#কলকাতা: ওমা সে তো মাথা মোছার জিনিস। গা-হাত-পা মোছারও বটে। তবে কী না গামছাকে যদি আপনি এই স্বল্প গণ্ডিতে বেঁধে ফেলেন, তা হলে সব গেল। কারণ গামছাকে অত হেলাফেলা করার দিন কিন্তু আর নেই।
এমনিতে গামছা হল গিয়ে এক্কেবারে খাঁটি মাল্টিটাস্কার। গা মোছে বলে তার নাম গামছা হয়েছে ঠিকই, কিন্তু হিসেব অতো সহজ নয় বস। বাঙালির জুতো সেলাই to চণ্ডীপাঠ, সবেতেই তিনি স্বমহিমায় বিরাজমান। তেল মেখে গামছা কাঁধে দাদু স্নান করতে যান, ওদিকে পুজো-বিয়ে-উপনয়ন-শ্রাদ্ধে ঘটের ডগায় বসে রয়েছে গামছাটি, জেলে আবার গামছা দিয়েই কুচো মাছ ধরে, মুটের মাথায় গামছার বিড়ে। মোট কথা আমরা তেমন পাত্তা না দিলেও গামছা ছাড়া কিন্তু বাঙালির দৈনন্দিন জীবন থেকে পালা-পার্বণ, এক্কেবারে অচল। সদ্যই গামছার দরটা একটু হলেও বেড়েছে। বাড়ির বারান্দায় তারে ঝোলানো হেলাফেলার গামছা কিন্তু এখন বিবি রাসেলের হাত ধরে আন্তর্জাতিক হয়েছে ৷ আর এরপরেই কাহানি মে মোক্ষম একটা ট্যুইস্ট মেরে হঠাৎই গামছা ঢুকে পড়েছে এক্কেবারে সটান সাজঘরে। একফালি গামছা দিয়ে এখন কী না হচ্ছে। বহুদিন ধরেই চলছে গামছা ফ্যাশন ৷ তবু নিত্যনতুন রূপে ধরা দিচ্ছে নতুন নতুন করে ৷ এ বারের পুজোতেও মারকাটারি ইন এই গামছা চেক। প্রথমত সুতির কাপড়। গরমে পারফেক্ট। দ্বিতীয়ত ইউনিক। আর এতেই বাজিমাৎ।
প্রথমে আসা যাক শাড়িতে। গামছা চেকের শাড়ি এখন দারুন ট্রেন্ডি। একটু ভাল বুটিক কালেকশনে চোখ রাখলেই হাজার একটা গামছা চেকের শাড়ি পেয়ে যাবেন হাতের কাছে। সকালে পুজো দিতে গেলে আদি সাদা-লাল গামছা চেক পরুন। সবচেয়ে ভাল লাগবে আটপৌরে ধাঁচে পড়লে। চুল খোলা থাক। কপালে ছোট্ট লাল টিপ আর গাঢ় কাজল। শুধু কিন্তু গামছা শাড়িতে আটকে থাকলে চলবে না। আর হ্যাঁ, ম্যাচিক মাস্কটা মুখে রাখতেও ভুলবেন না যেন ।
এ বারের পুজো এমনিতেই অনেকটা ঘরোয়া । বারোয়ারিতে রাত জেগে আড্ডার আসর বসবে কম, প্যান্ডেল হপিং প্রায় বন্ধ...তাই এ বছর ঘরে বসেই পুজোর স্বাদ পেতে নরম, হাল্কা, সুতি, মোলায়েম কাপড়েরই কদর বেশি । এমতাবস্থায় গামছা একেবারেই শ্রেষ্ঠ পছন্দ ।
শুধুই শাড়ি নয়, এই গরমে পরতে পারেন গামছার ব্লাউজও । ব্লক কালার সুতি বা খাদির শাড়ির সঙ্গে কনট্রাস্টে পরুন গামছা চেক ব্লাউজ। দুর্দান্ত মানাবে। তবে হ্যাঁ, পুজো বলে কথা। ব্লাউজেও থাকতে হবে স্পেশ্যালিটি। থ্রি-কোয়ার্টার বা গ্লাস স্লিভসের সঙ্গে গামছা চেকের কুঁচি বা ফ্রিল ট্রাই করতে পারেন। ঘটি হাতা ব্লাউজও সাবেকি সাজের সঙ্গে ফাটাফাটি। আর জরা হাটকে সাজতে চাইলে কোল্ড সোল্ডার তো আছেই। ফুল হাতাও ট্রাই করতে পারেন। তবে অবশ্যই সকালের দিকে। না হলে গরমের হাত থেকে আপনাকে কে বাঁচাবে?
এ তো গেল শাড়ি-ব্লাউজের কথা। তবে পুজো হলেও শাড়িতে ‘না’ হতেই পারে। সেক্ষেত্রেও হাজির হয়ে যাবে গামছা চেক। লং ম্যাক্সি ড্রেস এখন দারুন ইন। গামছা চেক ড্রেস বাছতে পারেন। অফ শোল্ডার সুতির লং গাউন দারুন মানাবে পুজোর সকালে ৷ আরও একটা পোশাক কিন্তু এখন ইয়ং জেনারেশনের হট লিস্টে। লং স্কার্ট আর র্যাপার। আর সেখানেও অবশ্যম্ভাবী গামছা। ব্লক কালারের স্কার্টে থাকতে পারে গামছা পাড়। বা পুরো স্কার্টটাই চেকের ওপর হতে পারে। আবার প্লেইন সুতির স্কার্টের সঙ্গে টাই-আপ করতে পারেন গামছা চেক টপও।
শুধু কী জামাকাপড় পরলেই হল? সঙ্গে গয়না না হলে আর বাঙালির সেরা উৎসব কী? গামছা প্রিন্টের গয়নাও কিন্তু হট কেকের মতো বিক্রি হচ্ছে বাজারে। কী নেই সেখানে? ব্যাঙ্গলেস থেকে নেক পিস, দুল থেকে আংটি সবটাই পাবেন।
বাংলার কার্তিক ঠাকুররা ভাবছেন, সব সাজগোজ শুধুই মেয়েদের বেলা। ছেলেরা যেন বানের জলে ভেসে এসেছে। এমনকী গামছাও বোধহয় তাঁদের মোটে পাত্তা দিচ্ছে না। আজ্ঞে না, এই ধারণা কিন্তু একেবারেই ভুল। গামছা চেক শার্ট, পঞ্জাবিতে গামছার পোঁচ, চেক কুর্তা, গামছা পেড়ে ধুতি সবটাই দোকানে রেডি আপনারই জন্য।
এখন শুধু একটাই কথা বলার, গামছাকে অত তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করবেন না হে!
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।