মুর্শিদাবাদ: আজ দেশের ৭৪ তম প্রজাতন্ত্র দিবস। স্বাধীন ভারতের এই গুরুত্বপূর্ণ দিনে দাঁড়িয়ে স্মরণ করা যাক বহরমপুর ব্যারাক স্কোয়ার ময়দানের স্মৃতি। যা সিপাহী বিদ্রোহের স্মৃতি বুকে নিয়ে আজও দাঁড়িয়ে আছে একইভাবে।
১৭৫৭-র পলাশীর যুদ্ধে বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলার পরাজয়ের সঙ্গে সঙ্গে পরবর্তী দু'শো বছরের জন্য নিকষ অন্ধকার নেমে এসেছিল সমগ্র ভারতের ভাগ্যাকাশে। কীভাবে বণিকের মানদণ্ড নিয়ে ইংরেজরা হাতে তুলে নিয়েছিল শাসকের রাজদণ্ড তা কমবেশি সকলেই জানেন। কীভাবে একটা আস্ত উপমহাদেশ পর্যবসিত হয়েছিল ব্রিটিশ উপনিবেশে সে ইতিহাসও জানা। কিন্তু জানেন বহরমপুর ব্যারাক স্কোয়ার ময়দান থেকেই একটা সময় ইংরেজ বিরোধী আন্দোলনের শুরু হয়েছিল? এখানেই শুরু হয়েছিল স্বাধীনতার প্রথম যুদ্ধ, অর্থাৎ সিপাহী বিদ্রোহ।
স্বাধীনতা আন্দোলনের সাথে এই ময়দান ওতপ্রোতভাবে জড়িত। একদা বাংলা-বিহার-ওড়িশার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও সম্পদশালী রাজধানী মুর্শিদাবাদকে তাদের রাজত্বের কেন্দ্র বিন্দু করতে ভয় পেয়েছিল ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি। তাই রাজধানী সড়িয়ে নিয়ে গিয়েছিল কলকাতায়। পলাশীর যুদ্ধের কয়েক দশক পরে, ১৭৮৬ সালের ২৫ এপ্রিল স্বতন্ত্র জেলা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছিল মুর্শিদাবাদ। ঐতিহাসিকরা বলেন, নবাবের আমলে যা স্বাধীন বাংলার মূল কেন্দ্র ছিল সেই মুর্শিদাবাদ জেলা থেকেই প্রথম স্বাধীনতা আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল। ১৮৫৭ সালে গোটা ভারতবর্ষজুড়ে যে সিপাহী বিদ্রোহ হয়েছিল, মুর্শিদাবাদের বহরমপুরের ব্যারাক স্কোয়ার ছিল সেই মহাবিদ্রোহের সূতিকাগার। ১৮৫৭ সালের ২৬ জানুয়ারি বহরমপুর ব্যারাক স্কোয়ার থেকেই বিদ্রোহের অগ্নি স্ফুলিঙ্গ প্রথমে ব্যারাকপুর, তারপর ধীরে ধীরে গোটা ভারতবর্ষে ছড়িয়ে পড়েছিল।
আরও পড়ুন: ভারতের স্বাধীনতার লড়াইয়ে কান্দির রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদির পরিবারের নাম ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে
এনফিল্ড রাইফেলের টোটার উপাদানকে কেন্দ্র করে সিপাহী বিদ্রোহের সূচনা হলেও তা অচিরেই ভারতের সাধারণ মানুষের উপর ইংরেজদের অন্যায় শোষণ ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে পর্যবসিত হয়। তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের বহরমপুর সেনা ছাউনির কিছু সেনার বিদ্রোহে অনুপ্রাণিত হয়ে ব্যারাকপুর সেনা ছাউনির সিপাহী মঙ্গল পান্ডে ইংরেজদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে গর্জে ওঠেন। লড়াইয়ের মাঠে কয়েকজন ইংরেজ সৈন্যকে হত্যা করে শেষে নিজের রিভলভার থেকে নিজের বুকে গুলি করেন তিনি।
সেনা বাহিনীর এই বিদ্রোহে ভীত ইংরেজরা ভারতীয়দের সবক শেখাতে মঙ্গল পান্ডের আহত শরীরকে তুলে নিয়ে গিয়ে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দেয়। বহরমপুর ব্যারাক স্কোয়ারে আজও আছে মঙ্গল পান্ডের মূর্তি। পলাশীর যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে বহরমপুর ব্যারাক স্কোয়ার সংলগ্ন চারশো বিঘা জমি লিজ নেয় ইংরেজরা। সিরাজ পরবর্তী সময়ে ইংরেজদের তৈরি ক্রীড়নক নবাবদের ওপর লক্ষ্য রাখতে ব্যারাক স্কোয়ার মাঠের ১২০ বিঘা জমির ওপর তৈরি করা হয় ক্যান্টনমেন্ট। যার নিদর্শন আজও চারিদিকে আছে। বর্গাকার এই ময়দানের চারদিকে রয়েছে চারটি কামান। ভারতের প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস বুকে নিয়ে আজও স্বমহিমায় উজ্জ্বল বহরমপুর ব্যারাক স্কোয়ার ময়দান।
কৌশিক অধিকারী
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।
Tags: Berhampore, Murshidabad news, Republic Day