব মন্দিরের ওপরে দরজার ওপরে টেরাকোটা কাজ আছে। বর্তমানে শুধু শিবরাত্রী নয় বছরের অন্যান্য সময় পুজো করা হয়। বেশি হয় রবিবারে। অন্যদিকে বছরের অন্যতম উৎসব গাজন উৎসব। চৈত্র মাসের সংক্রান্তিতে বাবা রুদ্রদেব কে পাল্কি করে গোটা শহর পরিক্রমা করানো হয়। যা বছরের পর বছর ধরে চলে আসছে। শিবরাত্রী উপলক্ষে নিজেদের মনস্কামনা পূরণ করতে সকাল থেকেই ভিড় ভক্তদের ।
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।
Tags: Berhampore, Kandi, Mahashivratri 2022, Murshidabad news