শরীরের যে কোনও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গেই ক্যানসার হতে পারে। কোনও জায়গায় চাকা বা পিণ্ডের মতো কিছু দেখা দিলে তা ক্যানসারের লক্ষণ হতে পারে। অবশ্যই যদি তা বেশি দিন থাকে। তবে একেক ক্যানসারের লক্ষণ একেক রকম। বিশেষজ্ঞরা বলেন, সাধারণত, কোনও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে বা টিস্যুতে অতিরিক্ত বৃদ্ধি দেখা দিলে এবং তা বাড়তে থাকলে ক্যানসারের প্রবণতা থাকে। সেক্ষেত্রে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিৎ। এছাড়াও গবেষণা করে ক্যানসারের কিছু উপসর্গর কথা জানা যায়, যা শরীরে দেখা দিলে বিশেষ সতর্ক হওয়া প্রয়োজন।
বিশ্বে মৃত্যুর অন্যতম বড় কারণ এই মারণ রোগ। প্রতি বছর ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে ৯.৬ কোটিরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়। ব্রেস্ট ক্যানসার, ফুসফুসের ক্যানসার, থাইরয়েড ক্যানসার মহিলাদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। এদিকে ফুসফুসে ক্যানসার, প্রস্টেট ক্যানসার, কোলোরেক্টাল ক্যানসার, লিভার ক্যানসার পুরুষদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। আজ বিশ্ব ক্যানসার দিবসে জেনে নেওয়া যাক কোন ক্যানসার পুরুষদের বেশি হয়ে থাকে!
১) প্রস্টেট ক্যানসার
প্রথমের দিকে এর প্রকোপ তেমন না থাকলেও পরে প্রস্টেট ক্যানসারের পরিমাণ বাড়তে থাকে। বর্তমানে এই ক্যানসারে আক্রান্তের সংখ্যা অনেকটাই বেশি। এক্ষেত্রে প্রস্টেট গ্ল্যান্ডের টিস্যুতে ক্যানসারের কোষ দেখা দেয় এবং তা পরে ইউরিনারি সিস্টেমে ছড়িয়ে যায়। এর কোনও উপসর্গ নেই। তবে, একদম প্রাথমিক পর্যায়ে এক্ষেত্রে হাড়ে ব্যথা হতে পারে, ইউরিনে ব্লাড আসতে পারে বা ইউরিন রিলিজের সময়ে টান লাগতে পারে। এই ক্যানসার এড়িয়ে যেতে স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া প্রয়োজন ও ধূমপান ছেড়ে দেওয়া দরকার।
২) ফুসফুসে ক্যানসার
সাধারণ ধূমপান করলে এই ক্যানসার হওয়ার প্রবণতা থাকে। যদিও ধূমপান না করলেও এই ক্যানসার হয়। এটি অন্যতম মারণ ক্যানসার, যা সারিয়ে তোলা সে ভাবে যায় না। তামাকজাত দ্রব্য, পরিবেশ দূষণ ও এই ধরনের জিনিস থেকে এই ক্যানসার হতে পারে। এক্ষেত্রে কাশি, শ্বাসে সমস্যা, বুকে ব্যথা, শ্বাস নিতে গেলে আওয়াজ হওয়া বা কাশিতে রক্ত আসার মতো ঘটনা দেখা দিতে পারে।
৩) কোলোরেক্টাল ক্যানসার
কোলোন বা রেক্টামে এই ক্যানসার হয়ে থাকে। সাধারণত বেশি বয়সের মহিলা বা পুরুষদের এই ক্যানসার দেখা দেয়। ওবেসিটি, ধূমপান, পেটে জ্বালা ভাব, পেটের সমস্যা এই ক্যানসারের প্রবণতা বাড়িয়ে দেয়। এছাড়াও কারও পরিবারে এই ক্যানসার কোনও দিন হয়ে থাকলে, ফাইবার-জাতীয় খাবার কম খেলে বা রেড মিট বেশি খেলেও এই ক্যানসার হয়ে থাকে। রেক্টাল ব্লিডিং, পেটে ব্যথা, পেটের সমস্যা, হঠাৎ ওজন কমে যাওয়া এমন কিছু উপসর্গ থাকলে চিকিৎসকরে পরামর্শ নেওয়া উচিত। চিকিৎসকরা বলছেন, প্রতি পাঁচ থেকে ১০ বছরে কিছু না হলেও ৫০ বছরের বেশি বয়সের মানুষদের একবার স্ক্যান করিয়ে নেওয়া উচিৎ।
৪) লিভার ক্যানসার
লিভার ক্যানসার শুধুই লিভারের ক্ষতি করে এমন নয়, এটি লিভার থেকে অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গে দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে। জন্ডিস, খিদে না পাওয়া, পেটে অকারণ ব্যথা হলে এই নিয়ে সতর্ক হতে হবে। এক্ষেত্রে অ্যালকোহলের মাত্রা কমানো, ব্যায়াম করা, খাবার খাওয়া ঠিক করা, ওজন নিয়ন্ত্রণ, হেপাটাইটিস B ও হেপাটাইটিস C ভাইরাস থেকে নিজেকে সুস্থ রাখা অত্যন্ত প্রয়োজন। যদি এর একটিও উপসর্গ থাকে শরীরে, তাহলে অবশ্যই ফেলে না রেখে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন!