১৭ দিন আইসোলেনে (Isolation) থেকে রিপোর্ট নেগেটিভ (Covid negative) এলে কিছুটা স্বস্তি মিলছে ঠিকই। কিন্তু কোভিডের প্রকোপ এত দ্রুত চলে যাওয়ার নয়। বরং পোস্ট-কোভিড (Post Covid) পর্যায়ে বেশ কিছু সমস্যা মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে যা আরও উদ্বেগজনক। এই সমস্যাগুলি অধিকাংশ সময়ে এতই নিঃশব্দে ঘটছে যে বুঝে উঠতেই অনেকটা দেরি হয়ে যাচ্ছে। আর তাই কোভিড নেগেটিভ হলেও চিকিৎসকরা সতর্ক থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন। বিশেষ করে প্রবীণ রোগী ও যাঁদের কো-মর্বিডিটি (Co-morbidity) রয়েছে, তাঁদের কোভিড ১৯ থেকে সেরে ওঠার পরেও নিয়মিত বেশ কিছু পরীক্ষা করার পরামর্শ দিচ্ছেন কলকাতার বেল ভিউ ক্লিনিকের মেডিসিনের চিকিৎসক তথা ক্রিটিক্য়াল কেয়ার বিশেষজ্ঞ কাজি সামসুজ্জামান। কো-মর্বিডিটি না থাকলেও ৬ সপ্তাহ থেকে ৬ মাস ক্লান্তি, প্রায়ই জ্বর জ্বর ভাব, পেটের সমস্যায় রোগী ভুগতে পারেন। এছাড়া ৬ মাস পর্যন্ত স্বাদ-গন্ধ ফিরে না আসার মতো সমস্যাও রয়েছে। এই সমস্যাগুলিই ক্যানসার রোগী, ডায়াবিটিক রোগী, বা যাঁর কিডনি বা অঙ্গ ট্রান্সপ্লান্ট হয়েছে তার মধ্যেও ভয়াবহ আকার নিতে পারে।
চিকিৎসক বলছেন, কোভিডের (Corona) পরে বহু রোগীরই হৃদযন্ত্র দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। তাই কিছু ক্ষেত্রে রোগীকে কোভিড নেগেটিভ হওয়ার পরেও ব্লাড-থিনার দেওয়া হচ্ছে। করোনা আক্রান্ত থাকাকালীন যা যা সমস্যা হতে পারে সেই নিয়ে ইতিমধ্যেই মানুষ অনেকটাই অবগত। কিন্তু কোভিড পরবর্তী সময়ে শরীরের কী প্রভাব পড়ছে, তা বোঝার জন্য চিকিৎসকরা অন্তত তিন মাস নিয়মিত রোগীকে চেক আপের মধ্যে রাখছেন। কোভিড পরবর্তী সমস্যা ৬ সপ্তাহ থেকে ৬ মাসের মধ্যে হতে পারে বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসক কাজি সামসুজ্জামান।
এই সমস্যাগুলি বুঝতেই ৩ মাস অন্তর ইকো-কার্ডিওগ্রাফি এবং প্রতি মাসে ডি-ডাইমার টেস্ট করার পরামর্শ দিচ্ছেন তিনি। দ্বিতীয় ঢেউয়ে কোভিড আক্রান্তদের মধ্যে একটি বিষয় লক্ষ্য করা যাচ্ছিল, বারবার RT-PCR টেস্ট করা হলেও কোভিড আক্রান্তের রিপোর্ট নেগেটিভ আসছিল। যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। তাই কোভিডের উপসর্গ থাকলে, রিপোর্ট নেগেটিভ এলেও সিটি স্ক্যান এত গুরুত্বপূর্ণ। এমনকি, কোভিড থেকে সেরে ওঠার পরেও সিটি স্ক্যান করার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা।
এছাড়াও চিকিৎসকরা অ্যান্টিবডি টেস্ট, সিবিসি (Complete Blood count),গ্লুকোজ, কোলেস্টেরল টেস্ট, নিউরো ফাংশন টেস্ট, ভিটামিন ডি টেস্ট, ইত্যাদি করার পরামর্শ দিচ্ছেন। কারণ কোভিড পরবর্তী পর্যায়ে নিঃশব্দে শরীরে নানা রকম প্রভাব ফেলছে এই মারণ ভাইরাস। যার তল পেতে এই পরীক্ষাগুলিই একমাত্র পথ।
চিকিৎসক কাজি সামসুজ্জামানের কথায়, "কোভিডের প্রথম ঢেউয়ের থেকে দ্বিতীয় ঢেউয়ে ফুসফুস ক্ষতিগ্রস্ত রোগীর সংখ্যা বেশি দেখা যাচ্ছে। এর জেরে খুবই দুর্বল হয়ে পড়ছে ফুসফুস। তবে ফুসফুস ছাড়াও অন্যান্য সমস্যাও রয়েছে। অ্যাবডমিনাল সমস্যা বা GI (Gastrointestinal) problem দেখা যাচ্ছে কোভিড থেকে সেরে ওঠা রোগীদের মধ্যে। যেমন ডায়রিয়া, পেট ব্য়থা, বমি ভাব ইত্যাদি দেখা যাচ্ছে। কোভিডের ফলে শরীরে সাইটোকাইন (Cytokine) মাত্রা অন্যান্য অঙ্গ প্রত্যঙ্গের উপরে সরাসরি প্রভাব ফেলে। কোভিড মানেই শুধু ফুসফুসের সমস্যা নয়। বরং পেটের সমস্যাগুলিও একই ভাবে গুরুতর রূপ নিতে পারে কোভিড পরবর্তী সময়ে।"
তবে কোভিড যে কতটা ক্ষতিকর তা জানাতে গিয়ে সামসুজ্জামান বলছিলেন তাঁরই এক রোগীর অভিজ্ঞতা। কিডনি ট্রান্সপ্লান্টের সেই রোগী মিউকরমাইকোসিসের সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। এর পরে ধীরে দাঁত ক্ষয়ে যেতে শুরু করে। মুখ জুড়ে নানা রকম ছাপ ফুটে ওঠে। এর মধ্যেই হঠাৎ দুচোখেরই দৃষ্টি হারান সেই প্রবীণ ব্যক্তি। দ্রুত অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন ছিল। কিন্তু তার বয়স ও শারীরিক পরিস্থিতির কথা জানিয়ে সেই রোগীর পরিবার অস্ত্রোপচারে রাজি হয়নি। সকাল ৮টায় হাসপাতাল থেকে ছাড়িয়ে ওই রোগীকে বাড়ি নিয়ে যাওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে তাঁর মৃত্যু হয়। এর পরেও কি কোভিড পরবর্তী পর্যায় নিয়ে সতর্ক হবেন না?
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।
Tags: Coronavirus