#কলকাতা: ৩০ নভেম্বরের মধ্যে বকেয়া ফি দিতে হবে। ফি না দিতে পারলে ৮ ডিসেম্বরের পর থেকে ক্লাসে অংশগ্রহণ থেকে বাদ যেতে পারেন পড়ুয়ারা। বুধবার থেকে এমনই নোটিস অভিভাবকদের ইমেল মারফত পাঠাতে শুরু করেছে লা মার্টিনিয়ার স্কুল কর্তৃপক্ষ। তবে স্কুল কর্তৃপক্ষের দাবি হাইকোর্টের নির্দেশ মোতাবেকই অভিভাবকদের ইমেল করে বলা হচ্ছে অবিলম্বে বকেয়া টাকা দেওয়ার জন্য।
এ প্রসঙ্গে লা মার্টিনিয়ার স্কুলের সেক্রেটারি সুপ্রিয় ধর বলেন " হাইকোর্টের নির্দেশ রয়েছে সেই অনুযায়ী আমরা ৩০ নভেম্বরের মধ্যে বকেয়া ফি দিতে বলেছি। এই সময়সীমার মধ্যে যদি কেউ বকেয়া ফি না দিতে পারে তাহলে ৮ ডিসেম্বরের পর থেকে ক্লাসে অংশগ্রহণের সুযোগ তাকে নাও দেওয়া হতে পারে। আমরা যে নোটিসটি দিয়েছি তা পুরোটাই হাইকোর্টের মোতাবেক।"
এ প্রসঙ্গে স্কুল কর্তৃপক্ষের দাবি প্রায় সাড়ে ৫ কোটি টাকা ফি বকেয়া রয়েছে। তবে শুধুমাত্র লকডাউন এর সময় থেকে নয়, লকডাউনের অনেক আগে থেকেই অনেক অভিভাবকই ফি দেয়নি। তাই অভিভাবকদের ইমেল মারফত এই নোটিস পাঠানো হচ্ছে বলেই দাবি স্কুল কর্তৃপক্ষের। হাইকোর্টের নির্দেশ মোতাবেক লা মার্টিনিয়ার স্কুল কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যেই রিভাইজড ফি স্ট্রাকচার ও করেছে বলে দাবি স্কুল কর্তৃপক্ষের। সেই রিভাইজড ফি স্ট্রাকচার অনুযায়ী বকেয়া ফি দেওয়ার কথা বলা হয়েছে অভিভাবকদের বলেই জানিয়েছেন স্কুলের সেক্রেটারি।
তবে শুধু লা মার্টিনিয়ার স্কুল নয় কলকাতার বেশ কয়েকটি বেসরকারি স্কুল এই পথে হাঁটতে চলেছে বলেই খবর। ইতিমধ্যেই সাউথ পয়েন্টের তরফে অভিভাবকদের হাইকোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী কি কি করনীয় সেই প্রসঙ্গে বিস্তারিত-নোটিস পাঠানো হয়েছে। কালীপুজোর পরে আরও বেশ কয়েকটি বেসরকারি স্কুল এই পথেই হাঁটতে চলেছে বলেই এখনও পর্যন্ত জানা গিয়েছে। অনেকেই অবশ্য অভিভাবকদের ওপর পাল্টা চাপের কৌশল হিসেবে স্কুল গুলির এই ধরনের নোটিস জারি করছে বলেই ব্যাখ্যা করছেন। যদিও স্কুল কর্তৃপক্ষের তরফে এই ধরনের নোটিস জারির পর পরই পাল্টা কৌশল নিতে শুরু করেছেন অভিভাবকদের অ্যাসোসিয়েশন গুলিও।
ইউনাইটেড গার্জেন অ্যাসোসিয়েশনের তরফে বৃহস্পতিবারই শিশু সুরক্ষা কমিশনের কাছে ডেপুটেশন ও অভিযোগ জানানো হয়। হাইকোর্টের নির্দেশ মোতাবেক রিভাইজড ফি স্ট্রাকচার ও non-academic ফি নেওয়ার ব্যাপারে গড়িমসি করছে একাধিক বেসরকারি স্কুল বলে অভিযোগ এই অভিভাবক অ্যাসোসিয়েশনের। শুধু তাই নয় অনেক স্কুলই হাইকোর্টের নির্দেশ মানছে না বলেও সরব হয়েছেন অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে যুক্ত অভিভাবকরা।এ প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে ইউনাইটেড গার্জেন অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক সুপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন " অনেক স্কুলই হাইকোর্টের নির্দেশ মানছে না। রিভাইজড ফি স্ট্রাকচার করা হলেও অনেক ক্ষেত্রেই অনেকগুলি নানান রকম গরিমশি করছেন। আমরা এই বিষয়গুলি নিয়ে স্কুল শিক্ষা দফতর ও রাজ্য সরকারের কাছেও ডেপুটেশন দেব। পরবর্তী ক্ষেত্রে আন্দোলনে নামার কথা আমাদের ভাবতে হবে।"
২০ শতাংশ টিউশন ফি মকুব এবং non-academic ফি নিতে পারবেনা স্কুল গুলি। এই মর্মে কলকাতা হাইকোর্ট নির্দেশ দেয়। কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করে কলকাতার বেশিরভাগ বেসরকারি স্কুল। সুপ্রিম কোর্টের এস তাদের আবেদন খারিজ করে জানিয়ে দেয় ফি সংক্রান্ত বিষয়ে হাইকোর্টের নির্দেশে সুপ্রিম কোর্ট কোন হস্তক্ষেপ করবে না। তারপর কলকাতা সহ রাজ্যের বেসরকারি স্কুল গুলি রিভাইজড ফি স্ট্রাকচার করতে থাকে। ৩১ অক্টোবরের মধ্যে পরিবর্তিত ফি স্ট্রাকচার করার কথা বলা হলেও অনেক স্কুলই ওই সময় সীমার মধ্যে রিভাইসড ফি স্ট্রাকচার করছে না বলেও সরব হয়েছেন অভিভাবকরা। যদিও আবার বেশ কিছু স্কুল নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে পরিবর্তিত ফি স্ট্রাকচার করে অভিভাবকদের কাছ থেকে পুনরায় ফি নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করে দিয়েছে। সব মিলিয়ে হাইকোর্টের নির্দেশ না মানার অভিযোগ তুলে এবার কার্যত আন্দোলনে নামতে ফের শুরু করেছেন যে অভিভাবক অ্যাসোসিয়েশন এর সদস্যরা, সেই বিষয়টা কার্যত নিশ্চিত।
সোমরাজ বন্দ্যোপাধ্যায়