প্রেম এবং তার হাত ধরে তৈরি হওয়া যৌন কামনা সচল রাখে এই সংসারের সৃষ্টিচক্রকে। সঙ্গত কারণেই তাই সব সভ্যতায় একটি করে প্রেম এবং যৌনতার দেবী বা দেবতা কল্পনা করা হয়েছে। যাঁদের রূপ যেমন লাগামছাড়া, জন্মের ইতিহাস এবং কার্যকলাপও সেই রকমই বিস্ময়কর! প্রেমের উৎসবমুখর মুহূর্তে একে একে পরিচয় করে নেওয়া যাক গ্রিক দেবী আফ্রোদিতি, রোমান দেবতা কিউপিড এবং ভারতীয় দেবতা কামদেবের সঙ্গে।আফ্রোদিতি (Aphrodite): পরকীয়ার সময়ে নগ্নাবস্থায় ধরা পড়েছিলেন যিনি---
View this post on Instagram
গ্রিসের এই দেবী সাক্ষাৎ সৌন্দর্যের উৎস, ভালোবাসা এবং যৌনতারও। তাঁর নাম থেকেই ইংরেজি অভিধনে এসেছে Aphrodisiac শব্দটি। যে খাদ্য বা পানীয় মানুষের কামোদ্দীপনা জাগিয়ে তোলে, তাকেই বলা হয় Aphrodisiac।
গ্রিক পুরাণ বলে, সময়ের দেবতা ক্রোনাস তাঁর পিতা ইউরেনাসের পুরুষাঙ্গ কেটে ফেলে দিয়েছিলেন সমুদ্রের জলে। সেই কর্তিত পুরুষাঙ্গ থেকে স্খলিত বীর্য সমুদ্রের জল তোলপাড় করে তোলে। এবং সমুদ্রগর্ভ থেকে জন্ম নেন দেবী আফ্রোদিতি।
আফ্রোদিতি নিজের রূপে বশ করতেন দেবলোকের সব পুরুষকে। তাই দেবতাদের রাজা জিউস এবং রানি হেরা তার বিয়ে দেন কুদর্শন হেফাইস্টাসের সঙ্গে। তিনি ছিলেন শিল্পের দেবতা। কুরূপ স্বামী পেয়ে আফ্রোদিতির মন ভরেনি; তাই তিনি স্বর্গলোকের সুপুরুষ দেবতাদের সঙ্গে পরকীয়া চালাতে থাকেন। স্ত্রীকে জব্দ করার জন্য হেফাইস্টাস তৈরি করেন এক জাদু পালঙ্ক। সেখানে যে শোবে, সে বন্দী হবে সোনার শিকলে। এরসের সঙ্গে সঙ্গমকালে সেই পালঙ্কে শৃ্খলাবদ্ধ হয়ে পড়েন আফ্রোদিতি, তাঁর পরকীয়ার বৃত্তান্ত ফাঁস হয়ে যায় দেবলোকে।কিউপিড (Cupid): নিজের কামশরে নিজেকেই বিদ্ধ করেছিলেন যিনি---
View this post on Instagram
রোমের এই দেবতার সঙ্গে বেশ মিল আছে ভারতের কামদেবের। কিউপিডেরও হাতে থাকে তীর-ধনুক। পিঠে থাকে দু'টি বিশাল ডানা। তিনি কামশর নিক্ষেপ করলে মানুষ ভালোবাসায় এবং যৌন উন্মাদনায় পাগল হয়ে ওঠে!
রোমান পুরাণমতে এই কিউপিড সৌন্দর্যের দেবী ভেনাস এবং যুদ্ধের দেবতা মার্সের পুত্র। কখনও বালক-অবস্থায়, কখনও বা যুবাবস্থায় তাঁর ছবি-মূর্তি দেখতে পাওয়া যায়। বলা হয়, সেই সময়ে পৃথিবীতে ছিলেন সাইকি নামের এক অপরূপা রাজকুমারী। তাঁর সৌন্দর্যের প্রশংসা শুনে ঈর্ষাণ্বিত ভেনাস ছেলেকে আদেশ দেন সাইকিকে এক কুরূপ বৃদ্ধের প্রেমে ফেলতে। কিন্তু রাজকুমারীকে দেখে পাগল হয়ে নিজের উপরেই কামশর বর্ষণ করেন কিউপিড। পরিণামে তাঁদের প্রেম হয়। কিন্তু ভেনাস তা মেনে নিতে পারেননি। তিনি সাইকিকে পাতাললোকের রানি পার্সিফোনের রূপের বাক্স চুরি করে আনার শাস্তি দেন। বলেন, এই দুরূহ কাজ করতে পারলে তবেই সাইকির সঙ্গে কিউপিডের বিয়ে হবে।
সাইকি সেই বাক্স আনতে পারলেও কৌতূহলে তা খুলে দেখতে গিয়েছিলেন। পরিণামে বিষের ধোঁয়ায় অজ্ঞান হয়ে যান। এর পর দেবতাদের রাজা জুপিটারের আদেশে তাঁকে অমৃত পান করিয়ে সুস্থ করা হয় এবং কিউপিডের সঙ্গে বিয়ে দেওয়া হয়। কামদেব (Kamadeva): শিবের তৃতীয় চক্ষুর আগুনে ভস্ম হয়ে গিয়েছিলেন এই দেবতা---
Vishwanath Mandir, Kashi. Nandi of Gyanvapi vintage. [1880. Pic possibly auctioned some years ago.]#MahaShivRaatri pic.twitter.com/YQZr8RvCdX
— Kanchan Gupta (@KanchanGupta) March 7, 2016
পুরাণ মতে, কামদেব সবুজ গাত্রবর্ণের এক সুপুরুষ যুবা, যিনি এক বিশেষ ধনুক এবং পাঁচটি বিশেষ তীর ধারণ করে থাকেন। তাঁর স্ত্রীর নাম রতি, বাহন একটি টিয়া পাখি। পুরাণ বলে, কামদেবের এই ধনুকটি একটি আখ দিয়ে তৈরি, অনেকগুলো মৌমাছি একজোট হয়ে সেই ধনুকের ছিলার রূপ নেয়। তাঁর হাতের বাণগুলিও ফুল দিয়ে তৈরি- অশোক, অরবিন্দ বা সাদা পদ্ম, চূত বা আমের মুকুল, মল্লিকা এবং নীলোৎপল বা নীল পদ্ম। এই আখের ধনুকের ছিলা টেনে একে একে যখন পাঁচটি বাণ আমাদের উপর নিক্ষেপ করেন কামদেব, তখনই আমাদের মনে প্রেমের সঞ্চার হয়।
শিবের মনে কামনা সঞ্চার করতে গিয়ে শরীর হারিয়েছিলেন কামদেব। প্রথমা স্ত্রী সতীর স্বেচ্ছামৃত্যুর পর শিব নিজেকে সঁপে দেন গভীর তপস্যায়। কিন্তু সতী মেনা এবং হিমবানের গৃহে পার্বতী রূপে জন্ম নেন। তাঁদের মিলন ঘটাতেই কামদেব শিবের উপরে তাঁর পুষ্পবাণ নিক্ষেপ করেছিলেন। কামনার বশীভূত হয়ে ক্ষিপ্ত শিব তাঁর তৃতীয় চক্ষুটি খুললে তার থেকে বেরিয়ে আসা আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যান কামদেব। কিন্তু তাঁর মৃত্যু হয় না। তাই শরীর ধারণের জন্য বিষ্ণু যখন কৃষ্ণ রূপে এবং লক্ষ্মী যখন রুক্মিণী রূপে পৃথিবীতে আবির্ভূত হলেন, কামদেব তাঁদের প্রথম সন্তান প্রদ্যুম্নের রূপে জন্মগ্রহণ করেন।
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।