কলকাতা: সেচমন্ত্রী পার্থ ভৌমিককে জেলে ভরে দেওয়ার হুঁশিয়ারি! তাও আবার বিধানসভায় অধিবেশনের মধ্যে? বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর হুমকির জেরে অধ্যক্ষের কাছে নিরাপত্তা চেয়ে বসলেন পার্থ। শুভেন্দুর বিরুদ্ধে জমা পড়ল স্বাধীকার ভঙ্গের নোটিস।
শুক্রবার বিধানসভায় পঞ্চায়েত দফতরের বাজেট ডিমান্ড আলোচনায় বক্তব্য রাখছিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। কেন্দ্রীয় প্রকল্পের নাম বদলকে কেন্দ্র করে ওঠা বিতর্ককে হাতিয়ার করে শুভেন্দু বলেন, আপনারা বাইরে একরকম বলেন, ভিতরে আরেক রকম। এর পরেই কৌশলে টেনে আনেন দল-বদল বিতর্ক।
আরও পড়ুন: অনুব্রত মণ্ডলের থাকা-খাওয়ার জন্য এলাহী বন্দোবস্ত ED-র! AC রুমের সঙ্গে অ্যাটাচড বাথ, ভাবা যায়...
বিরোধী বেঞ্চে বসে থাকা বিশ্বজিৎ দাস ও কৃষ্ণ কল্যাণীর দিকে দেখিয়ে শুভেন্দু বলেন, 'বলুন না এরা কোন দলে? বলতে পারবেন এরা বিজেপিতে নেই? কিন্তু, বিধানসভার বাইরে এরা তৃণমূলে।' শুভেন্দুর এই 'দল বদলু' খোঁচা হজম করতে না পেরে হৈ হৈ জুড়ে দেন কৃষ্ণ কল্যাণী ও বিশ্বজিৎরা। ঠিক সেই সময় শুভেন্দুর এই আচমকা হামলায় কিছুটা খেই হরিয়ে ফেলা তৃণমূলকে পাল্টা আক্রমণে ফেরান সেচমন্ত্রী পার্থ ভৌমিক। বিরোধী দলনেতার ঠিক মুখোমুখি ট্রেজারি বেঞ্চ থেকে, শুভেন্দুকে উদ্দেশ্য করে সেচমন্ত্রী পার্থ ভৌমিক বলেন, 'আপনিই বলুন না শিশিরবাবু কোন দলে?'
পার্থর এই আক্রমণে কার্যত তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু। স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে পার্থকে নিশানা করে শুভেন্দু বলেন, 'এক মাসের মধ্যে জেলে ভরে দেব।' আর, শুভেন্দুর মুখে এ কথা শুনেই রে রে করে ওঠেন পার্থ সহ শাসক দলের মন্ত্রী ও বিধায়করা।
আরও পড়ুন: ডিএ-ধর্মঘট নিয়ে একের পর এক কড়া মন্তব্য, সরকারি কর্মচারীদের কী বললেন অভিষেক?
পার্থ ভৌমিক সহ শাসক দলের বিধায়কদের সগে সহমত হয়ে বিরোধী দলনেতাকে সতর্ক করে স্পিকারও বলেন, 'আমিও শুনেছি। এভাবে হুমকি দিয়ে আপনি ঠিক কাজ করেননি।'
পার্থকে ঘিরে উত্তেজনা কমলেও, মোদিকে নিয়ে কটাক্ষ করার জেরে ফের উত্তপ্ত হয়ে ওঠে বিধানসভা। প্রায় ১০ মিনিট ধরে চলে মোদি মোদি স্লোগান। শেষমেশ, পঞ্চায়েত মন্ত্রীর বক্তব্য শেষ হওয়ার আগেই অধিবেশন কক্ষ ছেড়ে চলে যান শুভেন্দু।
সভায় হুমকির সুরে কথা বললেও, অধিবেশন কক্ষের বাইরে তার পুনরাবৃত্তি করতে চাননি শুভেন্দু। কেবল ঠারে ঠোরে বুঝিয়ে দেন, সেচমন্ত্রী তাঁর প্রতিপক্ষ নন। একমাত্র মুখ্যমন্ত্রীকেই তিনি তাঁর রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বলে মনে করেন। ফলে, নতুন করে বিতর্ক তৈরির কোন ইচ্ছে তার নেই। সংবাদ মাধ্যমকে শুভেন্দু বলেন, 'যা বলার হাউসে বলেছি। এ নিয়ে আর কোনও মন্তব্য করব না।'
শাসক দলের পক্ষে তাপস রায় বলেন, 'আসলে শুভেন্দু চাপের মধ্যে আছে। সাগরদিঘিতে তৃণমূলকে হারাতে গিয়ে বিজেপির ভোট বাম কংগ্রেসে গিয়েছে। তা নিয়ে দলের অভ্যন্তরে সমালোচনার মুখে পড়েছে শুভেন্দু। অমিত শাহের কাছে ওকে জবাব দিতে হবে। সেই চাপ থেকেই এসব হুমকি, ধমকি দিতে শুরু করেছেন।'
যদিও, রাজনৈতিক মহলের মতে, বিশ্বজিৎ, কৃষ্ণ কল্যাণীকে টেনে কটাক্ষের জবাবে বাবা শিশির অধিকারীর রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে এভাবে অস্বস্তিকর প্রশ্নের মুখে পড়তে হবে, এমনটা আঁচ করতে পারেননি শুভেন্দু। সে কারণেই কিছুটা বেলাগাম হয়ে পড়েন বিরোধী দলনেতা।
এ দিকে, শুভেন্দু বিতর্ক এড়াতে চাইলেও, ছাড়তে চাইছে না তৃণমূল। অধিবেশনের শেষে মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক ও ব্রাত্য বসু স্পিকারের সঙ্গে দেখা করে শুভেন্দুর বিরুদ্ধে স্বাধিকার ভঙ্গের নোটিস দেওয়ার আর্জি জানিয়ে চিঠি দিয়েছেন। সে কথা কবুল করেছেন স্পিকার।
পর্যবেক্ষকদের মতে, পঞ্চায়েত বাজেটকে ঘিরে আলোচনার মধ্যে দল বদলু প্রসঙ্গ টেনে আনতে গিয়ে নিজেই বিপাকে পড়লেন শুভেন্দু।
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।
Tags: Assembly, BJP, Suvendu Adhikari, TMC