টানা বৃষ্টিতে ফুঁসছে 'বাংলার দুঃখ' দামোদর
- Published by:Piya Banerjee
Last Updated:
তিনটি ড্যাম থেকে জল ছাড়ার ফলে, দামোদরের বাকি অংশে জলস্তর বাড়ছে।
#পশ্চিম বর্ধমান: দামোদর নদ। আপাতদৃষ্টিতে শান্ত। গতিপথে বিভিন্ন ড্যাম তৈরি করে উত্তাল দামোদরকে শান্ত করা সম্ভব হয়েছে। একটা সময় দামোদর নদকে বাংলার দুঃখ আখ্যা দেওয়া হয়েছিল। প্রতিবছর দামোদরের জল বন্যায় ভাসিয়ে দিত তার গতিপথের আশপাশে থাকা বিভিন্ন গ্রামগুলিকে। চলতি বছরে বর্ষার শুরু এবং ঘূর্ণাবর্তের দ্বৈত প্রভাবে পশ্চিম বর্ধমান সহ রাজ্যের পশ্চিমের জেলাগুলিতে ব্যাপকভাবে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। আর তার জেরেই ফুঁসছে দামোদর। দামোদরের এই ভয়াল রূপ দেখে আতঙ্কিত নদীপাড়ের বাসিন্দারা।
বাংলার দুঃখ দামোদরকে শান্ত করতে গ্রহণ করা হয়েছিল পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরুর আমলে এই পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। সেই পরিকল্পনার দামোদরের উপর ওপর কতগুলি ড্যাম তৈরি করা হয়। যার মধ্যে রয়েছে মাইথন, পাঞ্চেত, দুর্গাপুর। এই ব্যারেজগুলির মাধ্যমে দামোদরের গতিপথ অবরুদ্ধ করে শান্ত করা হয়েছে দামোদরকে। তবে বর্ষার সময় দামোদরের জলস্তর বাড়ে হু হু করে। তখন জল ছাড়তে বাধ্য হয় দামোদরের ওপর তৈরি ড্যামগুলি। রাগে ফুঁসতে থাকে আপাত শান্ত নদীটি। দামোদরের যে রূপ দেখে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন নদীপাড়ের বাসিন্দারা।
advertisement
ইতিমধ্যে দুর্গাপুর ব্যারেজ থেকে 30 হাজার কিউসেক জল ছাড়া হয়েছে। টানা দু'দিনের বৃষ্টিতে দফায় দফায় এই জল ছেড়েছে দুর্গাপুর ব্যারেজ কর্তৃপক্ষ। দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশন এক কর্তা আশ্বস্ত করেছেন, যে পরিমান জল ছাড়া হচ্ছে, তাতে দামোদরের নিম্নবর্তী এলাকাগুলি খুব বিশেষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। তবে দামোদর লোয়ার ড্যামগুলিতে যেভাবে জলস্তর বাড়ছে, তাতে কোনও মতেই নিশ্চিন্ত শান্ত থাকতে পারছেন না নদীপাড়ের বাসিন্দারা। আশঙ্কার প্রহর গুনে দিন কাটছে তাদের। তার মধ্যেই আশঙ্কা বাড়িয়ে দুর্গাপুর ব্যারেজ থেকে বাড়িয়ে আরও পাঁচ হাজার কিউসেক জল ছাড়া সিদ্ধান্ত নিয়েছে ডিভিসি কর্তৃপক্ষ। যে কারণে চিন্তায় ঘুম উড়েছে দুর্গাপুরের বিভিন্ন নদীর কূলবর্তী এলাকার মানুষজনের। অন্যদিকে যারা দামোদরের উপর ভরসা করে সংসার চালান, অর্থাৎ মৎস্যজীবী, নৌকা চালকরাও কাজে বেরোতে পারছেন না। চরম সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন তারাও। প্রার্থনা করছেন বরুনদেবের এই অক্লান্ত বর্ষণ বন্ধ হওয়ার জন্য।
advertisement
advertisement
পাশাপাশি মাইথন এবং পাঞ্চেত ড্যাম থেকেও প্রচুর পরিমাণে জল ছাড়া হয়েছে। অবিরাম বৃষ্টিপাতের জেরে পাঞ্চেত ড্যাম থেকে ছাড়া হয়েছে 9 হাজার কিউসেক জল। সাড়ে আট হাজার কিউসেক জল ছাড়া হয়েছে মাইথন ড্যাম থেকে। এই ব্যারেজ গুলি থেকে ছাড়া জল যখন দুর্গাপুরে এসে পৌঁছবে, তখন দুর্গাপুর ব্যারেজ থেকে আরও জল ছাড়া হতে পারে বলে সূত্রের খবর। তবে সেচ দপ্তরের আধিকারিকরা দাবি করছেন, পরিস্থিতি এখনো আয়ত্তের মধ্যেই রয়েছে। চিন্তার কোন ব্যাপার এখনও পর্যন্ত নেই।
advertisement
তবে তিনটি ড্যাম থেকে জল ছাড়ার ফলে, দামোদরের বাকি অংশে জলস্তর বাড়ছে। যে কারণে পশ্চিম বর্ধমান, পূর্ব বর্ধমান ও হুগলির বিস্তীর্ণ অঞ্চল জলমগ্ন হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিচ্ছে। তাই দামোদর এরউপকূলবর্তী এলাকার বাসিন্দারা প্রার্থনা করছেন, লাগাতার বৃষ্টিতে যেন আবার বাংলার দুঃখ হয়ে না দেখা দেয় দামোদর।
Nayan Ghosh
view commentsLocation :
First Published :
June 18, 2021 10:24 PM IST