হোম /খবর /লাইফস্টাইল /
ছানাবড়া থেকে রসমঞ্জরী... পয়লা বৈশাখে লোভনীয় সব মিষ্টির রেসিপি খুঁজল গুপি গাইন !

Poila Baisakh 2022: ছানাবড়া থেকে রসমঞ্জরী... পয়লা বৈশাখে, লোভনীয় সব মিষ্টির রেসিপি খুঁজল গুপি গাইন ! চটপট জেনে নিন

Poila Baisakh 2022: রসগোল্লা, ছানাবড়া, জিলিপি আরও কত কি! পয়লা বৈশাখে মিষ্টি খুঁজতে এল গুপি গাইন! এবার আপনিও সহজেই বাড়িতে বানাতে পারবেন এই সব মিষ্টি। জেনে নিন হাতে তালি রেসিপি!

  • Last Updated :
  • Share this:

#কলকাতা: পয়লা বৈশাখ মানেই বাঙালির জিভে জল, চোখে লোভ। এই দিন বাড়ি বাড়ি নতুন নতুন রান্না, আর নানা রকম মিষ্টি, নতুন জামা সব কিছু মিলিয়ে একেবারে এলাহি ব্যাপার। বাড়ি ঘর পরিষ্কার করে ঠাকুর পুজো করতে থাকে বাঙালি। বাঙালি এই দিন লক্ষ্মী-গণেশ পুজো করে। নানা রকম মিষ্টি বানায়। সে এক এলাহি ব্যাপার। এই এলাহি ব্যাপারের খবর পৌঁছে গিয়েছে ভূত লোকেও। তারাও ভাবতে শুরু করেছে যাই গিয়ে মিষ্টি খাই। কিন্তু ভূত দের ভবিষ্যৎ নিয়ে কলকাতায় আবার নানা সমস্যা। ভূতদের তাড়ানোর জন্য মানুষরা উঠে পড়ে লেগেছে। এই সময় কলকাতায় মিষ্টি খেতে যাওয়াটা কী ঠিক হবে! দোনা মোনায় পড়ে যায় ভূতেরা।

সমস্যার সমাধান করতে এগিয়ে আসেন ভূতের রাজা। বললেন, 'আহা মিষ্টি খাবে? তা হাতে তালি দাও না বাপু!' সব ভূতেরা এক সুরে বলে ওঠে,'না না আমরা বাঙালির বাড়ি থেকে মিষ্টি খাব এবার। আর সেই মিষ্টি আনতে হবে।' অতএব ডাক পড়ল গুপি গায়েনের। তাঁকেই বলা হল গিয়ে মিষ্টি নিয়ে আসতে। আবার কী মিষ্টি খাবে তাও ঠিক করে দিল ভূতেরা। রসমঞ্জরী, এলোঝেলো, ছানাবড়া এই তিন মিষ্টিই চাই। তাও আবার যে সে বাড়ি থেকে নয় বলরাম মল্লিকের বাড়ির মিষ্টিই চাই। কী আর করা। গুপিকে নামতে হল মাঠে।

কলকাতার রাস্তায় নেমে গুপির তো সে যায় যায় অবস্থা। এদিকে গাড়ি ওদিকে গাড়ি। হেঁটে হেঁটে যাওয়াই তো বিপদ। কিন্তু তালি তো একবারই দেওয়া যাবে, তাও কেবল মিষ্টি নিয়ে ফেরার সময়। অগত্যা অলি গলি খুঁজে যদুবাবুর বাজারে পৌঁছল গুপি। এক ভদ্র লোককে দেখে বলল,' দাদা আমি সেই বিখ্যাত গুপি গায়েন, মনে আছে আমাকে? মিষ্টির খোঁজে এসেছি বলতে পারেন মিষ্টি কোথায় পাই। বলরাম মল্লিকের মিষ্টি?' ভদ্রলোকের বেজায় হাসি। 'আপনি যদি গুপি গাইন হন তাহলে তালি দিয়ে মিষ্টি খান না। কী দরকার দোকান খোঁজার?' গুপি চটে গিয়ে বলে,'আমার পোশাক দেখে বুঝছেন না আমিই গুপি?' এবার ভদ্রলোক পাগল কোথাকার বলে সোজা হাঁটা দিল। গুপি তালি মেরে ফোন আনল হাতে। তালি মেরে মাথায় আনল বুদ্ধি। গুগল থেকে জিপিএস অন করে সোজা বলরাম মল্লিকের বাড়ি।

গিয়েই বললেন, আমাকে মিষ্টি দিন তো এই তিন রকম মিষ্টি। বাড়ির লোক বললেন এখানে কেন এসেছেন, 'দোকানে গিয়ে কিনে নিন।' গুপি এবার রেগে আগুন। 'না, আমার আপনার বাড়িতে বানানো মিষ্টিই চাই। দোকানেরটা না। আমি গুপি গায়েন। বিখ্যাত গুপি গায়েন। না দিলে তালি দিয়ে আপনাদের সব মিষ্টি নষ্ট করে দেব।' বলেই তালি দিতে গেল গুপি। তখনই বাড়ির এক বয়স্কা মহিলা এসে হাত চেপে ধরলেন গুপির।  সবাইকে বললেন শুভদিনে এসেছে যখন যা আছে দাও না।' ও গুপি হোক বা যেই হোক মানুষ তো। শুভদিনে ফেরাতে নেই। তবে গুপির তো শুধু নিজে খেলে হবে না ভূত কুলের জন্যও নিয়ে যেতে হবে। গুপি আবার বলল, 'আমাকে একটু বেশি করে দেবেন আমি ভূতেদের জন্য নিয়ে যাব।' বুড়িমা বললেন, 'ঠিক আছে দেব, তোমাকে রেসিপিও বলবো। চাইলে নিজেরা বানিয়েও খেতে পারবে।' বলেই তিনি রেসিপি বলতে শুরু করলেন।

photo source collected photo source collected

রসমঞ্জরী:

কী কী লাগবে:

কলাইয়ের ডাল ২০০ গ্রাম, চালের গুঁড়ো ৪ টেবিল চামচ, মৌরি ১ টেবিল চামচ, চিনি ২০০ গ্রাম, জল ১ কাপ, পাতলা ক্ষীর ১ কাপ, সাদা তেল বা ঘি ভাজার জন্য।

কীভাবে বানাবেন:

সারারাত ডাল ভিজিয়ে পরদিন ভাল করে বেটে, ফেটিয়ে নিন। ওর মধ্যে চালের গুঁড়ো ও মৌরি মিশিয়ে আবার ফেটিয়ে নিন। কড়াইতে তেল গরম করুন। একটা দুধের খালি প্যাকেট কোনের মতো করে কেটে নিন, ডালবাটা ভরে মুখটা বন্ধ করে দিন। নীচের দিকে ছোট করে কেটে দিয়ে ছানার জিলিপির মতো গরম তেলে ছাড়ুন। ভাল করে ভেজে তুলে নিন। চিনির পাতলা রস তৈরি করে ভাজা জিলিপি রসে দিন। রস ঢুকলে প্লেটে সাজিয়ে ক্ষীর ছড়িয়ে পরিবেশন করুন।

photo source collected photo source collected

ছানাবড়া:

কী কী লাগবে:

ছানা ২৫০ গ্রাম, মিহি করে বাটা ছোলার ডাল ৩ টেবিল চামচ, চিনি ২০০ গ্রাম, সাদা তেল ভাজার জন্য, এলাচদানা ২০টি, সামান্য খাবার সোডা।

কীভাবে বানাবেন:

ছানা ঝুলিয়ে জল ঝরিয়ে নিন। তারপর ছানা বেটে ছোলার ডালের সঙ্গে মেশান। মিশ্রণটি ভাল করে ফেটিয়ে নিন। এই সময় খাবার সোডা দিন। এবার গোল গোল বড়া বানিয়ে প্রত্যেকটির মধ্যে একটি করে এলাচদানা ভরে দিন। তেল গরম হলে বড়া লাল করে ভেজে তুলে নিন। চিনির পাতলা রস বানিয়ে বড়াগুলো ছেড়ে দিন। ঠান্ডা হলে রস থেকে তুলে পরিবেশন করুন।

photo source collected photo source collected

এলোঝেলো:

কী কী লাগবে:ময়দা ২৫০ গ্রাম, ঘি তিন টেবিল চামচ, সাদা তেল ভাজার জন্য, চিনি ২০০ গ্রাম

কীভাবে বানাবেন:

ময়দা ঘি দিয়ে ময়ান দিন। প্রয়োজনমতো গরম জল দিয়ে ঠেসে ঠেসে মাখুন। এরপর লুচির মতো বেলে নিন। এর উপর ছুরি দিয়ে লম্বালম্বিভাবে ৪ বা ৫টি দাগ কাটুন। পুরোটিকে মাদুরের মতো গুটিয়ে মাথাটা ভাল করে মুড়ে গরম তেলে ভেজে তুলুন। অন্য একটি কড়াইতে চিনি দিন। চিনি অল্প গলতে শুরু করলে এলোঝেলোগুলো দিয়ে দিন। আঁচ কমিয়ে নাড়তে থাকুন। চিনি গলে দানাদারের মতো লেগে গেলে নামিয়ে নিন। ঠান্ডা করে এয়ারটাইট পাত্রে তুলে রাখুন।

রেসিপি বলা শেষ করে ঘর থেকে এই তিন রকম মিষ্টি ডালা ভর্তি করে সাজিয়ে এনে গুপির হাতে দিলেন। মিষ্টি দেখেই গুপি টপাটপ দু-চারটে মুখে পুরে দিল। তার তো খুশির শেষ নেই। এত মিষ্টি আবার মিষ্টি বানানোর রেসিপিও পাওয়া গেল। আহা কী মজা। এই রেসিপিগুলো বাঘাকে দেব, মনে মনে ভাবল সে। ও বেটাই বানাবে এগুলো। বাঘা বুড়িমাকে প্রনাম করে বেরোতে যাবে তখন বুড়িমা ডাকলেন। বললেন, শোন বাবা, তুমি কিন্তু বলরাম মল্লিকের বাড়িতে আসনি। এটা অন্য বাড়ি। তোমায় আগে কিছু বলিনি। তাই দোকানে যেতে বলছিলাম। আসলে পয়লা বৈশাখে সব বাড়িতেই দোকানের থেকেও ভাল মিষ্টি তৈরি হয়। যাও এবার বলরামের দোকান থেকে মিষ্টি কিনে খাও।' কথা শুনে তো অবাক গুপি। এবার কী হবে? তাকে তো ওই দোকানের মিষ্টিই আনতে বলা হয়েছিল। কিন্তু এ মিষ্টির যা স্বাদ তাতে আর কোথাও যাওয়ার দরকার নেই। বাঙলির জয়। বলেই হাতে তালি দিয়ে সোজা ভূতলোকে হাওয়া। বুড়িমার মুখে একগাল মাছি।

Published by:Piya Banerjee
First published:

Tags: Poila Baisakh 2022